• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ফিলিস্তিনিদের লড়াই ধর্মযুদ্ধ নয়, মুক্তির সংগ্রাম: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা যে যুদ্ধ করছেন, তা ধর্মযুদ্ধ নয়, মুক্তির সংগ্রাম বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মধ্যযুগে এই অঞ্চলে ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের। এখন যে যুদ্ধ হচ্ছে, সেই যুদ্ধ মুক্তির সংগ্রামের। এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনের পাশে কেবল মুসলমানরা নয়, খ্রিষ্টানরাও আছে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এক সংহতি সমাবেশে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধ এবং ফিলিস্তিন মুক্ত করার দাবিতে এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি, বাংলাদেশ।

সমাবেশের আগে শাহবাগে ফিলিস্তিনের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটক মঞ্চস্থ ও গান পরিবেশন করা হয়। আর সমাবেশের পর কয়েক হাজার মানুষের একটি মিছিল বের হয়। সেটি শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

অধ্যাপক মো. হারুন-আর-রশিদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল যে বর্বরতা চালাচ্ছে, তার কোনো নজির নেই। আর ইসরায়েলকে নির্মমতা চালাতে শক্তি জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইসরায়েলকে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মানুষের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম। এই সংগ্রাম পৃথিবীর সমস্ত মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে।’

প্রতিটি দেশের মানুষকে এই সংগ্রাম করতে হবে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিটি দেশের মানুষকে সামাজিক বিপ্লবের দিকে যেতে হবে। সামাজিক বিপ্লব প্রতিটি দেশে হলে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের পতন হবে। তখন দেখা যাবে ইসরায়েল বলে কোনো রাষ্ট্র নেই।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। তবে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। সেই বক্তব্য পড়ে শোনান ফিলিস্তিন সংহতি কমিটির সদস্য চৌধুরী মুফাদ আহমেদ। রাষ্ট্রদূত চিঠিতে লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনে আপনাদের ভাই ও বোনদের পরিত্যাগ করবেন না। ফিলিস্তিনি জনগণের ত্যাগ যত বড়ই হোক না কেন, যত দিন পর্যন্ত তাঁরা সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা ফিরে না পান, তত দিন তাঁরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার স্বাধীনতার প্রথম দিন থেকে পুরো বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে যে তারা আমাদের সমর্থক ও সহায়তাকারী। তারা এসব মূল্যবোধ কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

সংহতি সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদ মদদপুষ্ট ইসরায়েলি আগ্রাসন, দখল, গণহত্যা ও অব্যাহত জুলুমের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধ অবশ্যই ন্যায়সংগত। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ইসরায়েলি দখলদারত্ব, গণহত্যা ও জুলুমে ক্ষুব্ধ।

দাবি তুলে ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলিদের আগ্রাসন ও গণহত্যা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও নিয়ন্ত্রণের পরিপূর্ণ অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের উভয় অংশের মানুষের জানমাল, জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা ও পরিপূর্ণ মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বরাবরই ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ সম্পর্ক। অথচ আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের প্রতি নমনীয় ভাব নিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের কাছ থেকে সরকার জননিপীড়নের প্রযুক্তি কিনছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় ও স্বচ্ছ ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানাই।’

ফিলিস্তিন,রক্তাক্ত,ইসরায়েল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close