• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কেন ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা?

প্রকাশ:  ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৩:০৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দাবি আদায় না হলে মঙ্গলবারের (২৫ জুলাই) পর থেকে সারাদেশে অ্যাম্বুলেন্স-সেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা।

অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের অভিযোগ, অ্যাম্বুলেন্সকে প্রাইভেট কার হিসেবে বিবেচনা করে বিআরটিএ কর নির্ধারণ করে থাকে। এ কারণে সৃষ্ট আর্থিক ভোগান্তির ন্যায্য সমাধানের দাবি তাদের।

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, ট্রাফিকের হয়রানির শিকার হয়ে রাস্তায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যদিও বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের এ অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ৩০ জুলাই একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও উৎকণ্ঠা থামছে না।

দাবি আদায়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্স-সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকির সমালোচনা করছেন চিকিৎসক, সেবাগ্রহীতা ও মানবাধিকারকর্মীরা। রোগী ও স্বজনদের জিম্মি না করে তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গঠনমূলক সংলাপের আহ্বান জানান। ধর্মঘটের হুমকিতে বিভিন্ন মহলে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে সমিতি এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা অপরিহার্য।

অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের অন্যায্য আয়কর নীতির প্রতিবাদ

গত ১০ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সেবা খাতে বিআরটিএ কর্তৃক অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রাইভেট কারের মতো আয়কর (এটিআই) নেওয়ার প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি।

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বাদল মাতব্বর জানান, তারা সেবা খাতের জন্য অ্যাম্বুলেন্স হিসেবেই অ্যাম্বুলেন্স আমদানি করেন। বিআরটিএতে নিবন্ধনও (রেজিস্ট্রেশন) হয় অ্যাম্বুলেন্স হিসেবেই। অথচ আয়কর দেওয়ার সময় দিতে হয় প্রাইভেট কার হিসেবে।

হাসপাতাল এবং ট্রাস্টি বোর্ডের অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে আয়কর নেওয়া হয় মাত্র ৫২ টাকা। অথচ বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আগে নেওয়া হতো ৩০ হাজার টাকা, এ বছর থেকে তা ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হবে।

অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি বিষয়টির সমাধান চাইলেও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, যে গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করা হয়, সেটির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ৫২ টাকাই আয়কর নেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের ওপর অন্যায্য বোঝা এড়াতে দ্রুত একটি ন্যায্য সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান বাদল।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, “আমদানি করা অ্যাম্বুলেন্সের নথিপত্র অনুযায়ী বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। আমদানিকারকের নথিপত্রে যদি অ্যাম্বুলেন্স উল্লেখ করা থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। প্রাইভেট রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার কোনো বিষয় দেখছি না।”

একপাক্ষিক অভিযোগ

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ আমাদের হয়রানি করে। কোনো রোগীকে হাসপাতালে নামানোর পরপরই ভুল জায়গায় পার্কিংয়ের মামলা নিয়ে হাজির হয়ে যায়। হাসপাতালগুলো পার্কিংয়ের জায়গা দেয় না। তাহলে আমরা কোথায় রোগী নামাবো?”

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, “আমাকে এ ধরনের কিছু জানানো হয়নি। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স হয়রানি করে— এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। ফলে এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। যদি কোনো অভিযোগ পাই, সেটা খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, “আমরা চেষ্টা করি অ্যাম্বুলেন্স যাতে জ্যামে আটকে না পড়ে, সেই ব্যবস্থা করার। কিন্তু এরা অধিকাংশ সময় যখন গাড়িতে রোগী থাকে না, তখনও সেই সেবা চান। ফাঁকা অ্য্যাম্বুলেন্স কেন উল্টোপথে যাচ্ছে- জানতে চাইলে তারা জানিয়ে দেন রোগী নিতে যাচ্ছে। কোথায় সেই গন্তব্য প্রশ্ন করলে তানা উত্তর দিতে পারেন না। এছাড়া, তাদের চালকরা ভীষণ বাজেভাবে গাড়ি চালান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের সমালোচনাও করা দরকার।”

হুমকি দিয়ে সেবা বন্ধ করা যাবে?

গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিপাকে পড়েছিল বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চালকদের নৈরাজ্য থামাতে গিয়ে জিম্মি হয়ে পড়েন বিভাগের সবচেয়ে বড় এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা। অ্যাম্বুলেন্স-চালকরা একজোট হয়ে হাসপাতালের পরিবহন সেবাই বন্ধ করে দেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে উল্টো রোগীরা সেই অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের পক্ষ নেন।

সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বা কর্মকাণ্ড যারা চালায়, তারা চাইলেই সেটা বন্ধের হুমকি দিতে পারে কি-না জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “ধর্মঘটের বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে। যদি কোনো সংগঠিত সংগঠন ধর্মঘটের ডাক দেয়, তবে তাকে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমত দাবিগুলো কী আর কার কাছে- সেটা স্পষ্ট করে বলবে। সেই দাবি পূরণের জন্য সময় বেঁধে দেবে। সেই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে, তখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। আমি মনে করি, যাদের কাছে দাবির জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাদের উচিত বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।”

যে কারণে নীতিমালা প্রয়োজন

২০২০ সালেই সেতু ও ফেরিতে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে আর টোল দিতে হবে না বলে ঘোষণা আসে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ওই বছর ১ মার্চ থেকে টোল ফ্রিয়ের আদেশ কার্যকর হওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এখনও তা চালু হয়নি। পাশাপাশি রোগীদের স্বার্থে অ্যাম্বুলেন্স খালি অবস্থায় থাকলেও এ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

পৃথক পৃথক নির্দেশ না দিয়ে যদি একটি সার্বিক নির্দেশনা পাওয়া যায়, সেটা কার্যকর হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সংগঠনের ছয় দফা দাবিগুলোর অন্যতম হলো- অ্যাম্বুলেন্সের জাতীয় নীতিমালা তৈরি।

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমরা কীভাবে চলবো, কত টাকা নেবো, অ্যাম্বুলেন্সে কী কী থাকতে হবে- এসব নিয়ে সমন্বিতভাবে একটি নীতিমালা থাকলে অনেক ভুল বুঝাবুঝি দূর হবে।”

কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনদের জিম্মি করার মতো অনেক অভিযোগ আছে এবং সিন্ডিকেট করে হাসপাতালকেও জিম্মি করার ঘটনা দেখা গেছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, “নীতিমালা তৈরি করা উচিত। একটা কমিটি হোক- যেখানে আমরা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সুশীল সমাজ, এনবিআর, সব প্রতিনিধিই থাকুক।”

ধর্মঘট,বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close