ভালো কমিশন মানেই ভালো নির্বাচন নয়
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানা যাচ্ছে, সার্চ কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিশিষ্টজনরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুতে নানারকম পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের অনেকে অনেকের নামও প্রস্তাব করেছেন।
বিশিষ্টজনরাও যেটা এড়িয়ে যাচ্ছেন বা খেয়াল করছেন না, যেটা আমি বারবারই যেটা বলার চেষ্টা করছি (যদিও এই ইস্যুতে আমার কথার ন্যূনতম কোনো গুরুত্ব নাই), তা হলো: দেশের সবচেয়ে সৎ, যোগ্য, মেধাবী ও দলনিরপেক্ষ পাঁচজন লোকও (ধরা যাক আমিসহ, ব্র্যাকেটে হাহাহা) যদি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান--তাদের পক্ষেও দেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোয় অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা হয়তো সম্ভব, কিন্তু গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য এবং ক্ষমতাসীনদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব নয়, যদি না ক্ষমতাকাঠামোয় পরিবর্তন আন যায়।
সম্পর্কিত খবর
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে এখন কোনো ভারসাম্য নেই। প্রধানমন্ত্রী মূলত একইসঙ্গে সংসদ নেতা, সরকারের প্রধান নির্বাহী, দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রপতিকে যেহেতু সকল সিদ্ধান্ত তাঁর সঙ্গে পরামর্শক্রমে করতে হয়, ফলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রকারান্তরে রাষ্ট্রপ্রধানও।
সুতরাং, যদি রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক থেকে যায় এবং রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান যদি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ না করে বা করতে না পারে, তাহলে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে আইন করা হলেও, যে ধরনের মানুষদের নির্বাচন কমিশনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার কথা, সেটি নিশ্চিত করা কঠিন। বরং এতদিন যারা যেসব যোগ্যতা ও মানদণ্ডে নিয়োগ পেয়েছেন, মোটামুটি তারাই নিয়োগ পাবেন এবং এতদিন নির্বাচন কমিশন যে ধরনের কাজ করেছে, তার বাইরে গিয়ে সত্যিকারের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
সর্বোপরি, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে আইন করা হলো কি না; কোন প্রক্রিয়ায় তাদের নিয়োগ দেয়া হলো, তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন নির্বাচন কমিশন কাজের ক্ষেত্রে আসলেই কতটা স্বাধীন? সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের এখতিয়ার কতটুুকু এবং মাঠ প্রশাসন তাদের আদেশ-নিষেধ কতটা মানে; না মানলে শাস্তি কী? এইসব প্রশ্নের সুরাহা না করে খুব ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করেও মূল কাজ যে ভালো নির্বাচন--সেটি নিশ্চিত করা কঠিন।
লেখক: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন।