• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হিরন্ময় প্রতিরোধের বেলোয়ারি বিস্ময় বসুনিয়া

প্রকাশ:  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:২৯
ফিদা হোসেন রিসলু

তখনো যেমন এখনো তেমন: ফাগুন মানে সৌন্দর্যের রক্তিম আঁচে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের লেলিহান পেখম। অহমে জড়ানো- স্পর্ধায় মোড়ানো সেইসব পোঁড়ানো আর গড়ানোর গহীনের সরোবরে যেইসব রক্তিম কৃষ্ণচুড়ারা এখনো ঝরে ঝরে পড়ে, তারই অপরিমেয় আবিরের রক্তাক্ত ভেতরে উথলিত আজিকার বেদনার্ত বিহারে দ্রোহের কবি মোহন রায়হানের কবিতার এই একাংশখানি কেবলই গুমড়ে গুমড়ে শুনি:

মধুর ক্যান্টিনে যাই

সম্পর্কিত খবর

    অরুনের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে

    বসু, তোমাকে মনে পড়ে যায়

    তোমার সেই সদা হাসিমাখা ফুল্ল ঠোঁট,

    উজ্জ্বল চোখের দ্যুতি

    সারাক্ষন চোখে চোখে ভাসে

    বুঝি এখনই সংগ্রাম পরিষদের মিছিল শুরু করার তাগিদ দিবে তুমি

    (তোমাকে মনে পড়ে যায়)।

    উত্তর জনপদের সুদূরের কুঁড়িগ্রাম থেকে উঠে আসার এক সুরেলা রাখালিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়া 'বসু' নাম নিয়া হয়ে-উঠা একজন রাওফুন বসুনিয়া- তেমনি এক উথলিয়া; প্রজ্জ্বলিত সাহসের উড়োনিয়া হয়ে স্বাধীন-স্বদেশের স্বৈরাচারী বুকে উদ্ভাসিত-যিনি ছিলেনঃ দ্রোহ আর প্রেমের এক জলন্ত জাগানিয়া। সামরিক জান্তার এই ভীতি-কাঁপানিয়া টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া জুড়ে ভালোবাসার চাদরে পত-পত উড়েছিল- পেখমিত প্রণোদিয়া! প্রয়াণের এই দিনটিতে তাঁর; মনেপড়া স্মৃতির বিবিধ দ্যুতির গতিময়তার আকারে-প্রকারে জ্যান্ত যেসব ছবি'রা ঝরে-ঝরে পড়ে, সবখান জুড়ে তার- ফিরে আসে বারবার; ফাগুনের দিনে ফোঁটা আগুনের আবারো বাহার!

    ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার কিছু পরে জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারন সম্পাদক রাওফুন বসুনিয়া তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সৃষ্ট "নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ"এর লেলিয়ে দেয়া গুন্ডা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। এর আগে বিরাশির ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলের পরপরই প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমূহের একত্রিত জোট-"ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ" স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার যে সিদ্ধান্ত নেয়, তারই প্রেক্ষিতে তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হয়। তার আগেও এ-ধরনের কর্মসূচি দেয়া হলেও সংগ্রাম পরিষদের আভ্যন্তরিণ নানা নেগেটিভ প্রণোদনে শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানো যায় নি।। তবে তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মহানগরীর বিভিন্ন কলেজ থেকে এমনকি স্কুল-হতে আগত ছাত্ররা স্বতস্ফূর্ত যে মিছিলে করে শিক্ষাভবনের দিকে অগ্রসর হয়েছিল, যৌবনের সে জলতরঙ্গ ঠেকানোর জন্য দোয়েল চত্বর হয়ে কার্জনহলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত পুলিশবাহিনী শক্ত ব্যারিকেড গড়ে তোলে। বন্যার পানির মত আগোয়ান ছাত্রসমাজের বিশাল সেই মিছিলের জোয়ার আছড়ে-আছড়ে পড়ে ব্যারিকেডের সামনে। শুরু হয় সামরিক জান্তার নির্দেশে নির্মম এক নারকীয় পৈশাচিকতা। টিয়ার গ্যাস আর লাঠিচার্জই শুধু নয়; রঙ্গিন গরমপানি ছিটিয়ে চিন্হিত করা হয় মিছিলকারীদের। তারপর চলে সেই চিন্হিতদের উপরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন জয়নাল, জাফর, ওয়াজেদ, কাঞ্চন আর দিপালী সাহাসহ নাম না-জানা আরও কিছু তরুণ- যাঁদের অনেকের লাশ গুম হয়ে গিয়েছিল। অনান্যদের লাশ কোথায়-কিভাবে নেয়া হয়েছিল, তেমনটি স্মরণে না-এলেও শহীদ জয়নালের লাশ নিয়ে ছাত্রকর্মীদের একাংশ দ্রুত পিছিয়ে গিয়ে মহসীন হলের একটি কক্ষে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে ডাকসুর তৎকালীন ভিপি এবং বাসদ ছাত্রলীগের নেতা আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ছাত্রনেতাদের একটি সভায় ছাত্রলীগনেতা ফজলুর রহমান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বাহলুল মজনুন চুন্নু, বুয়েটের ভিপি ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মনির উদ্দীন আহমেদ, রাকসুর ভিপি ও ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশাসহ অনান্য ছাত্রনেতাদের সেই সভায় ডাকসুর তৎকালীন জিএস জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু উপস্হিত থাকলেও ইতোমধ্যেই 'হয়ে-যাওয়া' সামরিক জান্তার ইনফরমার হিসেবে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখেন তার মুখশ্রী। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহসিনহলে লুকিয়ে রাখা জয়নালের লাশ নিয়ে আবারো মিছিলের প্রস্তুতিতে গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ছাত্রনেতা-কর্মিদের সেই অভিপ্সা।

