• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ডাকসু নির্বাচন থেকে কী শিক্ষা নিলো বামপন্থীরা?

প্রকাশ:  ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৪২
সিয়াম সারোয়ার জামিল

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সিংহভাগ শীর্ষ নেতাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। পাড়ার গুণ্ডাটা খারাপ হোক বা ভালো, এ দেশের মানুষ এখনও 'এলাকার ছেলেটাকেই' পছন্দ করেন। তাই ভোটের রাজনীতিতে যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী, কলাভবন-টিএসসি-কার্জনে যিনি বেড়ে উঠেছেন, বিপদে ডাকলেই যাকে পাশে পাওয়া গেছে, তিনিই তো শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবেন। ভোটের ফল মানেন বা না মানেন, ডাকসু নির্বাচনে বামপন্থীদের এই 'বহিরাগত' নেতৃত্ব নিগেটিভ পয়েন্ট বাড়িয়েছে। এগিয়ে থেকেছে ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই কেন্দ্রীয় রাজনীতির মূল আখড়া ধরা হয়। ছাত্র রাজনীতি বলেন বা চাকরির বাজার বলেন- এখানকার শিক্ষার্থীরাই 'মোস্ট ওয়ান্টেড' বিবেচিত হন। শিক্ষার্থী পালিতে পড়েন নাকি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, তার চেয়ে বড় বিষয়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাই প্রচলিত সামাজিক বাস্তবতায় 'গর্বিত ঢাবিয়ান' পরিচয় দেশের শহর থেকে গ্রাম- সব জায়গাতেই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সক্রিয় থাকতে হয়, ফলে দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বে 'বহিরাগত' না আনাটাই সবদিক দিয়েই লাভজনক।

সম্পর্কিত খবর

    বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের যে ক'জন ঢাবি শিক্ষার্থী ডাকসুতে প্রার্থী হয়েছিলেন, সে কয়জনও সুবিধে করতে পারেননি। এর অন্যতম কারণ, তারা ক্যাম্পাসের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। কোনো রকমে ছাত্রত্ব টিকিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। ফলে সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে সমসাময়িক বন্ধু, সহপাঠী, ব্যাচমেট, বড়-ছোটভাইদের যে জনসমর্থন জরুরি ছিল, সেটা তারা পাননি। সমসাময়িক আন্দোলনগুলোতে তারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকলেও প্রধান মুখ হয়ে উঠতে পারেননি। মূল ট্রাম্পকার্ড 'ছাত্রী ভোটে' তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি।

    এই শীর্ষ নেতৃত্বের বড়রকমের জেনারেশন গ্যাপও ছিল। বামজোটের প্যানেলে কয়েকজনের ব্যক্তি পরিচিতি থাকলেও সবার পরিচিতি তেমনটা ছিল না। দুই একজনকে পুরো প্যানেল টেনে নিয়ে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ রাজনীতিতে নবীন হলেও অবস্থান তৈরি না করেও সংগঠনগত কোটায় জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। প্যানেলে গ্রহণযোগ্য পরিমাণ নারী নেতৃত্বও ছিল না। এসব ভোটের রাজনীতিতে নিগেটিভ মার্কিং বাড়িয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীনদের বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের কাছে রাজনীতিবিমুখ 'কিউট' নেতৃত্বই 'কাছের' হয়ে উঠেছিল।

    বিশ্বব্যাপী পপুলিজমের যে ধারা, সেই ধারার বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নন। ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব সেই ধারায় যথেষ্ট আপডেটেড। একইসঙ্গে পারফরমেন্সও দারুণ। অনেকেই রাতারাতি মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন। শিক্ষার্থীদের কাছে আপন হয়ে উঠেছেন। টানা একমাস ভোটের খবর কাভার করতে গিয়ে দেখেছি, কোনো কোনো প্রার্থী শুধু আসরের নামাজ তিন মসজিদে পড়ারও চেষ্টা করেছেন। রুটি-রুজির লড়াইয়ের প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যে সমাজে, সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড 'সেলফ সেন্টারড' হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এই প্রজন্মের কাছে পুপুলিজমে ধারাই খাটে।

    আগামী ডাকসু নির্বাচনে জায়গা করে নিতে গেলে ঘটনার প্রতিক্রিয়া শুধু নয়, ঘটনার অনুঘটক হয়ে উঠতে হবে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে। সেক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোকে কেন্দ্রস্থ নেতৃত্ব নির্বাচনে আরও বেশি যত্নবান হওয়া জরুরি। ক্যাম্পাসের ভোটের রাজনীতিতে শুধু নয়, শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সৎ, ত্যাগী, মেধাবী, আস্থাশীল, নিয়মিত ছাত্রত্ব আছে, এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন। এ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম হোক বা না হোক, আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের প্রাণের ক্যাম্পাস গড়তে, সার্বজনীন ক্যাম্পাস গড়তে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোই রাষ্ট্রের মূল সহায়ক শক্তি।

    লেখক: সাংবাদিক email: [email protected]

    পিবিডি/এআইএস

    সিয়াম সারোয়ার জামিল
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close