• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

জঙ্গিবাদ ও ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী শক্তিকে প্রতিরোধের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ:  ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৩:৪৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
বিজয়ী হাফেজগণের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: টিভি থেকে নেওয়া)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে ইসলাম চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে।

এ সময় ইসলামের মর্মবাণীকে ধারণ করে সমাজ থেকে অন্ধকার, অশিক্ষা, বিভেদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী শক্তিকে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।

রোববার (১৩ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৩’-এর জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজগণের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি, তোমরা পবিত্র কোরআন এর মর্মবাণী ধারণ করে নিজেকে আলোকিত করবে। সমাজকে আলোকিত করবে। সমাজ থেকে কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে অবদান রাখবে। আদর্শ সমাজ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে তোমরা এগিয়ে আসবে।’

জাতীয়ভাবে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য এর উদ্যোক্তা-বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতি বছরই বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো ফল অর্জন করছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তারা একাধিক গ্রুপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় মর্যাদা ও গৌরবের বিষয়।’

এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

জাতীয়ভাবে পবিত্র কুরআনের হিফজুল প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান করতে পারা যেকোনো মুসলিম সমাজের জন্যই গৌরবের বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহাগ্রন্থ আল কুরআন সাধারণ কোনো গ্রন্থ নয়, এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত আসমানী কিতাব। আল্লাহতায়ালা ওহীর মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন। আল কুরআন আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মুক্তির পথ দেখায়।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন খাঁটি মুসলমান। তিনি যেমন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি তেমনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি। বঙ্গবন্ধু একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধকে বিবেচনায় নিয়ে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন।’

‘১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন এবং এর মাধ্যমে দ্বীনি খেদমতের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পর্যায়ে আজ অবধি নিয়মিত ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়ে আসছে। তিনি তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী কওমী মাদ্রাসা জন্যও জমি প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন; ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হজযাত্রীদের জন্য ক্রয়কৃত জাহাজ ‘হিজবুল বাহার’কে জিয়া প্রমোদতরীতে পরিণত করে।’

মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে বঙ্গবন্ধু ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং সাহায্য প্রেরণ করেন। তার কূটনৈতিক দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ এবং ১৭০ ফুট উঁচু মিনার নির্মাণ করি। মসজিদটিতে ৫ হাজার ৬০০ জন নারী মুসল্লীর জন্য মহিলা নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ এবং অযুখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মসজিদটির অসমাপ্ত কাজ শিগগিরই সমাপ্ত করা হবে।’

‘মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছি। কাওমী মাদ্রাসার ডিগ্রির সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেছি। যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ ও জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের জন্য চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ আইন ২০২৩ প্রণয়ন করেছি।’

আওয়ামী লীগ সরকার ই-হজ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেদ্দা হজ্জ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া নেওয়ায় হাজীদের দুর্ভোগ বহুলাংশে লাঘব হয়েছে। আশকোনা হজক্যাম্প আধুনিকায়ন করেছি। হজযাত্রীদের জন্য বিমান, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিসও আধুনিকায়ন করা হয়েছে।’

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিস, মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ, মুসলিম পর্যটক ও মেহমানদের বিশ্রামাগার, ইসলামী লাইব্রেরি, হজ প্রশিক্ষণ ও ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে।’

‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে। চলতি মেয়াদে এ প্রকল্পে ১ হাজার ৫০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৬ হাজার ৬৬০ জন আলেম-ওলামার কর্মসংস্থান হয়েছে। ৯৬ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী মসজিদভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন।’

ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দুস্থ এবং আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টের সদস্যভুক্ত ইমামদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। দেশের বিত্তবান মুসলিমগণ এ ট্রাস্টে অনুদান প্রদান করতে পারেন।’

এ সময় তিনি আরও জানান, দেশব্যাপী প্রতি উপজেলায় ২টি করে ১ হাজার ১০টি দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২০০ (দুইশত) কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে ৩ হাজার ৩০ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। সারা দেশে ইসলামিক মিশনের ৫০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব দুঃখী মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ইমাম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইমামদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।

এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যাতে উন্নত জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা বাবা হারিয়ে যখন এদেশের মাটিতে ফিরে আসি সেই চেনামুখগুলো পাইনি যারা আমাকে এয়ারপোর্টে বিদায় দিয়েছিলেন। তাদের পেয়েছে বনানানীতে সারি সারি লাশ। তবে পেয়েছি দেশের মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস। যা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। এজন্য আমি কোনো কিছুতেই ভয় পাইনি।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘একটা মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। আমাদের হিসাবে আর মাত্র ১১ হাজার ঘর বাকি আছে। এরপর আর কেউ গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই একমাত্র লক্ষ্য সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

মুষ্টিমেয় কিছু লোক এই ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই। জঙ্গিবাদ করাই এদের ধর্ম।’ সন্তানদের আলোকিত মানুষ করতে তাদের দিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,ইসলাম
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close