• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

দক্ষিণবঙ্গ-চট্টগ্রামের দূরত্বও কমাবে শীতলক্ষ্যা সেতু

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০২২, ০০:০৬
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করা তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সোমবার (১০ অক্টোবর)। এদিন দুপুর ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা সেতুটি কেবল জেলা সদর ও বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবে না, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্বও কমিয়ে আনবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

স্থানীয়রা বলছেন, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্ত আসবে। আগে নৌযানে করে নদী পার হতে হতো। তাতে অর্থ ও সময় অপচয় হতো, ভোগান্তি তো ছিলোই। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এই জেলায় প্রচুর কলকারখানা থাকায় অর্থনীতিও চাঙা হবে। তবে সেতুটির দুই পাশের সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ হলে পুরোপুরি সুফল মিলবে।

চা দোকানি আবদুল মান্নান বলেন, এটি আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া। এই নদী পার হতে হতো নৌকায়, লাগতো দীর্ঘ সময়। সড়কপথে ঘুরে আসতে হতো প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা। এখন আর সেই সমস্যা থাকলো না৷ সহজেই পার হতে পারবো।

ফরাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ লুৎফর বলেন, আগে এখানে সেতু ছিলো না, নদী পার হতে হতো নৌকায়। দুর্ঘটনায় অনেকের জীবন গেছে। আমরা এই সেতু পেয়ে খুশি।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে নৌকায় নদী পার হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এজন্য দূরত্ব অনুযায়ী গুণতে হতো টাকাও। এছাড়া সড়কপথে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যার এই সেতু দিয়ে অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীরা যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে অথবা চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে চট্টগ্রামে যান। এখন শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে যানবাহনগুলো ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপর চাপ কমবে, তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

তারা আরো জানান, নারায়ণগঞ্জের মানুষ নদীর ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্ব নৌকায় পার হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এ জন্য দূরত্ব অনুযায়ী গুনতে হতো টাকাও। এছাড়া সড়ক পথে গেলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। এখন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যার এই সেতু দিয়ে অল্প সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন।

সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, ১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

তিনি বলেন, এতে দেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা হবে। কারণ, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যানবাহনের ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে। সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে বলেও জানান তিনি। সেতুটি পূর্বে বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জকে পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুরের সঙ্গে যুক্ত করবে। এখন মোটরচালিত নৌযানই নদীর দুই পাড়ের মানুষ ও অন্যান্য এলাকার জনসাধারণের জন্য পারাপারের প্রধান মাধ্যম।

প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেতু নির্মাণে ৬০৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬৩.৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫.২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।

ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে- পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার। এছাড়া, ছয় লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ রোডও নির্মাণ করা হচ্ছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

নারায়ণগঞ্জ,শীতলক্ষ্যা সেতু,দক্ষিণবঙ্গ,চট্টগ্রাম,দূরত্বও
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close