• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ভোটের মাঠে ১৫২ ‘ঈগল’, কেন এটি পছন্দের প্রতীক?

প্রকাশ:  ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলনিরপেক্ষ প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেকই “ঈগল” প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে নামছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা এই প্রতীকটিকে পছন্দ করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৮৯৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৮২ জন দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। তাদের মধ্যে ১৫২ জন প্রার্থীই “ঈগল” প্রতীক বেছে নিয়েছেন।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের ভোটে মাঠে রয়েছে ২৭টি দল। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনী হাওয়া বইয়ে দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশল এখন পর্যন্ত বেশ সফল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অনেক আসনেই নৌকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এই সতন্ত্রদের সঙ্গে। আর তাদের অধিকাংশই বেছে নিয়েছেন ঈগল।

ঈগল প্রতীক বেছে নেওয়ার পেছনে ভোটের মাঠে “শক্তি-সামর্থ্য”র আলোচনা থাকলেও প্রার্থীরা বলছেন, ঈগল প্রতীক অন্য প্রতীকের চেয়ে দেখতে সুন্দর, তাই তারা এই প্রতীকটি চেয়েছিলেন।

ঈগল নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে থাকাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন- সিলেট-৩ আসনে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে সরওয়ার হোসেন, সিলেট-৫ আসনে আহমদ আল কবির, হবিগঞ্জ-১ আসনে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, গাজী মোহাম্মদ শাহেদ, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের ড. জয়া সেনগুপ্তা, হবিগঞ্জ-৪ আসনে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, ফরিদপুর-৪ আসনে মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুর-৩ আসনে ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ, ফরিদপুর-১ আসনে আরিফুর রহমান দোলন, ফরিদপুর-২ আসনে জামাল হোসেন মিয়া, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বরিশাল-৪ আসনে পঙ্কজ দেবনাথ, জামালপুর-৪ আসনে ডা. মুরাদ হাসান, চট্টগ্রাম-৩ আসনে জামাল উদ্দিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১২ আসনে শামসুল হক চৌধুরীও ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

‘শক্তি, সামর্থ্য ও ক্ষমতার প্রতীক ঈগল’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনায় বলা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা রয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রতীক হিসেবে ঈগলকেই বেছে নেওয়ার প্রতি ঝুঁকেছেন।

তবে প্রার্থীরা বলছেন, প্রতীক নির্বাচনের সময় কোন প্রতীক সাধারণ মানুষের কাছে বেশি বোধগম্য ও আকর্ষণীয় হবে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী বলেছেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য যেসব প্রতীক রাখা হয়েছে তার মধ্যে ট্রাক ও ঈগল-এই দুটো প্রতীক দেখেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে। এছাড়া রকেটটা কী? চায়ের কেটলি, মোড়া, দোলনা, ফ্রিজ, আলমারি-এগুলো পাবলিকলি খাওয়ানো যায় না।”

কুমিল্লার ৫ নম্বর বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া আসনের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু একজন প্রার্থীকে ঈগল প্রতীক দেওয়া হলে বাকি দুইজন এর প্রতিবাদ করেন। এদের মধ্যে একজন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি ফুলকপি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “প্রতীক হিসেবে ঈগলই তার প্রথম পছন্দ ছিল। কারণ তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা এ ধরনের মার্কা বেশি পছন্দ করে বলে মনে করেন তিনি। ট্রাকটা হলো বেসিকেলি শ্রমিক-টমিক মেহনতি মানুষের। এখনকার তরুণ প্রজন্ম তো আর এখন এগুলা পছন্দ করে না।”

তিনি বলেন, “কেটলি চায়ের দোকানে কাজে লাগে, কিন্তু মার্কা হিসেবে বলতে এটা ভালো লাগে না। কাঁচি দিয়ে মানুষের কাপড় কাটে, এ জন্য এটা ভালো লাগে না।”

বরিশাল-৪ আসন থেকে লড়ছেন পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি। তবে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি।

ঈগল প্রতীক বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “ঈগল হচ্ছে শক্তি ও সাহসের প্রতীক। একই সাথে প্রাণীটি দুর্লঙ্ঘনীয়। সে তার তীক্ষ্ণ নজর ও লক্ষ্যবস্তু কখনো মিস হয় না। শক্তি, সামর্থ্য ও তার যে ক্ষমতা- সেকারণেই আমরা ঈগলটা বেছে নিয়েছি।”

হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন যিনি ব্যারিস্টার সুমন হিসেবেই বেশি পরিচিত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে লড়ছেন তিনি।

এই প্রতীকটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য যেসব মার্কা বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল তার মধ্যে ঈগলটাই তার কাছে মানসম্পন্ন মনে হয়েছে। যার কারণে বেশিরভাগ মানুষই ঈগলটাই বেছে নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “ঈগল পাখি হচ্ছে একমাত্র পাখি যেটি ঝড়-তুফানের উপরে উঠে যায়। অন্যান্য পাখি ঝড়-তুফানের সময় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়, সে তখন উপরে উঠে যায়। সুতরাং ঝড়-তুফান তার কিছু করতে পারে না।”

তিনি বলেন, “আরেকটা জিনিস হচ্ছে ঈগল পাখি পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকেও তার নিশানা দেখতে পায়। খুব নির্ভুল জিপিআরএসের মতো সে তার নিশানা বা লক্ষ্যবস্তু ধরতে পারে। প্রতীক হিসেবে এতে ভালো একটি বার্তা আছে বলে মনে করি।”

প্রতীক,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন,আওয়ামী লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close