ওবায়দুল কাদের আ.লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন: এমপি একরামুল

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, কাদের ভাই নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে বাঁচান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাঁচান। আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি করে যাচ্ছেন। যে ক্ষতি আওয়ামী লীগ পুষিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে। আপনি কেন বোঝেন না নেত্রী বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনাকে চুপ থাকার জন্য বলছে। এগুলো কেন বোননা আপনার এ এক্টিভিটিজ কেউ পচন্দ করছে না। নোয়াখালীর মানুষ তো না। নোয়াখালীর কয়েকজন সুবিধাবাদী লোক ছাড়া নোয়াখালীর অধিকাংশ মানুষের কাছে আপনি ঘৃণিত লোক।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন। তবে কিছুক্ষণ পর তিনি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন। এর আগে ভিডিওিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

একরামুল চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ওবায়দুল কাদের তাঁর ভাইকে লেলিয়ে দিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। ওবায়দুল কাদের আমাকে এক টাকার বেনিফিটও দেয়নি। বরং আমি ওনার কাছে যে কাজটা চেয়েছি, সেগুলো আমি যেন না পাই সে ব্যবস্থা করেছেন। তবে ওনাকেও জবাবদিহি করতে হবে। জবাব তো অলরেডি দিচ্ছেন ওনার ভাইয়ের কাছে। ভাবীর সমন্ধে একজন অভদ্র লোক ছাড়া কোনো লোক এভাবে কথা বলতে পারে না। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাকে আমি ঘৃণা জানাই। আপনি বিচার করতে জানেন না। নিজের ওয়াইফ সম্পর্কে যে ভাই কটূক্তি করে।

কাদের মির্জার বক্তৃতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমার দুঃখ লাগে বাংলাদেশ সমন্ধে। আমরা কোন দেশে আছি। যেখানে এসপিকে বলা হয় কুলাঙ্গার এসপি, ওসিকে বলা কুলাঙ্গার ওসি, ইউএনওকে বলা হয় কুলাঙ্গার ইউএনও। তিনি কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী যে তিনি প্রশাসনকে এভাবে কথা বলেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটা আমাকে দেন। আপনার ভাইকে ওই পিচ ঢালা রাস্তার ওপর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে আনবো। আপনার কারণে আমাদের অনেকের মুখ বন্ধ। আমার মুখ বন্ধ বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা ৪-৫ বার খবর পাঠিয়েছেন নানক ভাইয়ের মাধ্যমে। আমি যেন কোন কথা না বলি। আজকে কথাগুলো বলতেছি যেহেতু হার্ট অপারেশন। বাঁচতেও পারি, মরেও যেতে পারি।

কাদের মির্জাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কাদের ভাইয়ের ছোট ভাই হয়ে আপনি আপনার বুকে হাত রেখে বলেন তো গত ১০-১৫ বছরে কত টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন? কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। আর এখন সাধু বাবা সেজেছেন। এখন আপনি যেগুলো করে যাচ্ছেন কোম্পানীগঞ্জের মানুষ সারাজীবন আপনাকে ঘৃণা করবে।

তিনি আরও বলেন, আপনি কথায় কথায় বলেন আমার ছেলের হাতে অস্ত্র। আমি ২৬টি খুন করেছি। একটি খুনের কথা বলেন তো কোথায় আমি খুন করেছি। আপনি নিজেই বলেন, আপনার ভাগনেও বলেন, ‘আপনারা রাজাকারের ফ্যামেলি’। আমি বলছি, এতে আপনার বড় ভাই আমাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দিয়ে দিছে। কিন্তু ইতিহাস কি আপনারা বদলাতে পারবেন। এই যে আপনার বাবা তিনটা লোকরে যে স্কুলে মারলো, পাঞ্জাবীদের হাতে ধরা পড়ার পর যখন বলছে না এরা আমার স্কুলের না, তখন পাঞ্জাবীরা মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য যাচ্ছিল তাদের গুলি করে মেরে ফেললো। আপনি নিজেই তো বলছেন, আমার বাবা আমার চাচা ওনারা রাজাকার ছিল। হিন্দুদের বড় বড় গাভী নিয়ে আসতো। এগুলোতো ফেসবুকে চলতেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম একটা জালিমের থেকেও খারাপ। চল্লিশ বছর তিনি চরবাটাকে শাসন করেছেন। কিন্তু কি দুঃশাসন করেছে সেটা আমি এমপি হওয়ার পর জেনেছি। কাদের সাহেবের বিরুদ্ধে আমি ২০০১ সালে ভোট করেছিলাম। ওই অবস্থান থেকে ২০০৮ সালে আমাকে দলে নেওয়া হলো। ২০০৮ সালে এসে নোয়াখালী-৪ আসন থেকে ভোট করার ব্যবস্থা করে দেন কাদের ভাই। তিনি মনে করেছেন ওটাতো বিএনপির ঘাঁটি একরাম জিতবে না। তখন অনেক বড় বড় নেতা আমাকে ইঙ্গিত করে বলেছে, তাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য। অকেট কষ্টে কাদের ভাই ১১০০ ভোট নিয়ে জিতলেন। তাও আমার ইউনিয়নের ভোট নিয়ে।

পূর্বপশ্চিম/জিইউ/এনএন