• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু, আজ মহাষষ্ঠী

প্রকাশ:  ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৩৬ | আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে, ঠাকুরঘরে উদ্ভাসিত মৃন্ময়ী রূপ প্রতিমাবরণ চলছে। শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব, শারদীয় দুর্গোৎসবের। আজ মহাষষ্ঠী।

তিথি অনুযায়ী শনিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হয় বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। তিথির কারণে একই দিন মহাষষ্ঠী পূজা হবে। দেবী দুর্গার আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তকুল।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীকরূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। দেবীপক্ষে ষষ্ঠীতে দুর্গাকে বোধন করে পূজা করেন রাম। দুর্গার বোধন ঘিরে পৌরাণিক কাহিনিও বিদ্যমান। বোধন শব্দটির অর্থ জাগ্রত করা। মর্ত্যে দুর্গার আবাহনের জন্য বোধনের রীতি প্রচলিত। ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন। এদিন সকালেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর দশভূজার সামনে প্রার্থনা করা হয়, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পূজা পর্বে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। এর পর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এ স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পূজা করা হয়। এর পর হয় দুর্গার বোধন। তারপর অধিবাস, আমন্ত্রণের পর্ব। বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। অশুভ শক্তি দূর করার জন্য ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এভাবেই শেষ হয় মহাষষ্ঠীর আচার।

হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরতকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের হরি প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড়-বৃষ্টি হবে এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কৈলাশে স্বর্গে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। এর ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।

এদিকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসব। রামকৃষ্ণ মিশনের নির্ঘণ্টে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠীপূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সোমবার মহাষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধি পূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং সমাপন বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। পরদিন বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা-আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এ উৎসবের।

সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এখন সারা দেশে উৎসবের আমেজ। দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে পূজামণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজা অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনাসভাসহ নানা আয়োজন থাকছে মণ্ডপগুলোতে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবার রাজধানীসহ সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে। রাজধানীতে পূজা হচ্ছে ২৪১টি মণ্ডপে। গত বছরের চেয়ে এবার সারা দেশে ৫০টি এবং ঢাকায় ৬টি পূজামন্ডপ বেড়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি আয়োজক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক দল মন্ডপের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশের পূজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল গঠনের পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়েও মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দির ও মণ্ডপ, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারে মহাসমারোহে ও ব্যাপক আয়োজনে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের চেয়ে ৬টি বেশি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শনিবার (আজ) থেকে শুরু হবে, যা আগামী ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন অঘটন না ঘটে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি সক্রিয়।

এদিকে দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার দেওয়া বাণীতে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেওয়া শুভেচ্ছা বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধন আরও সুসংহত হোক। তিনি বলেন, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

মহাষষ্ঠী,দুর্গোৎসব,পূজা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close