• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

প্রকৌশল সংস্থার শীর্ষ পদগুলোতে প্রকৌশলীদের চায় আইইবি

প্রকাশ:  ০৬ মে ২০২৪, ১৭:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) নেতারা বলেছেন, বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থার কাজ কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট। তাই, প্রকৌশল সংস্থাগুলোর চেয়ারম্যান, কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সর্বোপরি সংস্থাগুলোর শীর্ষ পদগুলোতে প্রকৌশলীর অভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, রাজউক ও বিসিআইসি’র শীর্ষ পদে ইতোপূর্বে প্রকৌশলী থাকলেও বর্তমানে অপ্রকৌশলীকে পদায়ন করা হয়েছে। কাজে গতি আনতে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থা, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিসমূহ, পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন কোম্পানিগুলো এবং মেট্রোরেলসহ অন্যান্য প্রকৌশলনির্ভর প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য প্রভৃতি শীর্ষ পদে প্রকৌশলীদের পদায়ন করতে হবে।

সোমবার (৬ মে) রাজধানীর রমনায় আইইবির ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আইইবির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এমপি।

সভাপতির বক্তব্যে মো. আবদুস সবুর বলেন, প্রকৌশলীরা দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রকৌশলীদের কোনো পদচারণা নেই। এজন্য দেশ গড়ার কারিগর প্রকৌশলীদের মনে হতাশা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কয়েকটি উইং রয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকৌশল উইং গঠন করে তাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের নিয়োগ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মনিটরিং ও সমন্বয় করার ব্যবস্থা করা হলে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সহজে ও যথাযথভাবে ওয়াকিবহাল হতে পারবেন। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথ মানে ও যথাসময়ে বাস্তবায়িত হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ, ভিশন-২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন সহজতর হবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, দেশের প্রকৌশলীরা শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে৷ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রকৌশলীরাই দেশের পক্ষ থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে।

দেশের প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়নে স এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু সাংবাদিকদের সামনে কয়েকটি দাবি আইইবির পক্ষে তুলে ধরেন।

প্রকৌশলীদের পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করা

দেশের অধিকাংশ সংস্থায় কর্মরত প্রকৌশলীগণ ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব, চলতি দায়িত্ব পালনে ভারাক্রান্ত। পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতি না দিয়ে চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। অথচ, প্রশাসন ক্যাডারে অনুমোদিত পদের অধিক পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে, একই পদে ২০ বছরের অধিক চাকরিকালে পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রকৌশল কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে, সংস্থাগুলোর কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রকৌশলীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রকৌশল সংস্থাগুলোতে কর্মরত প্রকৌশলীদের ফিডার পদে চাকরির শর্ত পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী ধাপের পদোন্নতি বা গ্রেড দেওয়া হলে প্রকৌশলীরা একদিকে যেমন ন্যায্য অধিকার প্রাপ্ত হবেন, অন্যদিকে তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে, দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। প্রকৌশল সংস্থাসমূহের অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী করা হলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

পলিটেকনিক শিক্ষকদের বর্তমান চাকরি কাঠামো পরিবর্তন পলিটেকনিক শিক্ষকদের প্রধান দাবি, বর্তমান চাকরি কাঠামো—জুনিয়র ইনস্ট্রাকটর—ইনস্ট্রাকটর—চিফ ইনস্ট্রাকটর—উপাধ্যক্ষ—অধ্যক্ষ পরিবর্তন করে প্রভাষক—অধ্যাপক চাকরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে মহাপরিচালকসহ পরিচালকের সব পদ অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা দখল করেছে। অকারিগরি লোক দ্বারা কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাদেরকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিয়োগবিধি মোতাবেক কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দিয়ে পদগুলো পূরণের দাবি জানাচ্ছি।

বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাগুলোকে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করা ক. ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডির প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু, এলজিইডি এখন পর্যন্ত ক্যাডারভুক্ত না হওয়ায় মেধাবী নবীন প্রকৌশলীরা এলজিইডি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাই, দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও সম্পদের উন্নয়নধারাকে অব্যাহত রাখতে এলজিইডিকে ক্যাডারভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

খ. ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০‘ বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীসহ ওয়াটার সেক্টরে কর্মরত সকল প্রকৌশলী নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পানিসম্পদ উন্নয়নে কর্মরত প্রকৌশলীদের জন্য ‘বিসিএস পানিসম্পদ প্রকৌশল ক্যাডার’ সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

গ. ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পর এখন ‘উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিসিএস আইসিটি ক্যাডার বাস্তবায়ন করা জরুরি এবং ২০০৬ সাল থেকে বিসিএস টেলিকম ক্যাডারের বন্ধ করা নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঘ. বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত হলো বস্ত্র ও গার্মেন্ট। এক্ষেত্রে দেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই, দেশের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ‘টেক্সটাইল ক্যাডার’ প্রবর্তনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

ঙ. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ‘সিনিয়র সার্ভিস পুল’ অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, উপ-সচিব পদের ৩০ শতাংশ প্রকৌশল সংস্থার জন্য সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।

আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিভিন্ন বড়-বড় প্রকৌশল ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রকল্পে কারিগরি জ্ঞানহীন একটি বিশেষ ক্যাডারের চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কারিগরি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে কারিগরি শিক্ষা ও জ্ঞানহীন ব্যক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগের কারণে প্রকল্পের গতি ব্যাহত হবে। কারিগরি জ্ঞানহীন বা প্রকৌশল কাজে চর্চাবিহীন বক্তিদের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ৭ মে ‘উন্নত জগৎ গঠন করুন’ স্লোগানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে আইইবির সদস্য প্রায় ৭০ হাজার।

আইইবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (৭ মে) প্রতিষ্ঠানটি নানা কর্মসূচি পালন করবে। আইইবির সদর দপ্তরে সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা ও আইইবি পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকালে কেক কাটা ও আলোচনা সভা করা হবে৷ আইইবির ১৮টি কেন্দ্র, ৩৪টি উপকেন্দ্র ও ১৪টি ওভারসিজ চ্যাপ্টারে একই সময়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে।

আইইবি,প্রকৌশল সংস্থা,পদ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close