• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

দেশেই লুকিয়ে ছিলেন হারিছ, মারা যান ঢাকায়

প্রকাশ:  ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০৫ | আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:১০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী লন্ডনে নয়, ঢাকায় মারা গেছেন। তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে ছিলেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হারিছ চৌধুরীর বিলেত প্রবাসী কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী। বাবার অসুস্থতার খবরে তিনি বিলেতের সরকারি চাকরি ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন।

সম্পর্কিত খবর

    সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আবুল হারিছ চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের মেধাবী ছাত্র ১/১১-এর পর থেকে টানা ১৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন।

    গণমাধ্যমকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সামিরা জানান, তার বাবা আবুল হারিছ চৌধুরী আসামে কিংবা লন্ডনেও যাননি। তিনি বাংলাদেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। মৃত্যুর পর ঢাকার অদূরে একটি গোরস্তানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

    গ্রামের বাড়িতে দাফন হলো না কেন জানতে চাইলে সামিরা বলেন, চাচা আশিক চৌধুরী সাহস করতে পারেননি। তিনি বলেছেন- কোনো অবস্থাতেই গ্রামে নিয়ে এসো না। বারবার তিনি নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তখন ভয় পেয়ে যাই। বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শে বাবার লাশ গ্রামে নেয়া থেকে বিরত থাকলাম। একা একা বাবাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলাম। কাউকে জানাইনি। ‌‌‘২৪ আগস্ট লন্ডন থেকে ফোনে আব্বুর সঙ্গে কথা হয়। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন। বললেন, কাউকে বলো না মা, চলে এসো। তোমাকে দেখার বড় ইচ্ছে। তোমার বাবুটাকেও নিয়ে এসো। ২৬ আগস্ট ঢাকায় পৌঁছার পর হাসপাতালে প্রথম দেখা। তখন তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এক পর্যায়ে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হলো। মাত্র ৬ দিন বেঁচে ছিলেন। প্রতিদিন হাসপাতালে যেতাম ঝুঁকি নিয়ে। করোনার ভয়ে চিকিৎসকরা নিষেধ করতেন। ২রা সেপ্টেম্বর চিকিৎসক বললেন, আর আশা নেই। লাইফ সাপোর্টে রাখতে পারেন, কিন্তু কোনো লাভ হবে না। জোর করে আরও একদিন রাখলাম। এরপর নিথর একটি মৃতদেহ পেলাম। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। এম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে ছুটে গেলাম দূরের এক ঠিকানায়’, বলেন হারিছ চৌধুরীর কন্যা সামিরা।

    হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে সামীরা বলেন, ‘এর সবটাই রাজনৈতিক। আমার বাবা হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসেননি। ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছেন, সিলেট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাকে যুবকদের সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ছিলেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মতো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। সব কিছুকে ছাপিয়ে আমার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি অস্ত্র হাতে দেশের জন্য লড়েছেন। তার সন্তান হিসেবে অবশ্যই আমি গৌরব বোধ করি। ’

    তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, ‘এসব অভিযোগ কোন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার নামে আসেনি, বলেন! এগুলোর ভিত্তিও আমাদের কারও অজানা নয়। পারিবারিকভাবে চৌধুরী পরিবার অসচ্ছল নয়। জন্মের আগে থেকে ট্রলারের ব্যবসা আর ছোট বেলা থেকে আমাদের গাড়ির শো-রুম দেখে আসতেছি। ঢাকা এবং সিলেটে ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের পরিবার ঐতিহ্যমণ্ডিত। ক্ষমতায় থাকাকালীন গুলশানে একটি বাড়ি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রাজউক থেকে কিনেছিলেন যা সরকার পরবর্তীকালে বাতিল করে ফেরত নিয়েছে। আর কী এমন আছে! আমার দাদা সিও (সার্কেল) অফিসার ছিলেন, এমএলএ ইলেকশনও করেছেন। তার সব ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আমার বাবা নটরডেম থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। আমাদেরও সুশিক্ষিত করে গড়েছেন। আমি আইন পাশ করে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসেবে জুরিখে কাজ করছে। ’

    হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তার মেয়ে সামীরা চৌধুরী মুন্নু বলেন, ‘আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা, ফুফু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদরাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দেই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যু সংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।'

    লন্ডনে মারা গিয়েছেন বলে আশিক চৌধুরীর মন্তব্য প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, ‘হয়তো কোনো চাপে বা পরিস্থিতির কারণে তিনি এমনটা বলে থাকতে পারেন। যে কারণে তিনি বলেছিলেন সিলেটে দাফন করা নিরাপদ হবে না। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে তার কোনো কথা হয়নি। আমার বাবার মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হোক সেটা সন্তান হিসেবে আমার কাম্য হতে পারে না। ’

    পূর্বপশ্চিম/এসকে

    আবুল হারিছ চৌধুরী
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close