• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নাম আছে ময়মনসিংহ-চট্টগ্রামেরও

বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর রাজধানী ‘ঢাকা’

প্রকাশ:  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৭ | আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। ১৫২টি দেশের ১২০০টির বেশি শহরে যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। এতে ঢাকা ছাড়াও আছে দুই শহর- ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের নাম।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তিন লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে, এমন সব শহরে গাড়িতে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কতো সময় লেগেছে, সেই তথ্য গুগল ম্যাপ থেকে সংগ্রহ করে গবেষণায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সপ্তাহের বিভিন্ন দিন এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে যাতায়াতের তথ্য নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গবেষণাটি করেছেন ফিনল্যান্ডের আলটো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনব্যবস্থার অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রত্যয় আমান আকবর, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ভিক্টর কুচিও, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিয়েল এস্টেট বিভাগের অধ্যাপক গিলেস ডুরানটন এবং যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক অ্যাডাম স্টোরিগার্ড।

গবেষণায় সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরের নাম এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির ১০০ শহরের মধ্যে ৮৬টিই যুক্তরাষ্ট্রের। প্রতিবেদনে সবচেয়ে দ্রুতগতির যে ২০টি শহরের নাম এসেছে, তার মধ্যে ১৯টি যুক্তরাষ্ট্রের। একটি কানাডার অন্টারিও অঙ্গরাজ্যের উইন্ডসর।

সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর—লাগোস ও ইকোরোদু। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর—ময়মনসিংহ (৯ম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে। ভারতের কলকাতা, মুম্বাইসহ আটটি শহর রয়েছে এই তালিকায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী দেশগুলোর শহরে গাড়িতে চলাচল দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ৫০ শতাংশের মতো দ্রুত হয়। এটা সম্ভব হয় ধনী দেশের শহরগুলোতে বড় বড় রাস্তা এবং অনেক ফাঁকা জায়গা থাকার কারণে। এর ফলে রাস্তায় বেশি গাড়ি নেমেও যানজট ছাড়া চলতে পারে।

রাস্তায় যানবাহনের চাপ কম থাকার পরেও সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকাও করা হয়েছে গবেষণায়। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। তালিকায় বাংলাদেশের আরো চারটি শহর রয়েছে—খুলনা (৪র্থ), ময়মনসিংহ (৫ম), চট্টগ্রাম (১৮তম) ও কুমিল্লা (১৯তম)।

গবেষণাটির ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতি ও দ্রুতগতির দুই শহরে চলাচলে কেমন সময় লাগে, তার একটি উদাহরণ দেওয়া হয়। বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯ মাইল দূরের গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে গাড়িতে যেতে সময় লাগে গড়ে ৫৫ মিনিট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহরে একই দূরত্ব যেতে সময় লাগে মাত্র ৯ মিনিট। দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকা আর চার লাখ মানুষের শহর ফ্লিন্টে যাতায়াতে সময়ের এই ব্যবধান শুধু গাড়ির চাপের কারণে নয়, এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। যার ফলে মধ্যরাতেও ঢাকায় ওই দূরত্বে চলাচল করতে আধা ঘণ্টা লাগে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির শহরে প্রয়োজনীয় সময়ের তিন গুণ বেশি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়াতে পারলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১০ শতাংশ বাড়ে।

গতি কেন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি, বাংলাদেশে কম

গবেষকেরা দেখেছেন, ৩৮টি ধনী দেশের জোট অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোতে গাড়ি ও মানুষের গতি বেশি। ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির গতি গড়ে ২৭ শতাংশ বেশি। আবার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের শহরে গতি কম। অন্যান্য দরিদ্র দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গতি কম গড়ে ২০ শতাংশ।

কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গবেষকেরা। তারা দেখেছেন, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর পার্থক্য অনেক বেশি। ওই সব ধনী দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোর জনসংখ্যা ২৪ শতাংশ কম, শহরগুলো প্রায় ৭২ শতাংশ বড়। যুক্তরাষ্ট্রের শহরে বড় বড় রাস্তা বেশি ৬৭ শতাংশ।

একইভাবে বাংলাদেশের শহরে (একই আয়তনের) অন্যান্য দেশের শহরের তুলনায় জনসংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি এবং বড় রাস্তা ৪২ শতাংশ কম। এ কারণে বাংলাদেশের শহরগুলো ধীরগতির।

শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়

গবেষকেরা বলছেন, তিনটি কারণে তাদের এই অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, সারা বিশ্বে নগর যাতায়াত নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই গবেষণার ফলাফল নীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নাগরিক গতির একটি নির্ধারক বড় রাস্তা। বড় রাস্তা ভিড় কমায় বিষয়টি এমন নয়, বরং বড় রাস্তা গতি বাড়ায়।

দ্বিতীয়ত, শহরে বহু মানুষ কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্রের হাঁটার দূরত্বে বসবাস করে না। তারা দ্রুতগতির এবং বিশ্বস্ত যাতায়াতব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে চায়। আধুনিক মহানগরের প্রয়োজনীয় শর্ত হচ্ছে দ্রুতগতির যান্ত্রিক যান। জটিল উৎপাদন নেটওয়ার্ক ও বিচিত্র ভোগের বর্তমান শহরে হেঁটে যাতায়াতের চিন্তা মধ্যযুগীয়।

তৃতীয়ত, পরিবার ও সরকার প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে নগর যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কিন্তু একটি শহর ভ্রমণ বা চলাফেরার জন্য কতটা সুন্দর, তা কমই জানা থাকে। নগর–পরিকল্পনাবিদেরা খুব কমই জানেন যে একই ধরনের শহরের তুলনায় তাদের শহরটি কতটা পিছিয়ে বা কেন পিছিয়ে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

চট্টগ্রাম,ময়মনসিংহ,ঢাকা,রাজধানী,শহর,বিশ্ব,ধীরগতি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close