• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ডিএসসিসির ‘ফুড ভ্যান’ প্রকল্প

ঐতিহ্য হারানোর পথে বাহাদুর শাহ পার্ক

প্রকাশ:  ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:২৯ | আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৩১
তারেক হাসান, জবি প্রতিনিধি

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একমাত্র পার্ক বাহাদুর শাহ পার্ক। সম্প্রতি পার্কটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নেওয়া ‘ফুড ভ্যান’ প্রকল্প নামের প্রকল্পের কারণে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের জন্য গত ৩ আগস্ট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দরে দরপত্র আহ্বান করে ডিএসসিসি। দরপত্র পাওয়া কর্তৃপক্ষ পার্কের ভেতরে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করলে ক্ষোভপ্রকাশ করে এলাকাবাসী ও ঢাকা মহানগর জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।

শনিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ক্যাফেটেরিয়া তৈরির কাজ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় বক্তরা বলেন, ‌আজ ক্যাফে হচ্ছে, কাল দোকান বসবে, পার্ক নোংরা হবে। আমরা ক্যাফে তৈরির কাজ বন্ধ করে দ্রুত এসব সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাই। যদি সরিয়ে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা এটা উচ্ছেদ করে দিবো। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক হল আমাদের অক্সিজেন বা ফুসফুস।

এই বাহাদুর শাহ পার্কের সাথে জড়িয়ে আছে স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস। এটার সাথে জড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর এর স্মৃতি। যার জন্য এখানে আর কোন প্রকারের স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। আগামী প্রজন্মের জন্য যারা রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর শাহ পার্কের শহীদ মিনার। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, প্রয়োজনে আমরা আদালতে যাবো। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এ পার্ককে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে লোহা ও স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‌‘ফুড ভ্যান’টি। এরই মধ্যে দৃশ্যমান ফুড ভ্যানের কাঠামোর কাজের জন্য সেখানে দুটো ব্যানার টাঙিয়ে রেখেছেন শ্রমিকরা। যাতে লেখা রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অনুমোদিত ও ইজারা নেওয়া ‘ফুড ভ্যান’ নির্মাণের কাজ চলছে।

ইজারা যারা পেয়েছেন তারা বলছেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। কাজটি সম্পূর্ণ হলে লাইটিং হবে। পার্কটি জাঁকজমক হবে, পরিচ্ছন্ন থাকবে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে।

লক্ষ্মীবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা শাওন বিশ্বাস বলেন, আমার ডায়াবেটিস। ৪০ বছর হলো এ পার্কে হাঁটাহাঁটি করি। এ পার্ক ছাড়া আশপাশে আর কোনো ফাঁকা জায়গা নাই। আমরা কোনোভাবে এ পার্কে ক্যাফে বা দোকান তুলতে দেব না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ রাসেল সাবরিন বলেন, আমরা আমাদের সব পার্ক সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য ইজারার আওতায় নিয়ে আসছি যাতে পার্কগুলো ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বাহাদুর শাহ পার্ক ইজারা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পার্কের মাঝখানে একটি ফুট ব্যান্ড থাকবে। তারা খাবার বিক্রি করবে এবং পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে। এতে করে পার্কটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাবে।

জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে পার্কটি আধুনিকায়ন করে নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ঐতিহ্যবাহী এই পার্কে পথচারীদের জন্য হাঁটার পথ, গণশৌচাগার, বেঞ্চ, সবুজ উদ্যান, অ্যাম্ফিথিয়েটার গ্যালারি, পার্কিং নির্মাণ করা হয়। নাগরিকরা ২৪ ঘণ্টাই পার্কটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ জন্য ঝলমলে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। বৃষ্টির পানি অপসারণে পার্কের চারপাশে চার ফুট গভীর ড্রেন করা হয়। মেঝেতে বিছানো হয় নুড়িপাথর। ৮৫ দশমিক ৩ কাঠা আয়তনের এই পার্ক সংস্কারে ডিএসসিসির ব্যয় হয় ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

পুরান ঢাকায় উন্মুক্ত স্থান না থাকায় ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষ এই পার্কে সকাল-বিকেল হাঁটাহাঁটি করেন। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের বয়স ৫০ এর ওপরে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এ পার্কে এসে গ্রুপ স্টাডি ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

বাহাদুর শাহ পার্ক,ঐতিহ্য,ডিএসসিসি,ফুড ভ্যান,প্রকল্প
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close