• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইমেজ আর আমেজের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৯
তাশরিক সঞ্চয়

ওষুধের ফার্মেসি থেকে চেয়ে নেয়া কাগজের বাক্সের মাঝখানে ছোট সাইজের হারিকেন অথবা হ্যাজাক লাইট বসিয়ে আলো-ছায়ার খেলায় তৈরি করা প্রতীক প্রদর্শনী, মোটা কাগজ প্রতীকের মতো করে কাটা। কখনো বাজারে-বাজারে পুরুষদের জন্য, আবার কখনো গ্রামের মেয়েরা বাড়ির উঠোনে নারীদের জন্য প্রদর্শনী করতেন। সাধারণত সন্ধ্যার পরপরই এই আয়োজন, হাটের দিনে মাইকে প্রতীক আর প্রার্থী নিয়ে 'কবি গান'। এমনকি বিক্রিও হবে কবি গান ছাপানো কাগজ! মেঠোপথে খালি পায়ে, কেউ-কেউ পাদুকা হাতে নিয়ে শত-শত মানুষের মিছিল, ধুলো ওড়া পথে টর্চের আলো।

নারী-পুরুষে সম্মিলিত টিম বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বাড়িবাড়ি ভোট চাওয়া, সম্পর্ক উন্নয়ন করা। সভা-সমাবেশ খুব একটা না, তবে পাড়ায়-পাড়ায় কর্মীদের উদ্যোগে দিনে অন্তত একবেলা নান্দনিক মিছিল। রাতে দলে দলে ভাগ হয়ে বাড়ি-বাড়ি ভোট চাওয়া, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হাড়ি ভরে জ্বাল করা আঠা আর খেজুর গাছের ডাল ছেঁচে বানানো ব্রাশ দিয়ে তরুণ-তরুণীর পোস্টার সাঁটানো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর কর্মী সমর্থকদের বাড়ির সামনে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বানানো প্রতীক। লোকালয়ের পুরুষ জমায়েতের জায়গাগুলোতে বিড়ি-পান-চা আর খোশমেজাজের গল্প। প্রচার অফিসগুলোতে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা ছোট্ট মাইকের হর্ণে ভেসে আসা দেশাত্মবোধক গান। এগুলো মূলত এই উপজেলাটির ৮০'র দশকের বিভিন্ন ভোট মৌসুমের কথা। তারও আগে হয়তো আরও অন্যরকমের ছিলো।

এখনকার সময়ের চাইতে কত পিছিয়ে ছিলেন সেই সময়ের রাজনীতিক আর সমাজকর্মীরা, তাই না! তবে কতটা পিছিয়েছিলো ভোট উৎযাপন ও অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি, নাকি তখনই ছিলো সমৃদ্ধ ও সমন্বিত আয়োজন, তা কেবল ইতিহাস বিশ্লেষকেরাই বলতে পারবেন।

এখন সামাজিক যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ফেসবুকে সরগরম ভোটের চকমকে পোস্ট, মোটরগাড়ির শোভাযাত্রা, হালকা স্লোগানে মোটা হুল্লোড় আর বিকট হর্ণ, চলতি পথ তো কি আর করা!

ভাড়াটে মাইকে যন্ত্রের রেকর্ডিং, পেশাদার পোস্টার সাঁটানোর টিম, সভা, সমাবেশ আর তার ঠিক কাছাকাছি রকমের গণসংযোগ। প্রিন্টিং প্রেসের লিফলেট বিতরণের ফটোশুট। সাধারণের কাতারের কেউ কেউ আবার দুঃখ করে সুর টানেন- "বড়ই কমার্শিয়াল"!

