• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

মামা-ভাগ্নের নির্বাচনে ধান কাটার উৎসব

প্রকাশ:  ১১ মে ২০২৪, ০০:৪৩
সৈয়দ বোরহান কবীর

দেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ সংকটে চেয়েও বড় অস্থিরতা হলো জিনিস পত্রের দাম। অস্থির সময়ে মানুষের জন্য বিনোদনের কোন খোরাক নেই। তবে প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল মানুষের জন্য অস্বস্তির তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির মতো, বিনোদনের খোরাক যোগালেন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলার নির্বাচনের পর সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘ধান কাটার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেননি।’ নিষ্প্রাণ উপজেলা নির্বাচনে সিইসির বক্তব্যই একমাত্র চমক।

সম্পর্কিত খবর

    উপজেলা নির্বাচন উত্তেজনাহীন হয়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি। আগে উপজেলা নির্বাচনগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা ছিলো, স্থানীয় জনগণের মাঝে নানারকম হিসেব-নিকেশ এবং মেরুকরণ হতো। এবার তেমনটি হয়নি। সবাই জানে কেন উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিলো। প্রতিপক্ষহীন খেলা কখনও উত্তেজনাপূর্ণ হয় না। দর্শকদের আগ্রহও থাকেনা। বিরোধীদল হীন নির্বাচনও ভোটারদের জাগাতে পারেনা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেই নানারকম বেসামাল কথা-বার্তা বলতে হয়। কাজী হাবিবুল আউয়াল এতোদিন অনেকটাই সংযত ছিলেন। কিন্তু এখন তার সংযমের বাঁধ সম্ভবত ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা নির্বাচন যখন হচ্ছিল তখন কত নির্বাচনী এলাকায় ধান কাটা চলছিল সে হিসেব কি কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে আছে? তিনি কি জানেন, ধান কাটার জন্য কতজন কৃষক নিয়োজিত থাকেন?

    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ শুমারীতে সরাসরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কত সে হিসেবটা নিশ্চয়ই সিইসির জেনে নেয়া উচিত ছিলো। কিন্তু ধান কাটার উৎসব হোক বা আম পাড়ার উৎসবই হোক, বাস্তবতা হলো উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ ছিলো না। তার প্রধান কারণ হলো, এ নির্বাচনে বিরোধী পক্ষ অংশগ্রহণ করেনি। বিরোধী পক্ষ ছাড়া নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় না সেটি বারবার প্রমাণিত, আর এটিই বাস্তবতা। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এই নির্বাচনেও যেন একাধিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাঁড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর সেই সুযোগ নিয়ে এবার নির্বাচনের উৎসব হয়েছে ‘মামা-ভাগ্নের নির্বাচন’।

    নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার কথাই ধরা যাক। এখানে নির্বাচন হয়েছে প্রথম ধাপে। এই উপজেলার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী এবং কবির হাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার শিউলির ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চৌধুরী। সাবাব চৌধুরী নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে ৩৭,৬৪৮ ভোট পেয়েছেন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বর্তমান চেয়ারম্যান দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম সেলিম পেয়েছেন ৩৬,৯৪৫ ভোট। ৭০৩ ভোটের ব্যবধানে মামাকে হারিয়ে দিয়েছেন ভাগ্নে। স্থানীয় রাজনীতিতে অধ্যক্ষ এএইচএম খায়রুল আনাম সেলিমকে মামা ডাকতেন সাবাব। ‘মামা-ভাগ্নে নির্বাচনে’ ভাগ্নে জিতেছে, মামা হয়েছে কুপোকাত। এভাবে সারাদেশেই উপজেলা নির্বাচন এখন মামা-ভাগ্নের নির্বাচন। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল এমপি-মন্ত্রীরা যাতে আত্মীয় স্বজনদেন প্রার্থী না করে। ধারণা করা হয়েছিল যে, একরামুল করিম চৌধুরীদের মত ব্যক্তিদেরকে নিশানা করেই আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল।

    প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, একই পরিবারের সবাই যদি সবকিছু দখল করে তাহলে কর্মীরা কি করবে। নোয়াখালীতে তাই ঘটেছে। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী আর ছেলে হলেন সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান। ফলে নোয়াখালীতে একরামুল করিম চৌধুরীর রাজত্ব এখন ঠেকায় কে। শুধু যে নোয়াখালীতে এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেই এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের লড়াই হয়েছে। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাদের কুপোকাত করে দিয়েছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের এই প্রীতি ম্যাচে ৩৬ শতাংশ ভোট তো অনেক বেশী।

