• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধ

বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান

প্রকাশ:  ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০১ | আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে এই দেশটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের। জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য জাপানের অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর জাপানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।

‘জাপান আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে’ শিরোনামে নিজের লেখা একটি নিবন্ধে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তার চার দিনের টোকিওতে সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিন সে দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য জাপান টাইমস’-এ এই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে দ্রুত স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জাপান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে, যা আমরা কখনো ভুলিনি বা ভুলব না। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল—জাপানি স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা জমা করে সেই টাকা ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লোকদের জন্য সাহায্য করেছিল।

তিনি বলেন, তারপর থেকে জাপান আমাদের দীর্ঘকালে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছে। জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ, ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার এবং আমাদের জনগণের কাছে।

জাপানের প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরকে স্মরণ করে ও জাপানের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্পর্শকাতরতার উত্তরাধিকার লালন করার পাশাপাশি দেশটির বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাপানের অমূল্য অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে বারবার এখানে আসি। এগুলো আমাকে এই মহান দেশের ভাবমূর্তির মতো বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য আমার শরীর ও আত্মাকে কাজে লাগাতে এবং আত্মনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। এখন আমি অনুভব করি যে, আমাদের দুদেশের সম্পর্ক একটি ঈর্ষণীয় স্তরে জোরদার করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের ব্যাপক অংশীদারত্ব থেকে একটি কৌশলগত অংশীদারত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।

জাপানি বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সাম্প্রতিক ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি সহজ শর্তে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। আমাদের দ্বিমুখী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

এ ছাড়া তিনি বলেন, ঢাকায় ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ট্রেনলাইন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং আড়াইহাজারে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ জাপান বাংলাদেশের কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশে এমআরটি লাইনের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় কাজ করার সময় কিছু জাপানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা নিবন্ধে লিখেছেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্বগুলোর একটি। আমি অনেক দুঃখের সঙ্গে তাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছি এবং আবারও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুঃখজনক ঘটনা সত্ত্বেও আমাদের জাপানি বন্ধুরা প্রকল্প থেকে সরে আসেননি বরং এর পরিবর্তে নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিবন্ধে লিখেছেন, গণহত্যার মুখে রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এই লোকদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এখন তারা বাংলাদেশসহ সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান এই অঞ্চলে তার ফলপ্রসু প্রভাবের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে পারে এবং এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান উভয়ই শান্তিপ্রিয় দেশ, বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সহযোগিতা এবং বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এবং সমৃদ্ধ হবে।

বাংলাদেশ ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ও বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে টোকিওতে আগমন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মহামান্য সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আমাকে আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, আবে ছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধু।

জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা : জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করেছেন। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিকেল ১৫টা ৫৫ মিনিটে (জাপান সময়) ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে আগামী ১ মে বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ফ্লাইটটি ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে (যুক্তরাষ্ট্র সময়) অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ রাজ্যের রাজা ও রানি হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন। এর আগে ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাপান গমন করেন।

প্রধানমন্ত্রী,শেখ হাসিনা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close