• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ব্যর্থ মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলেই সম্মানিত হবেন

প্রকাশ:  ০৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০৫
সৈয়দ বোরহান কবীর

বাংলাদেশের সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। বিএনপির হাতেগোনা কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েক মাস আগেই। বিরোধী দল বলতে জাতীয় পার্টি। আশার কথা, সম্প্রতি জাতীয় পার্টি সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে সংসদে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। যার একঝলক দেখা গেল ২৬ জুন সোমবার জাতীয় সংসদে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এক ছোট ঝড় বয়ে গেল সংসদে। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ হলো আলোচনার প্রাণকেন্দ্র। এখানে যত বিতর্ক হবে, যত সরকারের সমালোচনা হবে, ততই গণতন্ত্র সংহত হবে। বিরোধী দলের সমালোচনার ভিত্তিতে সরকার নিজেদের পরিবর্তন করবে, সংশোধন করবে। এটাই সংসদীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সংসদীয় গণতন্ত্র একটি প্রাণবন্ত শাসন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সংসদের আস্থাভাজন নেতা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মন্ত্রিসভা গঠন করেন। মন্ত্রীদের স্থায়িত্ব নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ের ওপর। সংসদীয় ব্যবস্থায় মন্ত্রীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা নির্বাহী বিভাগ এবং জনপ্রতিনিধিদের যোগসূত্র। একদিকে যেমন তাদের কাজকর্মের জন্য নির্বাহী প্রধানের (প্রধানমন্ত্রী) কাছে জবাবদিহি করতে হয়; অন্যদিকে মন্ত্রীরা সংসদেও জবাবদিহি করেন। একজন মন্ত্রী যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিতে পারেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই এটা হরহামেশাই ঘটে থাকে। বাংলাদেশেও বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিতর্কিত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ান ডা. মুরাদ। ডা. মুরাদের ব্যাপার ছাড়া মন্ত্রিসভার রদবদল এবং অযোগ্য মন্ত্রীদের বাদ দেওয়ার ব্যাপারে এবার প্রধানমন্ত্রী অনেক রক্ষণশীল। তিনি মন্ত্রীদের সুযোগ দিতে চান। তারা যেন নিজেদের ভুল শুধরে নেন, তার অপেক্ষা করেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে মন্ত্রীদের ব্যর্থতা জাতির জীবনে দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভাগ্য হিসেবেই আসে। যে দুর্ভাগ্য এখন জাতিকে বহন করতে হচ্ছে। জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। তার আগে মিজানুর রহমান চৌধুরীর মতো নেতাও এক বিতর্কে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পদত্যাগ করেন। ’৭৫-এর পর থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ছিল না। কখনো সামরিক শাসন, কখনো স্বৈরশাসন ছিল। মন্ত্রীরা ছিলেন একনায়কের পদলেহী ক্রীতদাস। ’৯১-এ দেশের প্রথমবারের মতো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। বিএনপি নাটকীয়ভাবে ক্ষমতায় আসে। দেশে আবার সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু হয়। বেগম জিয়ার শাসনামলের শেষভাগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে মন্ত্রিত্ব হারান তৎকালীন সময়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। ’৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার মন্ত্রিসভা রদবদল করেন। একাধিক মন্ত্রীকে অপসারণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামকে। পরে তিনি পদত্যাগ করেন। পাসপোর্ট বিতর্কের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। সেই মন্ত্রিসভায় ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম তাজউদ্দীন আহমদের ছোট ভাই খান আফসার উদ্দিন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনিও পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগ আসলে বরখাস্ত। প্রধানমন্ত্রী নানা কারণেই একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগের পরামর্শ বা নির্দেশ দিতে পারেন। তিনি যদি মনে করেন, ওই মন্ত্রী বিতর্কিত, অযোগ্য কিংবা দায়িত্ব পালনে অক্ষম, সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তাকে সরিয়ে দিতেই পারেন। দেশে দেশে হরহামেশাই এটা হয়। তবে আত্মমর্যাদাবান, বোধবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিবিদরা অনেক সময় নিজেই পদত্যাগ করেন। একজন মন্ত্রী যদি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা তিনি যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না, যদি মনে করেন তিনি ব্যর্থ, প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দিতে