সাংগঠনিক ব্যর্থতায় ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি কমিটি স্থগিত

ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্র ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কমিটি স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদ। ধর্ষণের অভিযুক্ত ওই নেতার নাম আকিফ আহমেদ। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক রেজোয়ান হক মুক্ত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, অভিযুক্তকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সীমাবদ্ধ থাকাকেই যথেষ্ট মনে করা হয়। কিন্তু এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব থাকার কোনো অধিকার নেই। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এতদিনেও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত আকিফ আহমেদের ছাত্রত্ব বাতিলের কোনো দাবি করেনি। এর মধ্য দিয়ে অভিযুক্তের প্রতি সুস্পষ্ট নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত না জানিয়ে কেবল ফেসবুক পেইজে পোস্ট করে দায় সারার চেষ্টা করা হয় বলে ঢাবি কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় নেতারা। ফেসবুক পেইজে করা পোস্টে সংগঠনের প্যাড, দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষর ও তারিখ ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানানো হয়।

এ ছাড়া ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয় যার ফলে ভিক্টিম ব্লেমিং এর সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং তাতে অপরাধকে লঘুভাবে উপস্থাপনের প্রয়াসও লক্ষণীয় বলে জানা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভিক্টিম ব্লেমিং এর বিষয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রথম ফেসবুক পোস্টটি সরিয়ে নিয়ে আরেকটি পোস্ট প্রদান করা হয় এবং এবারেও আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ প্রদানের প্রয়োজন বোধ করেনি ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদ। সর্বশেষ তৃতীয় আরেকটি পোস্টের অবতারণা করে প্রথম পোস্টে দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্যের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয় এবং একই সাথে ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ পায় এমন তথ্য সরবরাহ করা হয়। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ করা বাংলাদেশের আইনে অপরাধ ও ছাত্র ইউনিয়নের নীতি-বিরুদ্ধ একটি কাজ।

বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা জানান, অভিযোগ গ্রহণের তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য প্রদান করা হয়। ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ গ্রহণের তারিখ ২০ মার্চ উল্লেখ করলেও ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া বক্তব্যে ১৪ মার্চের কথা বলা হয়। এছাড়াও অভিযোগকারী ঢাবি সংসদের বিগত কমিটির কাছে প্রথম অভিযোগ করেছে বলে উক্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়। এটি সত্য হয়ে থাকলে বিগত কমিটির নেতৃবৃন্দ ধর্ষণের মত ঘটনায় নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছিল বলে বিবেচ্য হবে, যা ছাত্র ইউনিয়নের আদর্শ ও সাংগঠনিক নীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন।

এ ঘটনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের বর্তমান কমিটি স্থগিত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের নিপীড়ন বিরোধী সেল এ ঘটনায় তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।

এ ছাড়া, অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের জন্য দাবি জানায় ছাত্র ইউনিয়ন। অভিযোগকারী যদি কোনো প্রকার আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানানো হয়।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস