• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, জানেন না স্বাক্ষরকারীরা

প্রকাশ:  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার ধামরাইয়ে ৭২ স্বাস্থ্যকর্মীর স্বাক্ষর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন নাজমুন নাহার নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করছেন বেশিরভাগ স্বাক্ষরকারীরা। গত ২ সেপ্টেম্বর ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর-ই রিফফাত আরার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়।

মূলত কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যক্তিগত বিরোধ থেকেই এই অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূর-ই রিফফাত আরার। যদিও অভিযোগকারীরা বলছেন, সব অভিযোগ সত্য। তদন্তের সাপেক্ষে সব পাওয়া যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন উপসচিব ধামরাইয়ে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেন। সেখানে স্বাস্থ্য সহকারী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার অনুপস্থিত থাকায় তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এরপর ২২ জুলাই মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হলে নাজমুন নাহার এই সতর্ক করার বিষয়টিকে ‘অসদাচারণ’ হিসেবে উল্লেখ করে সভায় উপস্থিত ৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে নালিশ দেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় অভিযোগ দিতে সবার কাছ থেকে সাক্ষর নেওয়া হয়। তবে এর দুইদিন পর অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যস্ততায় বিষয়টি মীমাংসা হয়। ওই সময় তিনি সাক্ষর এবং ‘অসদাচরণের’ অভিযোগের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছেন বলেও জানান নাজমুন নাহার। তবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সবাই জানতে পারেন, পুরনো সেই অভিযোগের সাথে আরও অভিযোগ যুক্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন নাজমুন নাহার।

পাঁচটি অভিযোগ সংবলিত চিঠির বিষয়ে কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) ধামরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জানতাম না। যে ঘটনা সেটি সবার নয়। তার নিজের ব্যক্তিগত বিষয়। আমাদের বলার পর আমরা সেটি নিয়ে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম। যা পরে মিটমাট হয়েছিল। আমাদের না জানিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আমরা সবাই এক হয়ে সবাইকে জানাবো।’

৭২ জন সাক্ষরদাতার মধ্যে ৪৮ জন কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি)। এর মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তারা সবাই জানিয়েছেন, ‘অভিযোগ করা হবে এমনটি জানতেন না তারা। দুই মাস আগে যে সাক্ষর নেওয়া হয়েছিল এবং পরে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু আসলে ছেঁড়া হয়নি; সেটিই নতুন করে ব্যবহার করা হয়েছে।’

এদিকে অভিযোগের চিঠিটি ঘেঁটে দেখা যায়, পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে অসদাচরণ, অপমান করা, ভয় দেখানোর কথা বলা হয়েছে। বাকি দুটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযোগের সাথে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রমাণ যুক্ত করা হয়নি। এমনকি তথ্য প্রমাণ আছে কি না প্রশ্নে নাজমুন নাহার বলেছেন, ‘দুইটি বিষয়ই সবাই জানে।’

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। নার্স সুপারভাইজার জাহানারা আক্তার বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ এর সময়ের টাকা পেয়েছি। আর আচরণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যেটুকু প্রয়োজন তা করেন। কিন্তু খারাপ আচরণ পাইনি।’

কোভিড-১৯ এর সময়ে কাজের টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফার্মাসিস্ট আনোয়ার হোসেন, কর্মকর্তা ইসহাক মিয়া এবং আবাসিক চিকিৎসক ডা. তিতাসও। অসদাচরণের বিষয়েও তাদের বক্তব্য একইরকম। এমন কোনো অভিযোগ তাদের নেই বলে জানান তারা।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুন নাহার বলেন, আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে তারপর অভিযোগ জমা দিয়েছি। এখানে যারা চাকরি করেন সবাই শিক্ষিত। তারা মুর্খ নন। জেনে-বুঝে এটায় সাক্ষর করেছেন সবাই। বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অধীনে আমরা কেউ কাজ করতে আগ্রহী না।’

আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এই বছর দিচ্ছেন। আগে দেননি কেনো?’

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, গত সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ হয়েছে বলে জেনেছি। যেহেতু অভিযোগটি মহাপরিচালক বরাবর করা হয়েছে এটার এখতিয়ার তার, আমার না। সিদ্ধান্তের বিষয়টাও মহাপরিচালকের ব্যাপার।

গণস্বাস্থ্য
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close