• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

'খোলা চোখে যা দেখছি'

প্রকাশ:  ০৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০২
মনজুর রশীদ

এই লেখাটা লিখতে গিয়ে যদি বলতে পারতাম- "এ লেখার সমস্ত কিছুই কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। কেউ যদি মিল খুঁজে পান, তাহলে তা অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয় ঘটনা মাত্র!" তাহলে নিজেই খুশী হতাম। কিন্তু তা কি বলতে পারবো?

এক আজব দেশে আমার মতো এক আবুলের জন্ম। কিছু পছন্দ না হলেও বলতে হবে খুব পছন্দ। ভালো না লাগলেও বলতে হবে খুব ভালো। কোন কিছু অন্যায় মনে হলেও বলা যাবেনা ভারী অন্যায়। চুরি, ডাকাতি, ভয়ংকর অথবা ছিঁচরে চোরদের দূর্নীতি নিয়ে কথা বলাও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কদাচিৎ ব্যতিক্রম থাকলেও থাকতে পারে, তবে এখানে পাবলিক সেক্টরে কোথাও ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয়না এ কথা যেমন বলা যাবেনা, আবার সরকারি বা বেসরকারি সেবাখাত সমূহ থেকে কোন পরিষেবা না পেলেও কাউকে অভিযুক্ত করার কোন সুযোগ নেই! বরং আরও বিপদগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে!

সম্পর্কিত খবর

    সেই আজব দেশে প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয় নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের, শিশুদের ওপর চরম অমানবিক আচরণের, সংখ্যালঘু বিধায় শিক্ষকের ওপর আক্রমণ এমন কী জুতার মালা পড়ানো ইত্যাদি। অথচ, এসবের বিরুদ্ধে যাদের সোচ্চার হওয়ার কথা সেসব তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীদের আর আগের মতো এ নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়না! সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও আদিবাসীদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ আধিপত্যবাদি ও ক্ষমতাশীলদের নগ্ন হামলার কথা মাঝে মাঝে খবর হয়ে প্রকাশিত হলেও আগের মতো কোন সমন্বিত প্রতিবাদ আর দেখা যায়না! শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতেও চলছে কেবল তোয়াজ করা। আর এই তোয়াজ করতে গিয়ে তথাকথিত প্রগতিশীলদেরকে এখন আর যে কোন অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা যায়না! অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বেশীরভাগই মোসাহেবির জায়গা দখল করে নিয়ছে!

    যখন তখন এখানে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয় একটা সিন্ডিকেট। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারও এতে প্রচন্ড ক্ষুব্ধতা দেখায়, কিন্তু কেউ নাকি এদেরকে ধরতে পারেনা! নিয়মিত বিরতিতে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি করা এখানে স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ এ নিয়ে কিছু বলা যাবেনা! যারা নিয়মিত ভাবে সরকারকে কর প্রদান করে, তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়, আর যাদের দেয়াটা বাধ্যতামূলক তাদেরকে সনাক্তই করা যায়না! জনগণের টাকা চুরী করে হাজার হাজার টাকা বিদেশে পাচার করলেও তাদেরকে শাস্তির বদলে কিছু জরিমানা দিয়ে দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেয়া হয়! শহরজুড়ে মারাত্মক জনভোগান্তি তৈরি করে বছরের পর বছর ধরে বড় বড় রাস্তা বানানো হয়, উড়ন্ত সেতু ও মেট্রো পথ তৈরি করা হয়, কিন্তু জনগণের চলাচলের জন্য আধুনিক ও ন্যূনতম গণপরিবহনের কোন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়না! কিছুদিন পর পর শুনতে হয় জনগণের মাথাপিছু আয় অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে চলেছে। অথচ চারদিকে শুনি আয়-উপার্জন থমকে গেছে, দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা এখন যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী! সবকিছুর দাম বাড়িয়ে জাতীয় বাজেটে হেলিকপ্টার আর মুড়ির দাম কমিয়ে জাতির সাথে পরিহাস করা হলেও এ নিয়ে কেউ কোন কথা বলেনা !

    সবাই বলে দেশের সব জনগণ তাদের সাথে আছে। অথচ যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের কোন অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। সবাই শুধু বিশেষ মহলকে সন্তুষ্ট করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত! স্তুতি, স্তাবকতা আর বন্দনায় জাতি সর্বকালের রেকর্ড নাকি ইতিমধ্যেই ভেঙ্গেছে! একারণেই শত-হাজার কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ বা দূর্নীতি করেও যখন ফেরেশতারুপী কোন নেতা হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে নিঃসংকোচে বলে - কোনো ভাবেই অসততা ও দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবেনা, তখন বিরাট একদল সুবিধাবাদি জনতা করতালি দিয়ে তাকে আবার অভিবাদন জানায়। ভোট নিয়ে এদেশে কি হয়েছে বা হচ্ছে - তা সবার জানা। অথচ, সবাই এখানে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। আর সুবিধাবাদি সকল মহল কারণে-অকারণে প্রশংসার আতশবাজি ছড়াচ্ছে! নির্লজ্জের মতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়েও এখানে নেতারা গণতন্ত্রের কথার ফুলঝুরি ফোটায়! এখানকার বুদ্ধিজীবীরাও সারাক্ষণ তৈলমর্দনে ব্যস্ত সময় পাড়ি দেয় এবং নিজের ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল করে নেয়ার দৌড়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করে! প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাও এখন রাজনীতিবিদদের চেয়েও বড় বেশী রাজনীতির ভাষায় কথা বলে - যা সমসাময়িক পৃথিবীতে বিরল ঘটনা!

    কি অদ্ভুত, কি বিচিত্র মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখানে। যার যা ইচ্ছা পাবলিকলি বলে যায়, অসুবিধা হয়না। এখানে মত প্রকাশ বড় বাধা নয়, বরং কার বিরুদ্ধে বলছে, সেটা দিয়েই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পরিমাপ করা হয়। কোন কথা অপছন্দ হলে একসময়ে ক্ষমতায় থাকা দু'টি মিত্র রাজনৈতিক দলের অনুসারীর ট্যাগ লাগিয়ে বেকায়দায় ফেলার থেরাপি দেয়া হয়!

    এদেশে বিরোধী দলের ভুমিকাও দেখার মতো! তাদের কাছে জনগনের ইস্যু কোন ইস্যু নয়। মুল নেতারা সব ভিতুর হাড্ডি, আর বিনা ত্যাগে ক্ষমতা ভোগ করতে চায়! দলের প্রধান নেতা চরম অসুস্থ ও কারাবন্দী। যাদেরকে কাছে টেনে নিয়ে তিনি কারাবরণ করছেন, তাদের কারো তেমন কিছু হয়নি। তার অবর্তমানে যিনি এই দলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবে দল পরিচালনা করেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত দেশ থেকে পালিয়ে স্থানীয় সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরকে মহাবিপদের মধ্যে ফেলে দিয়ে বাইরের একটা দেশ থেকে বড় বড় লেকচার দিয়ে থাকেন! এ দলেরও সবার ভরসা জনগণ। তাদের ধারণা জনগণই তাদের প্রধান শত্রু এ সরকারকে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়ে এমনি এমনি তাদেরকে একদিন ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে!

    (চলবে) লেখক- গবেষক ও সমাজ বিশ্লেষক

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close