• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এইচএসসি পরীক্ষা : অদম্য ফুলতি রানীর স্বপ্নযাত্রা

প্রকাশ:  ২১ আগস্ট ২০২৩, ১৩:১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

কুড়িগ্রামে অভাব অনটনের সাথে যুদ্ধ করে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ফুলতি রানী। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে না পারা এই ৩২ ইঞ্চি উচ্চতার ফুলতি রানীর (২০) বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের শোভনদহ গ্রামে। সে ওই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মহেশ চন্দ্র এবং পারুল বালা দম্পত্তির মেয়ে। কুড়িগ্রামের ভোগডাঙা মডেল কলেজের ছাত্রী সে।

এই বছর সদ্য অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কেন্দ্রে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলতিরানীর অভাবের সংসার। ফুলতি রানীর বাবাও শ্রবণ প্রতিবন্ধি। সংসারে উপার্জন করার মতো কেউ নেই।

ছোট ভাই পড়ে দশম শ্রেণিতে। মা অন্যের বাড়িতে ঝি'য়ের কাজ করে সংসার চালায়। একদিকে অভাব অন্যদিকে লেখাপড়া করতে গিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে সমাজের নানান উপহাস এবং তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয় তাকে।

তার পা দুটো একেবারে ছোট আকৃতির, হাত দুটোও ছোট।

এক পা তো বাঁকা হয়ে গেছে। কোন রকম একপায়ে ভর করে চলতে হয় তাকে। শারীরিক উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া পথ চলতে না পারলেও পড়াশোনায় তার প্রচুর আগ্রহ। এমন আগ্রহের কারণে ফুলতীরানীকে পড়াশোনা করাতে পিছপা হয়নি মা পারুল বালা।

ফুলতিরানী ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ ২.৭১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই বছর চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা করছে ফুলতিরানী। তার ইচ্ছে সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। অর্থনৈতিক সহযোগীতা পেলে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়তে চায় ফুলতিরানী। তার ইচ্ছা শিক্ষক হওয়ার।

ফুলতিরানী মা পারুল বালা বলেন, অনেক মানুষ বলে প্রতিবন্ধি মেয়েকে কষ্ট করে লেখাপড়া করে কি লাভ। চাকরি করতে পারবে না, বিয়ে দিতেও পারবে না। আমার তখন কান্না আসে। মেয়ে শারিরীক প্রতিবন্ধি তাই বলে তো ফেলে দিতে পারি না। মেয়ের যতদুর ইচ্ছে পড়াশোনা করার ইচ্ছা। আমার কষ্ট হলেও তাকে পড়াতে চাই।

ফুলতি রানী বলেন, আমি প্রতিবন্ধি হলেও এটা আমার কখনও মনে হয় না। তবে সংসারের অভাব অনটন আমার ইচ্ছেকে ভীষণ আহত করে। বাবা মা ভাইসহ এই বয়সে একটা ভাঙা ঘরে থাকি। বৃষ্টি বাদলের দিনে আমাদের খুব কষ্ট হয়। একটা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারলে খুব উপকার হতো। আমি পড়াশোনা শেষ করে একজন শিক্ষক হতে চাই।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মো: নাসির উদ্দীন বলেন, আমার কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে ফুলতিরানী পরিক্ষা দিচ্ছে। তার জন্য দোয়া করি সে যেন এইচ এস সি পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে।

এইচএসসি পরীক্ষা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close