    ইতোমধ্যেই কর্তব্যরত গোয়েন্দা সংস্হার লোকজন নিশ্চিত হয়ে যায়-যে, জয়নালের লাশ আছে মহসিন হলেরই কোন এক কক্ষে। ধারনা করা হয়-যে, ডাকসুর জিএস জিয়াউদ্দিন বাবলুর ইনফরমেশনের ভিত্তিতেই মহসিনহল চলে আসে- তাদের নজরদারীতে। এদিকে ক্যাম্পাস জুড়ে সামনে-তারা যাদেরকেই পাচ্ছেন- অমানবিক নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে পুলিশভ্যানে তোলা হচ্ছে তাদেরকেই। এরইমধ্যে বিনা অনুমতিতে ক্যাম্পাসে পুলিশী তৎপরতার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফজলুল হালিম চৌধূরীর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকহীন ক্যাম্পাসে অনার্স ফাষ্ট ইয়ারে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে মিছিলের-সাথী হয়ে আসা বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ (পুরাতন ভবন শাখা) ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, প্রিয়বন্ধু-মীর কল্লোল ইকবালকে সাথে করে প্রাণপনে ছুটে যাই মহসিনহলেরই অভিমুখে। সেখানের গেটমুখে আতংকগ্রস্ত ছাত্রসমাজের জটলার ভিতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে কল্লোল ছুটে গেল মহসিনহলের ভেতরে আর আমি গিয়ে উঠি- সেই হলের লাগোয়ায় সূর্যসেন হলের হাউস টিউটরদের বাসাতে। নিরাপদে সেখান থেকে পরবর্তিতে বের হয়ে আসতে পারলেও কল্লোল পড়ে যায়- নারকীয়তার মুখে। তালা ভেঙ্গে-ভেঙ্গে লুকিয়ে রাখা রুম থেকে জয়নালের লাশ বেরকরে আনার পরে হলের আইডি কার্ড দেখে-দেখে ছাত্রদেরকে ছেড়ে দেয়া হলেও অনেকের সাথে আইডি'হীন কল্লোলও ধরা পড়ে যায় পুলিশের কাছে। সেখান থেকে শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের পাশবিক নির্যাতনের পরে লবনপানি খাইয়ে ফেলে রাখা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত প্রান্তরে। সেখানের একজন কনষ্টেবলের সহযোগীতায় উত্তরাঞ্চলের প্রখ্যাত আইনজীবী- পিতা মীর ইকবাল হোসেনের অনুরোধক্রমে বিখ্যাত ভাষাসৈনিক গাজিউল হক সাহেবের তড়িৎ তৎপরতায় অবশেষে কল্লোল মুক্ত হয়ে এলেও অনেক তরুনের চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারির সেই রক্তেভেজা ফাগুনের দূর্বিনীত দ্রোহের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দলীয় ঐক্যজোট আর বিএনপির নেতৃত্বে সমমনারা মিলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেরা একই শ্রোতধারায় এসে মেশে।

