• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আসুন নববর্ষে ধর্ষক ও যৌননিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শপথ নেই

প্রকাশ:  ১২ এপ্রিল ২০১৯, ২২:১৯
পীর হাবিবুর রহমান

নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের শুরু থেকে বার বার আমার মেয়ের কথাই মনে হয়েছে। আমার পরিবার বন্ধু স্বজনদের কন্যাদের চেহারাই চোখে ভেসেছে। নববর্ষের সকল আনন্দ ধর্ষক ও যৌন নিপীড়ক সিরাজরা নুসরাতের করুন মর্মান্তিক বিয়োগান্তক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ করেছে। আজ আমি আমার পাগলি চন্দ্রস্মিতাকে সময় দিতে গিয়ে বারবার সন্তানহারা নুসরাতের পিতার বুকফাটা আর্তনাদ শুনেছি।

নুসরাতের বাড়িতে নববর্ষের উৎসব নেই,আছে শোকের মাতম। নুসরাত বেঁচে থাকলে সাজতো। লাল শাড়িতে রেশমি চুড়ি নেইল পালিশ লিপস্টিক আলতায়।কপালে লাল টিপ দিতো। আজকেও এক ধর্মান্ধ সেই এলাকার ইমাম খুৎবায় নুসরাতের পোশাককে দায়ী করেছে। যারা পোষাককে দায়ী করেন কথায় কথায় একবারও ভাবেন না, নুসরাত হিজাব বোরখায় মাদ্রাসায় পড়েও রেহাই পায়নি। হিজাব পড়েও ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছে। যৌন বিকারগ্রস্ততা নিপীড়ন ধর্ষণ কুৎসিত মন বিকৃত চিন্তার ফসল। মাদ্রাসায় ছেলেরাও যৌননির্যাতনের শিকার হয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় স্বল্পবসনা নারীর দিকেওতো কেউ কুৎসিত ধর্ষকের চোখে তাকায় না। সম্মানের চোখ তুলে কথা বলে।

আজ প্রতিবাদ করছে মানুষ। সকল রাজনৈতিক সামাজিক ও ইসলামী চিন্তাবিদদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। ঘৃনা ও ক্ষোভের আগুনে জ্বলে উঠতে হবে।

একাত্তরে বীরত্বে আমাদের এই দেশ। একাত্তরে লাখো লাখো মানুষ জীবন দিয়েছে। আড়াইলাখ মা বোনের উপর ঘটে যাওয়া গণধর্ষনের বেদনা আমরা এখনো বহন করছি। বীরের এই দেশ ধর্ষক যৌন নিপীড়কদের অভয়ারন্য হতে পারে না।

আমাদের মেয়েদের গাড়িতে বাসে শপিংয়ে কোথাও একা পাঠাতে পারবো না, এমন দেশ নিরাপদ নয়, সভ্যও নয়। মেয়েরা একা চলবে, সবখানে ভয়হীন যাবে সেটিই আমার দেশ। সরকার বলেছে, নুসরাতের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আমি বলি রাষ্ট্রকে নারীর মর্যাদা ও জীবন রক্ষার গ্যারান্টি দিতে হবে। তনুসহ সকল হত্যার খুনী ধর্ষককে ধরে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষক ও খুনীদের ফাঁসি চাই।

আসুন নববর্ষের উৎসবে সবখানে সবাই মিলে নুসরাতের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করি। প্রতিবাদ করি। ধর্ষক ও যৌন নিপীড়কদের প্রতিরোধের ডাক দেই। শাস্তির দাবিতে শ্লোগান তুলি। আমার আপনার আমাদের মেয়ে ও নারীদের নির্বিঘ্নে জীবনযাপনের উপযোগী দেশ ও সমাজ গড়ি। যৌন নীপিড়কদের সামাজিকভাবে বয়কট করি। ঘৃনা করতে শিখি। ধর্ষক ও নিপীড়কদের পক্ষে যারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যুক্তি দেয় তাদেরকেও মানুষ হতে বলি। আমাদের মেয়েরা নিরাপদে লেখাপড়া করে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ যেনো পায় সেটি নিশ্চিত করি। আমাদের মেয়েদের জীবন নিরাপদ আনন্দের সূখের হোক।


লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

পীর হাবিবুর রহমান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close