• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে

প্রকাশ:  ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৪৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যখনই বাংলাদেশ ভালো দিকে যায় তখন নানা ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়। আমার বাবা-মা-ভাই, ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে। কাজেই আমরা যে ক্ষমতায় আসতে পারবো এটা কেউ ভাবতে পারেনি। চতুর্থবারের মতো আমরা ক্ষমতায় আছি। আছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগে মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তুলেছি। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং স্যাংশন যদি না হতো বাংলাদেশ-আমরা এতো দিনে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। তারপরও জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ২০২০ সালে আমরা উদযাপন করেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। এই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি বলেন, এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর করেই আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশ হবে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ, সেই স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকার; সব কিছু স্মার্ট হবে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করবো। সেই সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ বাহিনী আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানের মাধ্যমে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হিসেবে যাতে গড়ে ওঠে সে ব্যবস্থাও আমরা নেবো।

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে যতোটা দরকার তার সব রকম ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি করি; ঝুঁকিভাতার ব্যবস্থা করি। রেশনপ্রাপ্তি; সবাই যাতে রেশন পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। প্রথমবার ৪০ ভাগ করেছিলাম, পরবর্তীতে তৃতীয়বার এসে সবার জন্য রেশনের ব্যবস্থা, এমনকি যারা এখন কাজে নেই- অবসরপ্রাপ্ত, তাদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা আমরা করে দেই। পুলিশের একটি কল্যাণ ফান্ড আমি করে দেই পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে ৫ কোটি টাকা প্রাথমিকভাবে সেখানে সিড মানি দেই। যাতে এই কল্যাণ ফান্ড থেকে যে কোনো পুলিশ সহায়তা পেতে পারে। আমরা ২৫টি থানা, ৮৬টি তদন্ত কেন্দ্র, ৫৮টি হাইওয়ে ফাঁড়ি, ১৫০টি পুলিশ ক্যাম্প ও ১০টি ফাঁড়ি স্থাপন করি। ৮০৩ জন এসআই, ৫০৭ জন সার্জেন্ট এবং ১৪ হাজার ৬৮০ জন কনস্টেবল নিয়োগ করি। ২০০০ সালে ‘পুলিশ স্টাফ কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। এমনকি কমিউনিটি পুলিশ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনি। পুলিশের উদ্যোগে অনেকে যারা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে ছিলো তারা স্যারেন্ডার করে।

সরকার প্রধান বলেন, ২০০৮’র নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯-এ সরকার গঠন করি। এই ৩ মেয়াদে বাংলাদেশ আমরা দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি-পুলিশের আধুনিকায়নে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশ পুলিশে নতুন পদ সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা দূর করে দেই। গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এর মতো বিশেষায়িত ইউনিট আমরা গঠন করি। বিশেষ ইউনিটগুলো দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আরো আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন প্রশিক্ষণ যাতে হয় তার ব্যবস্থাও আমরা করবো।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে পুলিশের দু’টি এবং র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করে কক্সবাজারে মোতায়েন করা দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য জেলাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৩টি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুলিশ স্টাফ কলেজকে আমরা একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করেছি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রতিটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে এ ধরনের ল্যাব আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ডিএমপির সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ইতোমধ্যেই কমিউনিটি ব্যাংক আমরা পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশদের চিকিৎসা জন্য এখানে (রাজারবাগ) হাসপাতাল করে দিয়েছি। প্রত্যেক বিভাগে যাতে পুলিশের আলাদা হাসপাতাল হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে। পুলিশের গতিশীলতা ত্রিমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের জন্য ইতোমধ্যে রাশিয়া থেকে দু’টি হেলিকপ্টার ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের জন্য বছরে ১ মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ বিশেষ ভাতা হিসেবে প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলতেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ’। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের পুলিশ এখন ‘জনগণের পুলিশ’ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আগে যেমন পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতো, এখন জানে পুলিশ সেবা দেয়, মানুষের পাশে দাঁড়ায়। মানুষের আস্থা অর্জন করা, জনগণের আস্থা অর্জন করা যে কোনো বাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা জনগণের সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

প্রধানমন্ত্রী,অনুষ্ঠান,পুলিশ সপ্তাহ,উদ্বোধন,মর্যাদা,ক্ষমতা,বাংলাদেশ,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close