• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আতঙ্কে মানবাধিকার দিবস

প্রকাশ:  ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫
সৈয়দ বোরহান কবীর

১০ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল মানবাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের পটভূমিতে। পাকিস্তানিদের বৈষম্য, নিপীড়ন, এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন দেশের অভ্যুদয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এই ডিসেম্বর মাসেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আসলে এক মানবতার সংগ্রাম। ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের ওপর যেভাবে হত্যা, লুণ্ঠন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছিল, তা একমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসী বর্বরতার সাথেই তুলনীয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী, দেশীয় রাজাকার-আলবদরদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিবাদ করেছিল বীর বাঙালি। রক্ত দিয়ে এদেশের জনগণ প্রতিষ্ঠা করেছিল মানবিক বাংলাদেশ। আর একারণেই ১৯৭২ এর সংবিধান প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে মানবাধিকারের কথা।

কিন্তু গত দুই বছর ১০ ডিসেম্বর এলেই বাংলাদেশ আতঙ্কে থাকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগে নানা গুজব পল্লবিত হয়। এই আতঙ্কের শুরু হয়েছিল ২০২১ সালে। ঐ বছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ‘এলিট ফোর্স’ র‌্যাবের ৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর ট্রেজারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের ভাষায় ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনা ছিলো আকস্মিক। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। কিন্তু পরবর্তীতে এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আকস্মিক ছিলো না। প্রায় এক বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সেগুন বাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বেশ কিছু তথ্য জানতে চায়। যেমন একটি গুমের তালিকা, যা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্তৃক প্রণীত। এই তালিকায় যাদের নিখোঁজ বলে দাবি করা হয়েছে, তাদের অবস্থান কি? বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো। বিশেষ করে কক্সবাজারে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে ক্রস ফায়ারে দেয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে তার কথোপকথনের অডিও নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা চেয়েছিল। কিন্তু দূতাবাস অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেউই এসব চিঠির জবাব দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। এনিয়ে অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন বলেছিলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা জবাব দেয়নি। ২০২১ এর ১০ ডিসেম্বর মার্কিন ট্রেজারী নিষেধাজ্ঞার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশে সব সময় যা হয় তা হলো একটা দুর্ঘটনা, ক্ষতি কিংবা সর্বনাশের পর শুরু হয় ‘ব্লেইম গেইম।’ সবাই দায় এড়ানোর জন্য অন্যের ওপর দায় চাপাতে চায়, সমস্যার সমাধানের চেয়ে কারো ঘাড়ে দায় চাপিয়ে সবাই দায়মুক্তি চায়। র‌্যাবের ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার পরও একই খেলা শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে ঐ যাত্রায় ‘বাকরা’ হন। চুক্তিতে থাকা এই রাষ্ট্রদূতের চুক্তি বাতিল করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর শুরু হয় তার ঠিকুজী অনুসন্ধান। এতে দেখা যায়, ঐ রাষ্ট্রদূত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। হলে ছাত্রদলের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনও করেছিলেন। তার ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের নেতা ছিলেন। দুবার ছাত্র সংসদের নির্বাচনও করেছেন। এহেন বিএনপি-জামায়াত ঘারনার একজন ব্যক্তিকে কেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় রাষ্টদূত করে পাঠানো হলো? এর দায় কার? এই প্রশ্নে কোন উত্তর নেই।

