• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ভোটের আগে পরের জটিল সমীকরণ

প্রকাশ:  ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪১
নঈম নিজাম

শুনতে ভালো লাগেনি। তার পরও অনেক কিছু আমাদের দেখতে হচ্ছে। নৌকার পাঁচ মাঝির মনোনয়ন বাতিল হলো। আরও অনেকের প্রার্থিতা বাতিলের পথে ছিল।

তাঁরা নিজেদের টেকালেন কষ্ট করে। কেউ কেউ সফলভাবে নিজেদের হাইড করলেন। ধরা পড়লেন না। তাঁরা নিজেরাও জানেন, ধরা পড়লে আম-ছালা সব যেত।

এবার নির্বাচন কমিশন অনেক শক্ত। প্রধানমন্ত্রী একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানে শতভাগ সমর্থন দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীর আবদার-অনুরোধ শুনছেন না প্রধানমন্ত্রী।

তিনি সবাইকে বার্তা দিয়েছেন নিজের অবস্থান দিয়ে জিতে আসতে। কোথাও সরকারি হস্তক্ষেপ হবে না। প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার পুরনো অঙ্গীকারের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। তার পরও অনেক নেতা বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না।তাঁদের কাণ্ডকীর্তি দেখে অবাক হতে হয়। বিস্মিত হতে হয়। প্রশ্ন জাগে- ভোট করার পরিকল্পনা অনেক দিন থেকে নিচ্ছেন, তার পরও নিজেদের কাগজপত্র ঠিক রাখলেন না কেন? সাইবেরিয়ান পাখি হয়ে উড়ে এসেছেন। খুব ভালো কথা। সমস্যা নেই। আপনারা যখন ভালো করেই জানেন, শীতের পর চলে যাবেন না। গ্রীষ্মেও থাকবেন। নৌকা নেওয়ার আগে কাগজপত্র ঠিক রাখলেই পারতেন। আজ বিব্রত হতেন না।

নৌকা পাওয়া গেলেই অটো পাস, এ ধারণা ভুলে যেতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে অনেক হেভিওয়েট মাঝি টের পাচ্ছেন কত ধানে কত চাল। অনেক জননেতা, মন্ত্রী-এমপি ভোটের মাঠ থেকে ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বলেছেন, স্বতন্ত্রের চাপে তাঁদের অবস্থা কাহিল। স্বতন্ত্ররা দাপুটে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা কেউ কেউ এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো পক্ষে যাবেন না। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি-পোস্টারে ব্যবহার করলে আপত্তি করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রশংসা পেয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে- হেভিওয়েটরা এতদিন কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? তারা কি জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন? তারা কি কর্মীদের ধারেকাছে ছিলেন না? জানি পাঁচ বছরে অনেক মন্ত্রী-এমপি নির্বাচনি এলাকায় যাননি। তাঁরা সাক্ষাৎ দেননি ভোটারদের। দেখা করেননি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। এতদিন শুনেছি এখন বাস্তবে দেখছি। অনেকের এপিএস-পিএসরা ছিলেন নির্বাচনি এলাকার অঘোষিত এমপি। টিআর, কাবিখা, চাকরিবাকরি তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতেন; আর বদনাম হতো এমপি সাহেবের। অনেক নেতা নিজের এলাকায় দলীয় কমিটি বাণিজ্যও করেছেন। স্থানীয় সরকারে মনোনয়ন বাণিজ্যও তুঙ্গে ছিল। ভোট করতে নেমে তাঁরা এখন বিপদে আছেন। ৭২টি আসনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টেনে নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের সুন্দর আগামী রাজনীতির স্বার্থে ৩০০ আসনেই এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দরকার ছিল। তবে ৩০০ আসনে শক্ত স্বতন্ত্র থাকলে ফল কী হতো? বিপদে থাকতেন এখন শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলা অনেক নৌকার প্রার্থী। বাস্তবতা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

অনেক বড় নেতা এখন টের পাচ্ছেন ভোট মানে ঘরে বসে আসমানি বিজয় নয়। অনেক বড় মন্ত্রীকে দেখেছি, তাঁদের এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। কেউ কেউ পড়েছেন নফল নামাজ। ভোট একটা উৎসব। শেখ হাসিনা এ দেশে ভোট ও ভাতের আন্দোলন করেছেন। কতিপয় ব্যর্থ নেতার দায়ভার বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে কেন সারা জীবন নিতে হবে? জোট-মহাজোটের নামে আরেক দল এলাকাবিচ্ছিন্ন জাতীয় নেতাও ভোটের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিতে চান। নিজেরা গত ১৫ বছর ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে। এখন রাজনীতির মাঠে সামান্য চাপটুকু নিতে মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন দাবিদারদের কষ্ট হচ্ছে। তার পরও আসন নিয়ে লোভের সীমা নেই, শেষ নেই। জিততে পারবেন না একটা, চান ১১টা। সারা জীবন আদর্শ ও শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলে অনেকে নিজের স্ত্রীকে এমপি করেছেন। বঞ্চিত করেছেন দলের নেতাদের। সুযোগ পেলে তাঁরা পুত্র-কন্যাদের জন্যও আসন নেবেন। দল আর আদর্শের কথা মাঠের ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছু নয়। গণমানুষের কথার দাবিদারদের রাজনীতি শেষ বয়সে প্রশ্নবিদ্ধ। এই জনবিচ্ছিন্ন জোটের লোভের বলি বারবার আওয়ামী লীগ কেন হবে? আসন নিয়ে এত কথার কী আছে জোটের শরিকদের? সামান্য অবস্থান থাকলে একটা ভোট নিজের মার্কা নিয়ে করে দেখান দেশবাসীকে। তারপর জাহির করুন নিজেদের বিশালত্বের কথা।

ভোটের রাজনীতির হিসাব অনেক জটিল। বিএনপির একজন নেতাকে বললাম, এবার ভোটে এলে ভালো করতেন। আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা ছিল না। নেতারা হাত-পা ঝাড়া, কর্মীরা ছিল চাঙা। সারা দেশে সভা-সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ভালো ছিল। ভালোই জমিয়েছিলেন। তার পরও কেন ভোটে এলেন না? কেন বিশাল জনসভা ডেকে পুলিশ মেরে, সাংবাদিক পিটিয়ে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করে সরে পড়লেন? জবাবে সেই নেতা বললেন, এবার বিএনপি ভোটে এলে ভালো করত আমরাও বুঝি। দলের সব নেতা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তার পরও কেন এলেন না, সেই নেতা কিছু বললেন না। অথবা বলতে চাননি। কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতি চলছে। এবার ৩০০ আসনে বিএনপির ২ হাজার নেতার প্রস্তুতিও ছিল এমপি হওয়ার। তার পরও ভোটে না আসার কারণ ভিন্ন। বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো মুক্ত হননি। তিনি অসুখে কাবু। বেশির ভাগ সময় থাকেন হাসপাতালে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে। ভোটে এলে বিএনপি ১০০ আসনের কমবেশি পেত। ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রে বিরোধী দলও ক্ষমতার অংশ। বিরোধী দলের নেতা মন্ত্রীর মর্যাদা পান। উপনেতার রয়েছে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সব সুযোগসুবিধা। এবার আন্তর্জাতিক মহলের সতর্ক অবস্থানে সারা দেশের ভোটের পরিবেশ-পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। আবারও বলছি, এ পরিবেশে বিএনপি এলে ভালো করত। এমপিদের অবস্থান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনেক ওপরে। এখানে সরকারি বা বিরোধী কোনো কিছু লেখা নেই। তারা ১০০ আসনের কমবেশি নিয়ে বিরোধী দল হলে ঘরে-বাইরে শক্ত অবস্থান নিতে পারত। মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের নেতা হিসেবে মাঠ চষে বেড়াতে পারতেন। আরেকজন উপনেতাও কাজ করতেন। ১৯৯১ সালের মতো প্রাণবন্ত একটা সংসদ পেত জাতি। সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ আবার ফিরে আসত। বিএনপিকে আর মামলায় পড়তে হতো না।

বিএনপি কেন বুঝল না আন্তর্জাতিক মহলের চোখ এড়িয়ে এবার ইসি কিছু করতে পারত না। প্রশাসন স্যাংশনের ভয়ে থাকত সঠিক লাইনে। চাঙা অবস্থানে থাকা বিএনপি কর্মীদের শক্ত অবস্থানের ভিতরে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ ভোট করতে বাধ্য থাকত। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানালেন, বিএনপি ভোটে এলে সার্বিক রাজনীতি চলে যেত জিয়া পরিবারের বাইরে। মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের নেতা হয়ে পতাকা ওড়াবেন এটা জিয়া পরিবার মানবে কেন? আরেকজন উপনেতা হয়ে ঘুরে বেড়াবেন তা কার ভালো লাগবে? দলের এই কঠিন সমীকরণ অনুধাবন করেই বিএনপিকে ভোটে যেতে দেননি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে বিএনপির লাভ না লোকসান সময় বলে দেবে। বর্তমান কঠিন বাস্তবতায় চাঙা সংগঠনটি আবার আন্ডারগ্রাউন্ডে। বেশির ভাগ নেতা নাশকতার মামলায় সাজার মুখে। হরতাল, অবরোধ ডেকে নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকেন না। মানুষের দুর্ভোগে তাদের কিছু যায় আসে না।

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বললেন, বিএনপির ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে সরকারি দল তাদের ডেকে এনে ক্ষমতায় বসাবে। চেয়ারে বসিয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটাবে। তারা অতীত ভুলে গেছে। রাজনীতিতে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। তখন ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রতিহিংসার রাজনীতির ভয়াবহতায় জাতির পিতার জন্য মিলাদ মাহফিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে করতে পারেননি শেখ হাসিনা। রাস্তায় বসে তিনি বাবা, মা, ভাইসহ ’৭৫-এ নিহত সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পড়েছিলেন। সেই ইতিহাস তিনি ভুলে যাবেন? আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কীভাবে অতীত মুছে ফেলবেন? ইতিহাস মনে রাখতে হবে সবাইকে। শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয় এ দেশে। কারা সে কাজ করেছিল? কারা বঙ্গবন্ধুর খুনি হুদা ও রশীদকে সংসদে এনেছিল? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার খলনায়ক কারা? সংসদে বিরোধী দলের নেতাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা সারা দুনিয়ায় নজিরবিহীন। ২১ আগস্ট ও চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্রের মাস্টারমাইন্ড হারিছ চৌধুরী স্বেচ্ছায় নিখোঁজ রয়েছেন ওয়ান-ইলেভেন থেকে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেলে অনেক রহস্য জানা যেত। বোঝা যেত মূল মাস্টারমাইন্ডের সব চক্রান্ত।

চক্রান্তের রাজনীতির পরিণতি কখনো ভালো হয় না। তার পরও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক একটা বিষয়। সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারি ভোট হয়ে যাবে। ভোটের পর সরকার গঠনেও কোনো বাধা দেখি না। তবে ভোটের পর আগামী পাঁচ বছর সতর্ক থাকতে হবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। ষড়যন্ত্র থামবে না, বরং বাড়বে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেষ করার চক্রান্ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ভিতর দিয়ে শুরু হয়েছে। এখনো তা চলছে। বাংলাদেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি দেশবিদেশের অনেকের ভালো লাগছে না। এভাবে বিশ্বকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা থামানোর চেষ্টা হবে। দেশি-বিদেশি কুচক্রীরা সক্রিয় থাকবে। তার পরও তাদের সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া কঠিন কিছু না। আইনের শাসন ধরে রাখতে হবে। লাগাম টানতে হবে ব্যাংকিং খাতের মাফিয়াদের। এমপি-মন্ত্রীদের সম্পদের পরিমাণ এভাবে যাতে না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের একটি রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দলটিকে নিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সময় পাননি।

আজ তাঁর মেয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুন মর্যাদার আসনে নিয়েছেন। উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় রেখেছেন চমক। বাংলাদেশের চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন এখন সবারই চোখে পড়ছে। বিশ্ব অবাক হয়ে সমৃদ্ধির একক নায়ক শেখ হাসিনাকে দেখছে। প্রশংসা করছে। তাঁর কাছ থেকে শিখছে কী করে কঠিন সময় পার করতে হয়। সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বদলে দিতে হয় একটি দেশকে। ধরে রাখতে হয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। অবাক দৃষ্টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও বলতে বাধ্য হচ্ছে, এ দেশ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। সারা বিশ্বের জন্য উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। এ দৃষ্টান্ত ধরে রাখতেই আগামী পাঁচ বছর দরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতার। একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব কঠিন বাস্তবতা মোকাবিলা করে বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা সমুন্নত রাখা। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। তিনিই ধরে রাখবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শুধু সতর্ক থাকতে হবে কতিপয় অর্বাচীনের কর্মকাণ্ডে যাতে কোনো কিছু বিঘ্নিত না হয়। ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বাংলাদেশের এগিয়ে চলা।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

নঈম নিজাম
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close