    একটি নির্বাচনে সাধারণ মানুষ বা ভোটাররা কেন ভোট দেবেন? সাধারণত মানুষের সামনে যখন অনেকগুলো বিকল্প থাকবে তখন মানুষ ভোটের মাধ্যমে একটি বিকল্প পছন্দ করে নেবেন। নানা মত, নানা পথের যে বৈচিত্র্য, সেই বৈচিত্র্যই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। যদি সকল রাজনৈতিক দল একই মতামত প্রকাশ করে, অভিন্ন চিন্তাভাবনার অনুসারী হয় এবং ক্ষমতাই যদি তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয় তাহলে সেটা গণতন্ত্র হয়না, তাতে মানুষেরও আগ্রহ থাকেনা। বিরোধী দল লাগাতারভাবে নির্বাচন বর্জনের ফলে এরকম একটি পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়েছে। বিএনপি কেন উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলো সেটি একটি বড় প্রশ্ন। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকে যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘণ করে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু দলের বিদ্রোহীরা বহিষ্কারাদেশ মাথায় নিয়েই নির্বাচন করেছেন। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দেখা গেছে যে ৭ টি উপজেলায় বহিষ্কৃতরা বিজয়ী হয়েছেন। যদি বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে এ বিধি নিষেধ আরোপ না করতো তাহলে নির্বাচনগুলো আরো উৎসবমুখর হতো এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়তো। সবচেয়ে বড় কথা হতো ভোটারদের সামনে ভালো মন্দ বাছাই করার সুযোগ তৈরি হতো। যেসমস্ত উপজেলাগুলোতে বিএনপির প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন সেই উপজেলাগুলোতে ভোটার উপস্থিতি অনেক বেশি ছিলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। এখানে ভোটের হার অন্যান্য উপজেলাগুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি। বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, যখন একটি বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে থাকে তখন সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ে। দুপক্ষের প্রচারণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী একটি আবেগ বা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। কিন্তু যখন নির্বাচনটি শুধু হয়ে যায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিষয় বা প্রীতি ম্যাচের মত, নির্বাচন যখন মামা-ভাগ্নের লড়াইয়ে পরিণত হয় তখন মানুষ নিজেকে অধিকারহীন ভাবে, মানুষ ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নির্বাচনের ফলাফল তার জীবন এবং ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আনবে না, এরকম একটি বোধ তাদের মধ্যে প্রোথিত হয়। আর এরকম একটি পরিস্থিতির কারণেই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।

    এজন্য দায়ী কে? ক্ষমতাসীন দল, নির্বাচন কমিশন নাকি বিরোধী রাজনৈতিক দল? ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রকাশ যাতে ভোটের মাধ্যমে হয় সেটির জন্য একটি অনুকূল আবহ সৃষ্টি করা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা, প্রশাসন যেন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে তা নিশ্চিত করা। অবাধ ও সুষ্ঠু উপজেলা নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের এ ব্যাপারে কোন ঘাটতি ছিলোনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকভাবে চেয়েছেন উপজেলা নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। তবে ভালো উদ্যোগ ভন্ডুল করতে আওয়ামী লীগে অতি উৎসাহীদের অভাব নেই। আওয়ামী লীগের ভেতর যারা ‘জমিদারতন্ত্র’ কায়েম করতে চায়, এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, নির্বাচনী এলাকায় জনগণকে পায়ের নীচে রেখে লুটপাটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পুরোপুরি বিপক্ষে। নির্বাচন মানেই তাদের কাছে গদী দখল, একারণেই তারা ‘মাই ম্যান’-দেরকে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী করেছে, অনেকে ‘মাই ম্যান’দেরকে ভরসা করতে পারেনি। তারা আত্মীয় স্বজনদেরকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করে এলাকা দখল এবং কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মিশনে নেমেছে। যদিও আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলো, কিন্তু আওয়ামী লীগের এই নির্দেশনা মাঠে বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ মন্ত্রী-এমপিরা এখন এতই ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন যে, তারা দলের নির্দেশনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছেন। যদি শেষ পর্যন্ত উপজেলাগুলোতে আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থীতা না দিতেন তাহলে উপজেলা নির্বাচনটি আরো প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর হতো বলেই আমি মনে করি। কারণ এর ফলে অন্য প্রার্থীরা সমান সুযোগ পেতেন, ভোটারদের কাছে যেতেন। যেসস্ত নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি এবং আত্মীয় স্বজনরা প্রার্থী হয়েছেন সেসমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা হয়েছে, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা হয়েছে, ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ফলে ভোটাররা কুণ্ঠিত হয়েছেন। এতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ তারা হারিয়ে ফেলেছেন। কাজেই আওয়ামী লীগ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলেও মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শুভ চিন্তাকে ভুলুণ্ঠিত করেছে কিছু লোভী, অপরিণামদর্শী মন্ত্রী-এমপি এবং প্রভাবশালী নেতা।

    নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যে আন্তরিক, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা চেষ্টা চালিয়েছিলো। কিন্তু মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র রেফারি মাত্র। নির্বাচনের আসল খেলোয়াড় হলো ভোটার রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীরা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে না পারে, প্রার্থীরা যদি জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না নিয়ে যেতে পারে তাহলে শুধু নির্বাচন কমিশনের একা কিছু করার নেই। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের তদারকি করতে পারে মাত্র।

    এবার বিরোধী দলের দায়িত্ব কতটুকু তা একটু খতিয়ে দেখা যাক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দলের যতটুকু দায়িত্ব ঠিক ততটুকু দায়িত্ব বিরোধী দলেরও। আধুনিক গণতন্ত্রে মনে করা হয় ক্ষমতাসীন দলের চেয়ে বিরোধী দলের দায়িত্ব অনেক বেশী। কারণ সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দেয়া, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা সামনে নিয়ে এনে, সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করাই বিরোধী দলের প্রধান কাজ। আর একারণেই আধুনিক গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ‘ছায়া সরকার’ গঠন করে। এই ছায়া সরকারের মাধ্যমেই তারা সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে এবং জনগণের কাছে তা তুলে ধরে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। কিন্তু আমাদের বিরোধী দলগুলো কি করছে? সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি এখন আস্তে আস্তে অস্তিত্বের সংকটে বিলীন প্রায়। এই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে জাগরণ তৈরি করার কোন চেষ্টা তারা করেছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। উপজেলা ব্যবস্থাটি জাতীয় পার্টির সৃষ্টি। এই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির আলাদা আবেগ থাকার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে শুধু ম্রিয়মানই দেখা যায়নি, জাতীয় পার্টির অনীহা ছিলো চোখে পড়ার মতো।

    বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন না করে যত না ভুল করেছে তার চেয়ে বেশি ভুল করেছে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে। কারণ এ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলকে সংগঠিত করার সুযোগ ছিল বিএনপির সামনে। বিএনপি তাদের নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটিয়ে তোলার জন্য উপজেলা নির্বাচনকে ব্যবহার করতে পারতো। আর উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি যদি দলগতভাবে অংশগ্রহণ করতো তাহলে রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের জন্য তারা একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারতো। কিন্তু বিএনপি সে পথে হাটেনি। এটি কি বিএনপির রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত নাকি ইচ্ছে করেই এটি করেনি? আমার বিবেচনায় এটি বিএনপি ইচ্ছে করেই নির্বাচন বর্জনের পথে হেটেছে। এটি তাদের কৌশলগত অবস্থান। কারণ বিএনপি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাঁধাগ্রস্থ করতে চায়। গণতন্ত্রকে ধ্বংসের বড় উপায় হলো নির্বাচন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলা। ভোটারদের অনাগ্রহী করা এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে জনগণের মধ্যে অনীহা সৃষ্টি। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি নিবিড়ভাবে সে কাজটি করে যাচ্ছে। আর সেকারণেই আস্তে আস্তে নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন মামা-ভাগ্নের নির্বাচনে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। উপজেলা নির্বাচন তার সর্বশেষ প্রমাণ। আর নির্বাচন গুরুত্বহীন হলেই অগণতান্ত্রিক শাক্তি সুযোগ পায়। অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের পায়তারা করে। বিএনপি হয়তো গণতন্ত্রের কবর রচনা করে এরকম একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই তৃতীয় পক্ষের হয়ে কাজ করছে। সব নির্বাচনকে তারা তামাশা বানানোর চেষ্টা করছে।

    সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

    ই-মেইল: [email protected]

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close