• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কবে শুরু হবে বিএনপির আন্দোলন?

প্রকাশ:  ০৯ মে ২০২২, ১১:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেড় দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ক্ষমতায় যেতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে, কিন্তু বলার মতো কোনো সুফল পায়নি দলটি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী কৌশলে পরাজিত হয়েছে। এরই মধ্যে ঈদের পরে আন্দোলন হবে বলে দলের অনেকে হুমকিও দিয়েছেন। তবে ঈদের পরে কবে আন্দোলন হবে সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে রাজনীতির মাঠ থেকে অনেকটাই বিতাড়িত বিএনপি। একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন করতে পারেনি দলটি। অন্যদিকে দলটির সিনিয়র নেতারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছেন, কিন্তু এ লক্ষ্যে কোনো আন্দোলন তো দূরের কথা, আন্দোলনের প্রস্তুতিও চোখে পড়ছে না।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দল চালাচ্ছেন তারেক রহমান। জানা গেছে, এরই মধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ সবগুলো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি দিলে সবাই মাঠে নামবে এমনই বলছেন তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।

সূত্র জানায়, আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকা ধরে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। পাশাপাশি দলকে গতিশীল করতে মিডিয়া সেল, প্রযুক্তি ও গবেষণা সেল, প্রচার সেল, আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে রাজপথে নামার জন্য তৃণমূল বিএনপির একটি বড় অংশকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের হাইকমান্ড।

‘ঝুঁকি যতো বড়ই হোক, দল তার পাশে থাকবে’- এমন মনোভাব গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিটি নেতাকর্মীর মধ্যে। এ লক্ষ্যে মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় নতুন করে কমিটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহানগর উত্তরে ছয় শতাধিক ইউনিট কমিটি করা হয়েছে। সারাদেশের ৮০টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। অধিকাংশ জেলায় নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শিগগিরিই রাজপথে দৃশ্যমান কর্মসূচিতে ফেরার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এক ধরনের বার্তা রয়েছে। এসবের পাশাপাশি সরকারবিরোধী বৃহৎ প্লাটফর্ম তৈরির কাজও অনেকটা এগিয়ে আনা হয়েছে। এই প্লাটফর্মে ডান-বাম সব মতাদর্শকে এক কাতারে, এক মঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ২১ দিনের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, এখনতো ঈদের ছুটির মধ্যে আছি। ছুটিটা কাটাই তারপরে বলা যাবে।

বিএনপির আন্দোলন কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসূচির বিষয়ে মহাসচিব সাহেব জানাবেন। আর আমার ব্যক্তিগত বক্তব্য হলো-মুভমেন্টতো হবেই, হতেই হবে। মুভমেন্ট ছাড়াতো কোনো পথ নেই। তবে কবে কখন হবে সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। আন্দোলন সংগ্রামেরতো কোনো বিকল্প নেই। এটাকে জোরদার করার জন্য নানা প্রক্রিয়ায় কাজ চলছে। দেখা যাক কী হয়।

‘বিএনপি গত ১৩ বছরে ২৬ বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও কিছু করতে পারেনি’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ওনাকে কেউ জিজ্ঞাসা করে না কেন যে ওনারাতো ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কাজেই একুশের আগে অন্যের সমালোচনা করার যোগ্যতা কি তার আছে?

তিনি বলেন, যারা ক্ষমতা হারানোর পরে আবার ক্ষমতায় আসতে ২১ বছর লেগেছে তাদেরতো আমাদের সমালোচনা করার এখনো যোগ্যতা হয়নি।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, জাতীয় পর্যায়ের যে ঘোষণা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বাতিল, পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এ প্রসঙ্গে আমাদের সমমনা যে রাজনৈতিক দলগুলো যারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা একটা পর্যায়ে এসেছে। যেটা আগামী ২১ দিনের মধ্যে শুরু হবে। এই আলোচনা শেষ হলেই আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে পরবর্তী কর্মসূচি জানানো হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, তারা ঠিকই বলেছেন বিএনপি কিছু করতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগ কিন্তু করতে পেরেছে। কারণ গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ নিজেরা মারামারি করে কমপক্ষে ১৩০ জন মারা গেছে। সেটা তারা সফলভাবে করতে পেরেছে। ওখানেতো বিএনপির প্রয়োজন হয়নি। আগে তারা নিজেদের ঘরের আগুন সামাল দিক, তারপরে যেন বিএনপির দিকে খেয়াল করুক।

তিনি বলেন, আন্দোলন শুরু হলে আওয়ামী লীগের বহুলোক নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিএনপির মিছিলে যোগ দেবেন। কারণ তাদের নেতাদের কর্তৃক তারা অনেকে অত্যাচারিত হচ্ছেন।

দিন তারিখ দিয়ে আন্দোলন হয় না জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, তবে কর্মসূচি আসবে, আন্দোলন খুব শিগগিরই হবে। ধাপে ধাপে আন্দোলন হবে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি কোন দিকে রূপ নেবে সেটা তখন বোঝা যাবে। সরকার সহনশীল থাকে না আগের মতো উগ্র আচরণ করে সেটার ওপরেও আন্দোলন নির্ভর করবে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ২০দলীয় জোটের নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমি মনে করি আন্দোলন চলমান আছে। ঈদের আগে বা পরে বিবেচ্য বিষয় না। আমরা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মধ্যে আছি। সেখানে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এক মঞ্চে না হলেও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার পতন আন্দোলন ইস্যুতে সবাই একমত। আমরা একদফা কর্মসূচি নিয়ে একটা যুগপৎ আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকার পতনের কর্মসূচি। আমি মনে করি সরকার পতন মানেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন। সেই আন্দোলন কবে নাগাদ হবে জবাবে এহসানুল হুদা বলেন, সামনে বর্ষাকাল সে জন্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে আন্দোলন শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

আন্দোলন,বিএনপি,আওয়ামী লীগ,সরকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close