চলতি দশকে হোক সে যে ভোটই, খুব কম ভোটারের কাছেই ভোট চাওয়া হয়! মানে ম্যান টু ম্যান। আর প্রচার-প্রচারণা থাকে এলাকা জুড়ে। ভোট চাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে ফেসবুক,পোস্টার আর মাইকের প্রচার।

বিভিন্ন পদে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার এই দৌলতপুর উপজেলায় প্রতিদ্বন্দীতা করছেন ডজনের বেশি সংখ্যক প্রার্থী।

প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতা টুকটাক চলছেই। ঘটছে ফাঁসানো-ঠাসানো খেলাও। সবই ঘটছে মূলত চেয়ারম্যানের চেয়ারকেন্দ্রীক। গেল ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুষ্টিয়া-১ আসনটির নৌকা মনোনয়ন নিয়ে যেমন আলোচনা আর নাটকীয়তা তৈরি হয়েছিলো, একেবারে ব্যাক টু ব্যাক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা'র মনোনয়ন নাটকীয়তায় নাম করেছে আরও। ক্ষমতাসীন দলের সাবেক দুই এমপি পরিবারের হেভিওয়েট দুই নেতা রয়েছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অন্যান্যদের মধ্যে। এই নিয়ে ভোটের হাওয়ায় অনেকটা উথাল-পাথাল ছন্দ দৌলতপুর আওয়ামী লীগে। হেভিওয়েট নেতারা দ্বিধায় পড়েন একই দলের দুই নেতার চূড়ান্ত প্রার্থীতায়। শেষের দিকে এসে প্রার্থীতা প্রত্যাহারও করে নেন ফিরোজ আল মামুন, আব্দুল কাদেরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরাও। শেষ দাগে দাঁড়ায় 'নৌকা' মার্কায় এজাজ আহমেদ মামুন এবং অনেকটা পারিবারিক প্রতীক 'আনারস' নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীতায় বুলবুল আহমেদ টোকেন।

নৌকার কাছে আনারসের জয়ও আছে এই দুই পরিবারের মধ্যে একবার। সে অবশ্য জাতীয় নির্বাচনে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৯-এ আবারও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস-নৌকা। যদিও চারপাশে শোনা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সাংগঠনিক বর্ধিত সভায় নৌকার পক্ষে সকল নেতাকর্মীকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট আসনের এমপি আ.কা.ম সরওয়ার জাহান বাদশাহও।

আসন্ন ভোটে জয়-পরাজয়ের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দুই পরিবারের রাজনৈতিক ইমেজ।

ভোটের আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের বরাত দিয়ে ছড়িয়ে পড়া নানা রকম সমর্থনজনিত বিভ্রান্তি পরিষ্কার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা দৌলতপুরবাসী এখনও খানেকটা ঝাপসাই রয়েছেন তথ্য সেবার ব্যর্থতায়। আনারস সমর্থকেরা পিছু হটেনি একটুও আর নৌকার পালেও লেগেছে হাওয়া।

সামনেই নাকি উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি হবে, এসব তথ্যও ভোটের মাঠে যোগ করছে বাড়তি হিসাব-নিকাশ। বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ,যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা কাজ করছেন নৌকা ও আনারস দুই প্রতীকেই বিভিন্ন মতবিরোধের জের ধরে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য ও বক্তব্যে স্থানীয় প্রশাসনের একই কথা- নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন। এর বাইরে ভাবার সুযোগ নেই।

ভোটের মাঠে সরব থাকার কথা এমন অনেক নেতাকর্মীই রয়েছেন সাইলেন্ট মুডে। কেউ বা মনরক্ষার চেষ্টা করছেন দুই প্রতীকের। মাঠে থাকা প্রার্থীদের সাথে ইতোমধ্যে যোগ হয়েছেন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা প্রার্থীদেরও অনেকেই।

নিজ নিজ জায়গা থেকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মামুন-টোকেনই কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মূল আকর্ষণ।

সহিংস নয়, জয় পরাজয়ের ভোট হোক উৎসবমুখর ও সম্প্রীতির আবহে এমনটাই তো প্রত্যাশা আমাদের।


লেখক: সাংবাদিক


/পিবিডি/একে

উপজেলা নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close