• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

অবসরের পর যেসব সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ

প্রকাশ:  ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:১৭
নিউজ ডেস্ক

টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তাকে চেয়ারে বসিয়ে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবেন আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, অবসরে গেলে তিনি নিকুঞ্জে নিজ বাড়িতে উঠবেন। গত ১৩ মার্চ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানিয়ে অবসরে আড্ডা দিতে সাংবাদিকদের নিকুঞ্জের বাড়িতে অগ্রিম আমন্ত্রণও জানান। তিনি মাঝে মধ্যে মিঠামইনে পৈত্রিক ভিটায় গিয়েও সময় কাটাবেন। পাশাপাশি অসবরে তিনি আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লেখা শেষ করবেন বলেও জানিয়েছেন।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার রাজনীতি, আমার জীবননীতি’ বই প্রকাশিত হয়েছে। এতে তার জন্ম ও রাজনীতির শুরু থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সন্নিবেশিত আছে। অবসর সময় তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময়কালের ঘটনা নিয়ে আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড লিখবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রবীন রাজনীতিক আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে এমএলএ হওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকামুখী হলেও রাজধানীতে তার স্থায়ী কোনো নিবাস ছিল না। তিনি কখনো ভাড়া বাসা, কখনো এমপি হোস্টেল, সংসদ সদস্য ভবন কিংবা লালমাটিয়ায় মেয়ের বাড়িতে বসবাস করেছেন। স্পিকার হিসেবে থেকেছেন সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসায়। সর্বশেষ ১০ বছর কাটালেন বঙ্গভবনে। বঙ্গভবনে থাকাকালে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নিকুঞ্জে প্রাপ্ত রাজউকের প্লটে বাড়ি নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বাড়িটির কাজ শেষ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি হয়েও অনেকটা নিজেই তিনি নির্মাণকাজ তদারকি করেছেন। বঙ্গভবন থেকে অনেকবার তিনি সরাসরি নিকুঞ্জে গিয়ে কাজের দেখভাল করেছেন। অবসরে সেখানে বসবাস করবেন এমন চিন্তা থেকে সাধ্যের মধ্যে অনেকটা যত্ন করে কাজটি করেছেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বঙ্গভবন ও আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিকুঞ্জের বাড়িতে আবদুল হামিদ ছাড়াও তার দুই ছেলে রাসেল আহমেদ (তুহিন) ও রিয়াদ আহমেদ (তুষার) থাকবেন। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে জন্মস্থান মিঠামইনে গিয়েও থাকবেন। তবে আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা খানম বেশির ভাগ সময় ক্যান্টনমেন্টে বড় ছেলে ও সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের সঙ্গে থাকবেন বলে জানা গেছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ রাশিদা খানমের নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজন হয়। বড় ছেলের বাসায় থাকলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) যাতায়াত সুবিধা হবে। অবশ্য তিনি নিকুঞ্জের বাসায় যাওয়া আসা করবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

অবসরে যাওয়ার পর যেসব সুবিধা ভোগ করবেন আবদুল হামিদ

একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি আইনের অধীনে বেশ কিছু সুবিধা পান। ‘রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইন’ অনুযায়ী অবসরে গিয়ে অবসরভাতা, চিকিৎসা সুবিধাসহ অন্যান্য কিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ।

এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে কমপক্ষে ছয় মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করলে অথবা মেয়াদ শেষ হলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে অবসরভাতা পাবেন।

‘দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট, ১৯৭৫’-এর সর্বশেষ সংশোধন হয় ২০১৬ সালে। ওই আইন অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে অবসরের পর আবদুল হামিদ মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসরভাতা পাবেন।

আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ থেকে অবসরে গিয়ে অবসরভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসরভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসরভাতার মধ্যে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি অবসরভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তার বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপত্নীক স্বামী প্রাপ্য অবসরভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন।

অবসরভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য তাকে প্রাধিকার অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিক গ্রহণের ইচ্ছার কথা সরকারকে জানাতে হবে। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসরভাতার তত গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকার সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আংশিক বছরকে পুরো বছর হিসেবে গণনা করা হবে।

কোনো ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করলে অথবা অবসরভাতা গ্রহণ না করে মারা গেলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।

অন্যান্য যেসব সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ

অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও কিছু সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ। আইনানুযায়ী তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয় পাবেন, যার মোট বাৎসরিক পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রী যেমন চিকিৎসা সুবিধা পান, অবসরে যাওয়া রাষ্ট্রপতিও তা পাবেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত এর বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি একটি কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাবেন। দেশের ভেতর ভ্রমণের সময় বিনাভাড়ায় সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে থাকতে পারবেন। এসব সুবিধা তার স্ত্রীও পাবেন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া আবদুল হামিদ ২০১৩ সালে বঙ্গভবনের বাসিন্দা হন। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বঙ্গভবনে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় তিনি নিজেকে ‘খাঁচায় বন্দি পাখি’ বলে অভিহিত করেছেন।

আবদুল হামিদ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close