পারছেন না, তাহলে সরকারকে বিতর্কিত করার আগে নিজেই পদত্যাগ করেন। এতে দল, সরকার যেমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে না, তেমনি মন্ত্রী নিজেও সম্মানিত হন। তার ইমেজ বাড়ে। মন্ত্রীর আত্মোপলব্ধির জন্য সাধারণ মানুষ তাকে সাধুবাদ দেয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশে এরকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। দায়িত্ববান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের জন্য এটি এক সুবর্ণ সুযোগ। এর মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে নতুন ইমেজে আবির্ভূত হন। স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বড় নজির হলেন, ভারতের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ভারতের স্বাধীনতার পর নেহরুর ঘনিষ্ঠ এ মেধাবী রাজনীতিবিদ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ১৯৫১ সালে ভারতে এক ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনার জন্য কোনোভাবেই শাস্ত্রী দায়ী ছিলেন না। কিন্তু দুর্ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। পদত্যাগপত্রে শাস্ত্রী লিখেছিলেন—‘রেলমন্ত্রী হিসেবে আমি রেলের অভিভাবক। একজন অভিভাবক কোনোভাবেই এ দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারি না।’ তার এ পদত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নেহরু। পার্লামেন্টে শাস্ত্রীর ‘সাহসী’ সিদ্ধান্তকে গণতন্ত্রের এক ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ভারতীয় জনগণের কাছে এ সিদ্ধান্তের পর দেবতায় পরিণত হন শাস্ত্রী। ভারতের গণতন্ত্র যাদের হাত ধরে আজ এ জায়গায় এসেছে, তাদের মধ্যে শাস্ত্রী অন্যতম। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এরকম নজির মাত্র একটিই। ’৯১ সালে বিএনপি সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন শিল্পপতি জহির উদ্দিন খান। বিএনপি শাসনামলে (১৯৯৩-৯৪) তীব্র সার সংকট দেখা দেয়। সারের দাবিতে কৃষকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। কোথাও কোথাও কৃষকদের ওপর গুলি চালানো হয়। সারের দাবিতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন বহু কৃষক। দেশে সার উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এ ব্যর্থতার দায়িত্ব অস্বীকার করেননি জহির উদ্দিন খান। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এ পদত্যাগে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি এখনো একজন ব্যতিক্রমী সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, জহির উদ্দিন খানের দেখানো পথ অনুসরণ করেননি আমাদের রাজনীতিবিদরা। বাংলাদেশে মন্ত্রী হওয়াটা অধিকাংশের কাছে ‘আলাদিনের চেরাগ’ পাওয়ার মতো। খুব কম ব্যক্তিই আছেন, যারা ভাবেন মন্ত্রী হয়েছি, দেশের জন্য কিছু করি। এমন কিছু করি যেন দেশের মানুষ আজীবন আমাকে স্মরণ করে। বরং মন্ত্রিত্বকে অনেকে মনে করেন লটারির টিকিট, আখের গোছানোর শেষ সুযোগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জয় পায় আওয়ামী লীগ। এক-এগারোর ক্ষত বুকে ধারণ করে মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেখান শেখ হাসিনা। আনকোরা, নবীনদের প্রাধান্য দিয়ে সাজান মন্ত্রিসভা। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় সীমাবদ্ধতা ছিল, কিন্তু এক ধরনের চেষ্টা ছিল ভালো কিছু করার। প্রধানমন্ত্রীও এ সময় মন্ত্রীদের কাজকর্মে তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনেন। কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে নিয়ে এসে ড. হাছান মাহমুদকে কাজ করার সুযোগ করে দেন। ২০১৪-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় ফিরে আসেন হেভিওয়েটরা। ২০১৮-এর নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী আবার মন্ত্রিসভার আমূল পরিবর্তন করেন। প্রত্যাশা ছিল নতুনরা সবকিছু উজাড় করে কাজ করবেন। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন। কেউ কেউ যে করেননি তা নয়। গত সাড়ে চার বছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ে অসাধারণ কাজ হয়েছে। একটি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের ইমেজ ভেঙে এ মন্ত্রণালয় একটি জনবান্ধব মন্ত্রণালয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগে বাংলাদেশ বদলে গেছে। পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের উন্নয়নের একেকটি বিজ্ঞাপন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কিছু যুগান্তকারী নীতি ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিবন্ধন এ সরকারের একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর হাত ধরে এক নীরব বিপ্লব সূচিত হয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ অসাধ্য সাধন করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিভীষিকা থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একরম সাফল্যগাথা কম না। কিন্তু এসব সাফল্যের গল্প বিবর্ণ, ফ্যাকাশে হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় পরিস্থিতির কারণে। উন্নয়নের অহংকারে কলঙ্কের কালিমা লেপে দিয়েছে লোডশেডিং। স্বাস্থ্য খাতের নৈরাজ্য সরকারের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হাতেগোনা পাঁচ-ছয়জন মন্ত্রীর অযোগ্যতা, ব্যর্থতা এবং দায়িত্বহীনতা গোটা সরকারের সব অর্জন আজ কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। অথচ এরা নির্বিকার। এরা যে সরকারের কত বড় দায়, কত ভারী বোঝা, তা অনুধাবনেরও বোধশক্তিটুকু নেই অর্বাচীন মন্ত্রী মহোদয়দের। তাদের যে ন্যূনতম বিবেকবুদ্ধি লোপ পেয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ২৬ জুন সংসদে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর সিন্ডিকেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী যে জবাব দিলেন, তাতে আমি বিস্ময়ে হতবাক। তিনি বললেন, ‘বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে জেল-জরিমানা করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ক্রাইসিস আরও বেড়ে যাবে।’ কী আশ্চর্য কথা। তার মানে মন্ত্রী সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়। ওইসব মুনাফালোভী অসৎ ব্যবসায়ীর কাছে মন্ত্রী আত্মসমর্পণ করেছেন। এই যদি হয় পরিস্থিতি, তাহলে মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার কি তিনি রাখেন? সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন কোনো কোনো সংসদ সদস্য। কিন্তু মন্ত্রী বিষয়টি তামাশা মনে করেছেন বলেই মনে হলো। পদত্যাগের দাবিকে নিম্নমানের রসিকতা দিয়ে উড়িয়ে দিলেন। মন্ত্রী কি জানেন, বাজার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। সাধারণ মানুষের জীবন কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে? আর পদত্যাগের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন কেন? তিনি নিজে কেন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়ে সরকারকে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা করেন না। মন্ত্রী বলছেন, তার রাজনৈতিক জীবন ৫২ বছরের। তাহলে জনগণের ভাষা কি তিনি বুঝতে অক্ষম? বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে আর লেখার রুচি হয় না। তিনি কী বলেন আর কী করেন, সেটা তিনিই হয়তো ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু তার কারণে এ সরকার জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। জাতীয় সংসদে যেদিন তিনি দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘সাত দিনের মধ্যে আমরা আবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছি’—ঠিক সেদিন সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় চার থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগ এখন আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমে। বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পায়। লোডশেডিং কমে যায়। এ নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সাফল্যের ঢেকুর তোলেন। কী বিচিত্র। একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসূতি মায়ের ‘হত্যাকাণ্ড’ প্রমাণ করল স্বাস্থ্য খাতও এখন বেসরকারি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। করোনা মোকাবিলায় সীমাহীন ব্যর্থতার পরও এ মন্ত্রী বহাল তবিয়তে ছিলেন, আছেন। সংসদে দেখলাম, অর্থমন্ত্রী একটা আইন কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাব উত্থাপন করতে গিয়েই গলদগর্ম। একজন হুইপ এসে তাকে পড়িয়ে দিচ্ছিলেন। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ। তার প্রতি আমাদের সমবেদনা আছে শতভাগ। কিন্তু তিনি কেন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন না, ‘আমি পারছি না। আমার জন্য আপনার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমি সরে যাই।’ মন্ত্রিত্বে কী মধু আমি জানি না। একজন মন্ত্রী হলে তিনি কিছুতেই চেয়ার ছাড়তে চান না। চেয়ার পরিত্যাগ যেন মৃত্যুর চেয়েও কষ্টদায়ক। অথচ তারা পদত্যাগ করলে দেশ বাঁচে, জনগণ হাঁফ ছাড়ে, সরকার স্বস্তি পায়। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যর্থতার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যিনি পদত্যাগ করেন, তাকেও জনগণ সম্মান দেয়। আমাদের ব্যর্থ মন্ত্রীরা কি নিজেদের আত্মসম্মানটুকুও রক্ষা করতে ভুলে গেছেন?

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

সম্পর্কিত খবর

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close