• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র অভিন্ন

প্রকাশ:  ১৭ জুন ২০২৩, ১৩:১২ | আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ১৩:২৫
মাজহারুল ইসলাম

গণতন্ত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের অনুষঙ্গ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ ও তার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেছিল বলেই শুরু হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধিকারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপ নিয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরুর প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের সূচনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর আগে পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামল ছিল সামরিক জান্তা এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির রাহুগ্রাসকাল। ওই ২৩ বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াকু ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের মানুষ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাল রাতে পাকিস্তানি খাকি ভূতের এদেশীয় ছানাপোনারা স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে। তারপর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল গণতন্ত্রবিরোধী জান্তার আস্ফালন। নির্বাসন থেকে ১৯৮১ সালে দেশে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। জিয়া, এরশাদ, খালেদা সব আমলেই গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন অকুতোভয় ভূমিকায়। ওয়ান-ইলেভেনের বর্ণচোরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যায় শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের সাহসী প্রতিরোধের মুখে। ২০০৮-এর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে। বাতিল হয়ে যায় তত্ত্বাবধায়কের নামে অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার বিধান। দুনিয়ায় কোনো সভ্য দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নেই।

বাংলাদেশের সংবিধানে এ পদ্ধতি না থাকায় দেশে গণতন্ত্রচর্চা এবং শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সংবিধানের আলোকেই খুঁজতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনেও যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তা গাজীপুর, খুলনা ও বরিশালের সিটি নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। যে কৌশলে দেশের তিন গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশনে কারচুপিমুক্ত নির্বাচন সম্ভব হয়েছে, সে কৌশলকে জাতীয় নির্বাচনেও কাজে লাগাতে হবে।

গত মাসের শেষ ভাগে গাজীপুরের পর এ মাসের প্রথমার্ধে দুই গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী তার ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন। এ হামলা নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও কোনো বিতর্কে না গিয়ে নির্বাচন কমিশন হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। বরিশাল ও খুলনা দুই সিটি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনাদের বর্জন সত্ত্বেও প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ছিল। নির্বাচন নিয়ে মতলববাজদের আনা কোনো কল্পিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

খুলনার তুলনায় বরিশাল জনসংখ্যায় ছোট হলেও নানা কারণে সেখানকার নির্বাচন সারা দেশে আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ছোট চাচা খায়ের আবদুল্লাহ খোকনকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহপন্থিরা খোকনের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে এমন রটনা ছড়িয়ে পড়লেও তা ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট হয়নি। খোকনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি বিতর্কিত অংশের অবস্থান তার প্রতি ভোটারদের সহানুভূতিই বাড়িয়েছে। ৫৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন খায়ের আবদুল্লাহ খোকন।

বরিশালে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে সাধারণ মানুষ যেমন প্রভাবিত হয়নি তেমন তাদের সমর্থকরা কৌশলগত কারণে সায় দেয়নি। তাদের অনেকেই বরিশালে স্বস্তিকর অবস্থান ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া খোকনের জয় চেয়েছেন এমনটিই মনে হয়েছে ভোটের ফলাফলে। হাতপাখার প্রার্থী তাদের নিজস্ব ভোটের বাইরে বিএনপি সমর্থকদের কিছু ভোট টানলেও তা জেতা দূরের কথা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যথেষ্ট ছিল না। বরং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে খোকন বিএনপি সমর্থকদের সমর্থন পেয়েছেন।

খুলনায় তালুকদার খালেক জিতবেন এটি ছিল প্রায় সর্বসম্মত এক ধারণা। নিজের ভোটব্যাংকের পাশাপাশি দলীয় ভোট পেয়েছেন তিনি। বিএনপি ভোট বর্জন করায় মেয়র নির্বাচন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। দেশের দুই সিটি করপোরেশনে দল বা প্রার্থী নয়, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হওয়ায় গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। এর আগে

গাজীপুরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কৃতিত্ব দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা গৃহিণী জায়েদা খাতুন ১৬ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও তাতে দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সাড়া পড়েনি। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে ইভিএমের ভোটে ধীরগতি সত্ত্বেও প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা একজন সৎ ও ত্যাগী নেতা। কিন্তু টঙ্গী ও গাজীপুরের দ্বন্দ্বে গাজীপুরের ভোটারদের একটি বড় অংশ তার পক্ষে না আসায় বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিজয়ী প্রার্থী জায়েদা খাতুন জয়ী হয়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা হিসেবে। শিল্পনগরী গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে হারলেও ক্ষমতাসীনদের জন্য সান্ত্বনা এতটুকু প্রদত্ত মোট ভোটের সিংহভাগই পেয়েছেন সরকারপক্ষীয় দুই প্রার্থী। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন দেশবাসীর কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে তা ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন হলো জনগণের উৎসব। নির্বাচনে দল বা প্রার্থী নয়-সুষ্ঠু ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে যেন গণতন্ত্রের জয় হয়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া উচিত।

আমরা আশা করব নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে দেশে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলো কোথায় কোথায় ত্রুটি সে বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরবে। কারচুপির পথ বন্ধে প্রতিটি নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটি সম্ভব হলে কোনো প্রার্থী এবং তার সমর্থকদের পক্ষে যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র রাহুমুক্ত হবে।

লেখক: প্রবন্ধকার সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসআর

খোলামত,বাংলাদেশ,গণতন্ত্র
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close