• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এ দেশ কারো একার নয়!

প্রকাশ:  ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৫০ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৫১
মনজুর রশীদ

দেশে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির প্রথম সংক্রমণ ঘটে ৮ মার্চ ২০২০ সালে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আক্রান্ত ও নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে যেতে থাকলে বিভিন্ন সময় সরকার দীর্ঘদিন সাধারণ ছুটি, লকডাউন- এমনকি বাসা থেকে অফিস করার অনুমতি দেয়। দুই বছরেরও বেশি সময় সারাবিশ্বের মত আমাদের দেশেও কী এক দুর্বিষহ অবস্থা আমরা কাটিয়েছি, তা সবাই সম্ভবত ভুলতে বসেছি! সে কারণে হয়তো আবার আগের মত রাজনৈতিক ও সামাজিক হানাহানি, দুর্বৃত্তপনা ও মানবিক বিপর্যয়ে যেন আবার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় এই জন্মভূমি।

এ দেশ আমাদের সবার। এই মা, মাটি আর মানুষ আমাদের অহংকার। এখানে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। আমরা সবাই মিলেমিশে এ দেশকে সুন্দর সুখময় জন্মভূমিতে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা যুদ্ধ করেছি। অনেক রক্তাক্ত নদী আমরা পার করে এসেছি। আমাদের শিক্ষা কম হয়নি। আমাদের অর্জনও কিন্তু কম নয়।

এখানে আমরা অন্যায় ও বিভেদের প্রাচীর গড়ে তুলতে পারি না। সাধারণ মানুষকে দুঃখ, দারিদ্র্য আর দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দিতে পারি না। একদল লুটেরার দস্যুবৃত্তির কারণে আমাদের কষ্টার্জিত উপার্জন বিদেশে পাচার করতে দিতে পারি না। সরকারি-বেসরকারি যেকোনও পরিষেবা নিতে গিয়ে ঘুষ, দুর্নীতিকে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভিন্নমতাবলম্বী হলেই তার ওপর জুলুম-নির্যাতন কোনো সভ্য দেশে চলতে দেওয়া যায় না। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত বিভিন্ন সংস্থা কোনো অবস্থাতেই কোনো রাজনৈতিক দলের মনোবাসনা পূরণে কাজ করতে পারে না। তাতে সমষ্টিগতভাবে আমাদের দেশেরই ক্ষতি।

আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে, বোনে বোনে মিলেমিশে শান্তিতে থাকতে চাই। প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনৈতিক হানাহানি, মারামারি, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা কোনোভাবেই চাই না। অযৌক্তিক গায়েবী মামলা দিয়ে নিরীহ রাজনৈতিক ও সাধারণ নাগরিক জেলে বন্দিজীবন পাড়ি দেবে— এটাও কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা সাধারণ জনগণ উদ্বিগ্ন এজন্য যে, প্রতিনিয়ত প্রতিশোধ পরায়ণ রাজনীতির যে নজির ক্রমাগত আমরা দেখতে পাচ্ছি— কখনো ক্ষমতার পালাবদল হলে তার মাত্রা আরও কতটা ভয়ানক হবে তা রাজনৈতিক নেতারা কেন বুঝতে চেষ্টা করেন না!

আমাদের সুন্দর দেশটা সবাই মিলে কেন অসুন্দর করে তুলবো? কেন কোন রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক সমালোচনা করলেই সমালোচককে আসামির কাঠগড়ায় অথবা কোন একটা পক্ষের দালালের কালিমা লেপন করতে হবে? কেন আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ লাগিয়ে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করছে, তাদের একদিন কৈফিয়ত দিতে হবে জাতির কাছে। সময় কোনো কিছুকেই ক্ষমা করে না। সময়ের কাছে মানুষ বড় অসহায়— আজ যে রাজা, কাল সে ভিখারি। এই সোনার দেশটাকে নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলবেন না। এ ধরনের বাড়াবাড়িতে কত দেশ, কত জাতি ডুবে গেছে— একথা কেন আমরা বার বার ভুলে যাই?

এদেশ কারো একার নয়। এদেশ কোনো ব্যক্তি, কোনো গোষ্ঠী, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এদেশ সতেরো কোটি মানুষের দেশ। আমাদের পূর্বপুরুষদের শ্রমে-ঘামে ভিজেছিল এ মাটি। তারা এনেছে সভ্যতা। আর আমরা এখানে কী করছি? কেন দেশের মালিকানা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলবে? সহনশীল আচরণ না করে সবাইকে সমান সুযোগ না দিয়ে গায়ের জোরে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কেন দেখতে হবে? ভুলে গেলে চলবে না কর্তৃত্ব পরায়ণতার অধিকার আমরা জনগণ কাউকে দিইনি- তিনি যতই ক্ষমতাধর ব্যক্তি হোন না কেন!

সর্বদলীয় অংশগ্রহণে সব মানুষের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন সকল মানুষের কাম্য। জনগণ সকল ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে ভোট দিতে যাবে, পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই পথ বন্ধ করার পাঁয়তারা কেন? জনগণের প্রতি কেন এত আস্থাহীনতা? এসব কি হীনমন্যতার পরিচায়ক নয়? একেই কি বলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি? এ মুহূর্তে যে সত্যটি বুঝতে হবে তা হলো দেশের মানুষ চায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তি আর স্বস্তি। আর নিশ্চিন্তে ভোট দেওয়ার নাগরিক অধিকার। নিজেরা তো বটেই, আমাদের সন্তানেরাও ভোটাধিকারের বয়সে পৌঁছে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে কেন?

দেশের প্রধান দুটো দলের ঠেলাঠেলিতে যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? যদি গঠনমূলক রাজনীতি করার কথাই বলেন, তাহলে নিজের ঢাক না পিটিয়ে তা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব জনগণকে দিন। কাজের মাধ্যমেই আপন রাজনীতির বলয় সৃষ্টি করুন।

দেশের মানুষকে আর কত জিম্মি করে রাখবেন ? যদি দেশের ভালো চান— দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি রোধ করে দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কীভাবে দু’পয়সা আয়-রোজগার করবে, ডাল-ভাত খেয়ে শান্তিতে একটু ঘুমাবে— সে কথা ভাবুন। শুধু শুধু ক্ষমতার অপব্যবহার আর নির্বাচনকে আবারও প্রশ্নবোধক করার অশুভ পাঁয়তারা থেকে দয়া করে সরে আসুন। তা না হলে এতদিনের অনেক অনেক অর্জন কালিমালিপ্ত হবে। আর তা যদি হয়, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না- ভবিষ্যৎ কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলে না!

লেখক: রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষক

খোলামত
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close