ব্যক্তিগত গাড়ির চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ ডিবি প্রধান হারুনের
ব্যক্তিগত গাড়ির চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় ব্যক্তিগত চালক কর্তৃক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী অপহৃত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ পরামর্শ দেন তিনি।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ পরামর্শ দেন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।
সম্পর্কিত খবর
এ সময় তিনি শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল অপহৃত হওয়া এবং তাকে উদ্ধারের ঘটনা তুলে ধরেন।
ডিবি প্রধান জানান, রাজধানীর উত্তরা থেকে শেরপুর যাওয়ার পথে অপহৃত হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল। এক মাস তাকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছিল অপহরণকারীরা। আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জের দুর্গম পাহাড় থেকে উদ্ধার করে হিমেলকে। গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের মূল হোতাসহ ১২ সদস্যকে।
হারুন অর রশীদ জানান, হিমেলকে অপহরণের ঘটনায় হওয়া মামলা তদন্তে নামে ডিবি’র লালবাগ বিভাগ। তদন্তে উঠে আসে হিমেলকে অপহরণের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন তার গাড়িচালক সামিদুল ইসলাম।
মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, “সামিদুলের লোভ হয় তার নিজের একটি গাড়ি থাকবে। হিমেলের বাবা যেহেতু মারা গেছেন, তিনি একমাত্র সন্তান, তাদের অনেক টাকা; এমন ভাবনা থেকে সামিদুল তাকে অপহরণের পরিকল্পনা শুরু করে “
তিনি বলেন, “সামিদুল প্রথমে তুরাগ এলাকার হানিফ বাবুর্চি নামের এক সাইট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। সে মোতাবেক ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার একাধিকবারের ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের সঙ্গে আলোচনা করে হিমেলকে প্রথমে তার বাসায় রাখার পরিকল্পনা করা হয়। হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় নিয়ে যখন টাকা পাওয়া যায়নি, তখন মামুন অন্য একটি গাড়ি দিয়ে তাকে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এক নির্জন পাহাড়ে নিয়ে হিমেলকে আটকে রাখা হয়। এরপর হিমেলের ওপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে বারবার তার মাকে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে মুক্তিপণ নেমে আসে ৩০ লাখ টাকায়।”
ডিবি প্রধান জানান, হিমেলের মায়ের সহযোগিতায় ডিবি লালবাগ বিভাগ শরীয়তপুরের চর অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে মাসুদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। মাসুদের দেওয়া তথ্যে চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা স্বীকার করেছে যে তারা এভাবে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
ডিবি তদন্তে আরও জানতে পেরেছে, এই চক্র শুধু অপহরণ নয়, তারা সীমান্তে গরু, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত।
হারুন অর রশীদ পরামর্শ দিয়ে বলেন, “সম্পদশালী যারা ব্যক্তিগত গাড়িচালক নিয়োগ দেন, তাদের একটু সতর্ক হতে হবে। কারণ সামিদুলের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে তার মতো বহু চালক এসব অপহরণ চক্র ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িত থাকে। গাড়িচালকরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধীদের সরবরাহ করে। অনেক ঘটনার অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। অনেকে ঝামেলা মনে করে টাকাপয়সা দিয়ে মীমাংসা করে ফেলে। কিন্তু হিমেলের মা আমাদের জানানোয় অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়েছে।”
চক্রগুলো গাড়িচালকদের কেন টার্গেট করছে, জানতে চাইলে হারুন বলেন, “কেউ চাইলেই তো কারও ব্যক্তিগত তথ্য সহজে সংগ্রহ করতে পারে না। সম্পদশালীদের সন্তান বা পরিবারের কাউকে অপহরণ করতে চাইলে প্রথমে তারা গাড়িচালকদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। হিমেলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আর সামিদুলেরও টার্গেট ছিল ধনী হওয়া। তাই চক্রটি সহজে তাকে পেয়েছে।”