২০২১ সালে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর হৈ চৈ শুরু হলো। এই নিষেধাজ্ঞা সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টনিকের মতো কাজ করে। তারা মনে করলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর এই সরকারের পক্ষে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর এদেশের সুশীল সমাজের উল্লাস ছিলো চোখে পরার মতো। টকশোতে তাদের কথার দাপটে টেলিভিশন ফেটে যাওয়ার উপক্রম হলো। যথারীতি সরকার ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতের অপ-প্রচার এবং লবিষ্টদের তৎপরতাকে দায়ী করলেন। এটাকে দেশের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী বললেন ‘কোন ব্যাপার না, সব ঠিক করছি।’ পররাষ্ট প্রতিমন্ত্রী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কাজ করার জন্য ‘লবিষ্ট ফার্ম’ নিয়োগের কথাও জাতীয় সংসদে জানালেন। দুবছর কাটলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরের ঐ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব নিকেশ পাল্টে দেয়। এক যুগ পর বাংলাদেশে মার্কিন প্রভূত্ব এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ ছিলো এই নিষেধাজ্ঞা। বলে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। বহু দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এর আগে ইসলামী ছাত্র শিবির, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুল তাহরী সহ একাধিক জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে তার বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এনিয়ে ভারতে বা গুজরাটে মাতম হয়নি। বিজেপি বিপুল ভোটে ভারতের নির্বাচনে জয়ী হলে, মোদি প্রধানমন্ত্রী হন। যুক্তরাষ্ট্র তখন লাল গালিচায় তাকে বরণ করে। কাজেই, এমন না যে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু এবং শুধু বাংলাদেশের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এদেশের সুশীল সমাজ এবং বিরোধীদল নিপুণ দক্ষতায় এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত করে। এর কয়েকদিন পর ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় আসেন পিটার ডি হাস। নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে মার্কিন প্রভূত্বের বন্দনা শুরু হয়ে গেছে। সেই বন্দনাকে গভীর প্রার্থনার পর্যায়ে নিয়ে যান পিটার ডি হাস। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি নানা বিষয় সামনে আসে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সূচকের অগ্রযাত্রাকে আড়াল করে গুরুত্বপূর্ণ করা হয় এসব সুশীল শব্দ গুচ্ছ। এরপর থেকে শুরু হয় আতঙ্ক সৃষ্টি। গত এপ্রিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। যাতে বলা হয়, এদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করলে, তাকে এবং তার পরিবারকে ভিসা দেয়া হবে না। ব্যাস, শুরু হয় হৈ চৈ। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরোপ করা হয়েছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা। আবার হুলস্থুল শুরু হয়। এরপর চালু হয় গুজবের নানা ফ্যাক্টরি। নানা নিষেধাজ্ঞার গল্প ফাঁদতে শুরু করেন দেশের সুশীল আর বিদেশে বসে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার করা সাইবার সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে শক্ত হাতে একজনই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তার নাম শেখ হাসিনা। সব প্রতিকূলতার বিপরীতে সাঁতার কেটে তিনি সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। কঠিন সময়ে তিনি হয়ে উঠেছেন সাহসের প্রতীক। তার কারণেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছে গোটা দেশে। এর মধ্যে ভারতও এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী। সব কিছু বদলানো যায় কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো যায় না। ভারত জানে বাংলাদেশ তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এদেশে কোন ধরনের সরকার আছে তার ওপর নির্ভর করে ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণ। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেকটাই আগ্রাসী তখন ভারতও তার কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। ওয়াশিংটনে এবং দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। একাধিকবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জয়শঙ্কর কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে। ভারতের তৎপতার কারণেই হোক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব কৌশলের জন্যই হোক, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র চুপচাপ হয়ে যায়। কয়েক মাস আগেই যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন, তারা এখন এব্যাপারে রুটিন গৎবাঁধা কথার বাইরে কিছুই বলছে না। এর একাধিক কারণ থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পার্সোনাল ডিপ্লোমেসির’ কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। ভারতের সাথে এই অঞ্চলে ‘কৌশলগত সমঝোতা’র জন্য যুক্তরাষ্ট্র নীরব হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে মধ্য প্রাচ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার পাল্টে দিতে পারে। অথবা এসব কিছুই নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বাংলাদেশ নিয়ে অবস্থান থেকে এতোটুক সরে আসেনি। এই নীরবতাও একটি কৌশল। এদেশের সুশীল সমাজ এবং বিএনপির কিছু কিছু নেতাও শেষের মতামতকেই গ্রহণ করেন। এসময়ে কিছু কিছু মার্কিন পদক্ষেপ এই ধারণার পালে হাওয়া দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছেন, তা বাংলাদেশের ওপর প্রয়োগ হতে পারে। এই আশঙ্কা সুশীলদের নয়। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বাংলাদেশে দূতাবাসের কর্মকর্তার। যদিও বাণিজ্য সচিব এটিকে তুড়িমোড় উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার যে মার্কিন নতুন শ্রমনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ থেকে পাশ হওয়া শ্রম আইনের বিলটিতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেনি। ফলে শ্রম আইন সংশোধন বন্ধ হলো। এই আইন সংশোধন হলে অনেক গুলো শ্রমিক অধিকার সংকুচিত হতো বলে কেউ কেউ মনে করেন। এতে মার্কিন শ্রমনীতির আওতায় বাংলাদেশের পোষাক খাত নিষেধাজ্ঞায় পরার শঙ্কা তৈরী হয়েছিল। একারণেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি শ্রম আইন সংশোধনীতে স্বাক্ষর করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আতঙ্ক বাড়িয়েছে মার্কিন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত। এই শর্তে বলা হয়েছে, ‘কোন নিষেধাজ্ঞা এলে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্রয়াদেশ দেয়া পোষাকের কোন দায় নেবে না।’ তাহলে কি কোন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা থেকেই এরকম শর্ত দেয়া হচ্ছে?

নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল, তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অকার্যকর হয়ে গেছে। কারণ ভিসানীতি যদি প্রয়োগ করতেই হয় তাহলে যারা নির্বাচনে যায়নি, নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিচ্ছে তাদের ওপর প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই যুক্তরাষ্ট্র সেটা করবে না। যুক্তরাষ্ট্র গত দুবছর ধরে বাংলাদেশে যেভাবে নির্বাচন চেয়েছিল, যেভাবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, নির্বাচনের আগেই এই নির্বাচন সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য কূটনৈতিক নিয়ম নীতির মধ্যে পড়ে না। এটা সুষ্পষ্ট ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যা চাইবে তা হবে না, তা কি করে হয়? তাই অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন ঠেকাতে হয়তো তারা শ্রমনীতি এবং মানবাধিকার ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান উৎস পোষাক খাত। পোষাক খাতে যে কোন বিপর্যয় হবে দেশের অর্থনীতির ওপর বড় আঘাত। আবার মানবাধিকার ইস্যুতে যদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, সেটা সরকারের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করবে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই দুই ক্ষেত্রের কোন একটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় তাহলে বুঝতে হবে, এই নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন চিন্তা আছে। ভারতের কূটনীতি বা বাংলাদেশের চেষ্টা কোন কাজে আসনি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের ওপর আরও ভয়ংকর চাপ আসবে। আমরা কেউই জানি না, আসলে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কি। ১০ ডিসেম্বর মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে কি থাকে, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এতে স্পষ্ট হবে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব বাড়ে। ২০২২ সালের মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে তারা বিএনপি-জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিল। বেগম জিয়ার বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ঐ প্রতিবেদনের পর বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা হয়। এবার ১০ ডিসেম্বর মার্কিন প্রতিবেদনে কি থাকছে? এর ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতির গতিপ্রবাহের অনেকখানি।

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

মানবাধিকার দিবস,আতঙ্ক,মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close