• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

প্রকাশ:  ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:২৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর, বিশেষ করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর এর প্রভাব বিষয়ে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন জাতিসংঘের রাজনৈতিক এবং শান্তি বিনির্মাণবিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালিদ খিয়ারি এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের পরিচালক লিসা ডাউটন। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও সভায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সংকট আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এরই মাঝে রাখাইন রাজ্যে পুনরায় শুরু হওয়া সশস্ত্র সংঘাত উক্ত এলাকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, রাখাইনে সাম্প্রতিককালে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এ সময় তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যাবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।

এছাডাও, রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে সফলভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ এবং আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ এর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা জরুরি, যা মূলত মিয়ানমারের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নিহিত।

তিনি বলেন, ‘এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাগুলো সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারে জাতিসংঘের উপস্থিতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ বাস্তবায়নের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রাখাইনে সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময়ে গৃহিত চুক্তি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দেন। উপরন্তু, তিনি মিয়ানমারের অন্য সব জাতি-গোষ্ঠির মতো রোহিঙ্গারাও যেন সমাজে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সে লক্ষ্যে উপযুক্ত এবং টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যথাযথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত রাখাইন পরিস্থিতির প্রতি নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং রোহিঙ্গা সংকটের একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই সমাধানে দ্রুত ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।

সভায় বক্তব্য প্রদানকারী অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ মিয়ানমারে সংঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে রাখাইন সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ, সকল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘ ও আসিয়ানের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।

১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলদেশ যে মানবিক নেতৃত্বের নিদর্শন রেখে যাচ্ছে, বক্তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তারা।

নিরাপত্তা পরিষদ,রোহিঙ্গা সংকট,জাতিসংঘ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close