• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রিয় রাসেল, শান্তিতে থেকো ভাই

প্রকাশ:  ১৮ অক্টোবর ২০২২, ২১:৫৫ | আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ২২:০৬
হামজা রহমান (অন্তর)
হামজা রহমান (অন্তর)

প্রিয় শেখ রাসেল, আজ তোমার জন্মদিন। আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিও। তোমার শিশু হৃদয়ের অস্পষ্ট চোখে দেখা সবুজ বাংলার প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। শরৎকালের প্রকৃতি তোমার মতোই কোমল, শান্ত, স্নিগ্ধ ও উদার। শরৎ আমাদের নানা রঙের ফুলে রাঙ্গিয়ে দেয়। শরৎ শুধু কাশফুলেই নয়, শাপলা, শালুক, জবা, পদ্ম, জুঁই, কেয়া, শিউলি, কামিনী, মালতি, মল্লিকা, মাধবী, ছাতিম, দোলনচাঁপা, বেলি, জারুল, নয়নতারা, ধুতরা, ঝিঙে, শ্বেতকাঞ্চন, রাধাচূড়া, বোগেনভেলিয়াসহ কতো রকমের ফুলে যে রাঙ্গিয়ে দেয়, তা তুমি দেখে যেতে পারনি! তুমি আরও দেখে যেতে পারনি এইসব ফুলে পাতা কুড়ানি শিশুরা কীভাবে তাদের কৈশোর স্মৃতিময় করে তোলে! তুমি আমাদের অদেখা দেবশিশু, কলি থেকে ছিঁড়ে ফেলা রক্তজবা, তোমার বেঁচে থাকার আকুতি আমাকে কাঁদিয়েছে।

পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের নেতা ও কলমযোদ্ধা বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে তোমার নাম। কিন্তু তুমি তার লেখনী পড়ে যেতে পারনি। তুমি জেনে যেতে পারনি তোমার পিতা, আমাদের দুখী জনকের হাতে গড়া দেশটায় আমরা কেমন আছি, আমরা তাঁকে কতো ভালোবাসি!

মুক্তিযুদ্ধে তোমার দুই সহোদর সেনা অফিসারকে বীরের মতো লড়তে দেখে তুমি সেনা হতে চেয়েছিলে। তোমার হত্যাকারীর গায়ে সেনা ইউনিফর্ম দেখে তোমার কেমন লেগেছিলো? তুমি জেনে হয়তো কাঁদবে রাসেল, তোমার নামে একটা সেনানিবাস হয়েছে, তোমার হত্যাকারীদের সেনা পদবীও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেই রাতের নির্মমতায় তোমার সেনা হয়ে ওঠা হয়নি আর, কিন্তু বাংলার অকুতোভয় সেনাদের মাঝে তুমি অমর হয়ে থাকবে।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে জুলিয়াস সিজারকে হত্যার বর্ণনাটি পৃথিবীর সবচাইতে নিষ্ঠুর বলে গণ্য করেন কেউ কেউ। কিন্তু সিজারকে মারার সময় কোনও শিশুকে মারেনি হত্যাকারীরা। সিজারকে মারার সময় কোনও গর্ভবতী নারীকেও মারেনি খুনির দল। বাড়ির কাজের লোক, এমনকি বেড়াতে আসা অতিথিকেও সেই রাতে তারা নির্মমতার শিকার করেছিলো সিজারের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে অতিক্রম করে। এমন নিষ্ঠুরতা দেখেও তুমি বাঁচতে চেয়েছিলে, মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলে। ঘাতকের দল চিরতরে তোমার মায়ের পাশে তোমাকে কবর দিয়ে দিলো! তৃষ্ণার্ত হয়ে জল চেয়েছিলে, পেলে না, আমাদের ভাসিয়ে গেলে নোনাজলে।

মুক্তিযুদ্ধে হেরে যাবার গ্লানি ছিল পাকিস্তানপন্থী অফিসারদের। তুমি কি ভাবতে পেরেছিলে রাসেল, এই বয়সী একটা শিশুর উপরেও তারা যুদ্ধে হেরে যাবার নিষ্ঠুর পৈশাচিক প্রতিশোধ নেবে? তোমার বিশ্বাস ছিল, তোমাকে ওরা মারবে না। কি নাম ছিল সেই সেনার? আমরা জানতে পারিনি। তারও নিশ্চয়ই এক বা একাধিক শিশু জন্মেছিলো! সেই শিশুর একটুখানি হাসির জন্য সেও নিশ্চয়ই অপেক্ষার ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরতো! সেই শিশুরা কি আজ বড় হয়েছে? তারা কি তাদের খুনি পিতাকে ভালোবাসে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়।

গুলিতে ছিন্নভিন্ন, আমাদের না ফোঁটা রক্তজবা শহীদ শেখ রাসেল। শ্রাবণের সর্বস্বান্ত ভোরে তোমাকে আমরা হারিয়েছি। তুমি কি এখনো সাইকেল চালাতে ভালোবাসো? কিংবা লেকে মাছ ধরে সেগুলো আবার জলে ছেড়ে দিতে এখনো ভালোবাসো? তোমার কি এখনো প্রিন্সস্যুট পড়তে মন চায়? এখনো কি জার্মানিতে চলে যাওয়া তোমার হাসুপা'র জন্য তোমার মন খারাপ হয়? কেন যে তোমার হঠাৎ জন্ডিস হয়েছিলো তখন, তোমার হাসুপা তোমাকে আর নিতে পারলো না হিংস্র পশুদের থাবা টার্গেট থেকে! তোমার কোমলপ্রাণ হৃদয় কি এখনো প্রশ্ন করে খুনি মোশতাককে, ‘শিশুরা তো রাষ্ট্রপতি হয় না, তাও কেন আমাকে মারলে?’

আজ তোমাকে স্মরণ করি, এই লোকায়ত বাংলার দুরন্ত শিশুদের মাঝে তোমাকে খুঁজি। তুমি শান্তিতে থেকো ভাই।

ইতি, তোমাকে না দেখার বেদনায় কাতর একজন ছাত্রলীগ কর্মী। তোমার হাসুপা ও কামাল ভাই ছাত্রলীগ করতেন, তুমিও কি সদ্য কৈশোরে গিয়ে তাদের মতোই মিছিলে নেতৃত্ব দিতে?

লেখক: কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ছাত্রনেতা, সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

শেখ রাসেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close