    সামরিক জান্তার কবল থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সেই মহতি আবাহনের সাথে ছাত্রসমাজের সাহসী সম্পৃক্ততাকে মিলিয়ে নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে রক্তেভেজা ১৪ ফেব্রুয়ারিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালন করবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পঁচাশিতে এসে। তারই প্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারির রাতে হলে-হলে মিছিল করে পরের দিনের কর্মসূচি পালনের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল; সেই কর্মসূচি বানচালের মধ্যদিয়ে আরেক ফাগুনের উদগীরিত আগুন নেভানোর অভিপ্রায় থেকেই মূলত: কোন একজন প্রভাবশালী ছাত্রনেতার লাশ ফেলানোটাকে জরুরি মনে ক'রে এবং যে-কোন উপায়ে সেই লাশকে গুম করে দিয়ে সমগ্র ছাত্রসমাজকে একটা ভীতিকর পরিস্হিতির মুখে ফেলে দেয়া'য় ছিল- জান্তা সরকারের সেদিনের এজেন্ডা। সামরিক জান্তার সেই ঘৃণ্য প্রণোদনার তোয়াক্কা না-করে বিভিন্ন হল থেকে আগত সাথীদের নিয়ে সূর্যসেন হলের মিটিং থেকে শেষবক্তা রাওফুন বসুনিয়ার মুখ-হয়ে স্বৈরাচার পতনের অংগিকার নিয়ে যে মিছিল ছুটে চলে মহসিন হল হয়ে মূলগেট অভিমুখী সার্জন্ট জহুরুল হক হলের দিকে; শানিত তার তুমুল ধ্বণী আঁছড়ে পড়া প্রতিধ্বণীর প্রণয় কাঁপনে মূলগেটের সামনে পড়ে হঠাৎ ধেঁয়ে আসা ঘাতক বুলেটের তীব্রঘাতে সময়ের সাহসী সন্তান রাওফুন বসুনিয়া লুটিয়ে পড়েন- রক্তাক্ত রাজপথে। ঘাতকদের নিভে-দেয়া বিদ্যুতের জমাট অন্ধকারে শত-শত রাউন্ড গুলির বিভীষিকা আর অজস্র ককটেলের ব্যাভিচারী বিস্ফোরণের মাঝেও মিছিলের সাথীরা কিন্তু পালিয়ে যায়-নি বসুনিয়াকে ফেলে। ক্রমশই নিরব-নিস্তব্ধ হতে-থাকা দেহটাকে পাহারায় এনে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদলের নেতৃত্বসুলভ আচরণ আর করনীয় সম্পর্কিত ভূমিকা ছিল দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন নেতার মতই। "যতই আসুক গুলির ভীতি; মাটিতে শুয়ে পড়ে বসুনিয়াকে ধরে রাখাটাই হবে এখনের রীতি"।

    ভীতিকর সেই রক্তের গীতিতে প্রজ্জ্বলিত দ্রোহের প্রীতি নিয়ে এগিয়ে আসার পথে-পথে ছাত্রদলনেতা সানাউল হক নীরু'র ভূমিকার কথা অস্বীকার করলে অবিচার করা হবে-এই লিখনীর সাথে। সংগী-সাথীসহ সে'রাতে জেনারেল এরশাদের প্রেরিত সন্ত্রাসীদের গুলিবৃষ্টির ভেতরে ছাত্রনেতা নীরুর দু:সাহসী প্রতিরোধ ছিল দেখনের-চোখে বীরেচিত। মূলত: সেইসব প্রতিরোধের পাশাপাশি ছাত্রনেতা-কর্মিদের একত্রিত ভূমিকায় অবশেষে নিথর বসুনিয়াকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল মহসিন হলের ক্যান্টিনে। সেখানে জাতীয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নুরুল ফজল বুলবুল, বাসদ ছাত্রলীগের নেতা রানা হামিদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মনিরুজ্জামান বাদলের পাশে ছাত্রদলের কতিপয় নেতার সাথে শত-শত কর্মিদের শ্লোগানে শ্লোগানে বসুনিয়াকে নিয়ে রাস্তায় নামতেই আবারো গুলি! এবং তারপরে আবারো পাল্টাগুলি। এভাবেই যেতে-যেতে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পরে কর্তব্যরত ডাক্তারগন রাওফুন বসুনিয়াকে ঘোষণা করেন।

    অত্যন্ত সুদর্শন, অমায়িক আর দল-মত নির্বিশেষে বন্ধুবৎসল- একজন বসুনিয়ার এই মৃত্যু স্বৈরাচার বিরোধী স্ফুলিংগকে দাবানলে পরিনত করে। পরদিন সকালে প্রতিশোধে ক্রোধান্ধ ছাত্রসমাজ ঘাতকদের আশ্রয়স্হল স্যার এ এফ রহমান হল সম্পূর্ণরূপে ভস্মিভূত করে দেয়। "অপরাজেয় বাংলা"কে ঘিরে গোটা কলাভবন জুড়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই স্মার্ট ছাত্রনেতার লাশের পাশে কান্নার রোল পড়ে যায়। মেয়েদের ছলছল আঁখি বেয়ে ঝরেপড়া অশ্রুর সাথে ছেলেদের বুকভেদী কান্নার কাছে সাদাশাড়ি আবৃতা কোন এক মানবীর উথলিত আহাজারিতে ভারী সেই প্রান্তরে রচিত হয়েছিল এক অমর কাব্যের শিল্পীত ছন্দনীল:

    "তোমার মৃত্যুতে পৃথিবীর তিনভাগ জল অশ্রু হয়ে গেছে/ রাজপথ হয়েছে আজ সাহসী মিছিল"। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাযা শেষে অবশেষে লাশ চলে যায়- তাঁর সেখানের ভূমে; যেখানের নদী আর মাটিতে মথিত-মায়ের গর্ভ থেকেই শোনা হয়ে যায়- নুরুলদীনের জীবন্ত জাগনাই: "জাগো বাহে কোনঠে সবাই"।

    সবাই'য়ের মাঝ থেকে একা'ই চলে যাওয়া এই ছাত্রনেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবৈধ সামরিক সরকার কিছু পরিকল্পনার বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। সাড়ে পাঁচমাস ব্যাপি বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির ফাঁক-গলে তথাকথিত গনভোটের মাধ্যমে জেনারেল এরশাদকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পাশে প্রেসিডেন্ট'এর আসনে অভিষিক্ত করা এবং প্রত্যেকটি থানা'কে উপজেলা'য় রূপান্তরিত করে পছন্দের বরকন্দাজদের চেয়ারম্যান বানিয়ে স্হানীয় পর্যায়ে সামরিকশাসনকে জায়েজ করানোর লক্ষ্যই ছিল-বসুনিয়া হত্যাকাণ্ড উদ্দেশ্য। তবে সাময়িক সে স্বার্থ সিদ্ধিতে-সাধ্য হলেও চেতনার স্তরে-স্তরে ভরিয়ে দেয়ার প্রতিরোধমূলে খুলে-খুলে পরা স্বৈরাচারীর কুৎসিত চেহারা দিব্যলোকে উন্মোচিত হতে হতে একদিন নব্বইয়ের শেষে এসে এরশাদের পতনকেই ত্বরান্বিত করেছে অবশেষে।

    তাই রাউফুন বসুনিয়ার মৃত্যু নিছক কোন মৃত্যু নয়; এ মৃত্যু জৈবিক কিংবা সাংগঠনিক সবধরনের স্বৈরাচারী প্রণোদনার উপরে বাহিত এক হিরন্ময় প্রতিরোধের বেলোয়ারি বিস্ময়! ভেতরে প্রোথিত-তার তাবৎ আকার ফাগুনের প্রথমায় পেখমিত জোসনায় পুঁড়ে-পুঁড়ে সোনা হয়ে আগুনের পরিণয়ে শীলিত হয়েছে যেখানে-গিয়ে; সেখানেই আমাদের সকল প্রণতি- প্রেয়সীর মালা নিয়ে 'বসুনিয়া' হয়ে-হয়ে বারবার জ্বালাতে চাইবে- আবারও ফাগুনের আরক্তিম আরতি!

    লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট

    পূর্বপশ্চিম- এনই

    বসুনিয়া,রাওফুন বসুনিয়া,ফিদা হোসেন রিসলু
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close