• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মির্জা ফখরুলের বাবা ছিলো রাজাকার: হানিফ

প্রকাশ:  ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৭:২৭
কুমিল্লা প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি নেতারা মুখে বলেন স্বাধীনতার, চেতনা কিন্তু তাদের অন্তরে আছে পাকিস্তান জিন্দাবাদ। তারা বলছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনারা বাংলাদেশকে কেন পেছনে নিয়ে যেতে চান? ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বাংলাদেশ নাকি একাত্তরের আগের পাকিস্তানে। এরা রাজাকারের বংশধর। মির্জা ফখরুলের বাবা ছিলো রাজাকার। তারা এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নেতাদের মনের মধ্যে এখনো পেয়ারে পাকিস্তান রয়ে গেছে। আপনারা টেক ব্যাক স্লোগান বাদ দিন, পাকিস্তানে ফিরে যান। গো ব্যাক পাকিস্তান। পাকিস্তানের আদর্শ আপনাদের যদি এতোই ভালো লাগে, দয়া করে পাকিস্তান চলে যান। দেশের মানুষ বাধা দেবে না। কিন্তু বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ফিরে যাবে না। এমনকি একাত্তরের আগের পেয়ারের পাকিস্তানেও যাবে না। কারণ আমরা যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি।

আওয়ামী লীগ কারো হুমকি, বানরের ভেংচি দেখে ভয় পাওয়ার দল নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা (বিএনপি) স্বপ্ন দেখছেন ধাক্কা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেলে দেবেন। আওয়ামী লীগ সরকার কচুপাতার পানি নয় যে ধাক্কা দিলে টলমল করে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগের শিকড় এই দেশের মাটির অনেক গভীরে। যে দলের জনসম্পৃক্ততা নেই সেই দল টেকে না।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা ৪৫ দিনের মাথায় টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলাম। আমরা গণতেন্ত্র বিশ্বাসী বলে সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছি। কয়েকটা সমাবেশ করে ভাবছেন খেলা বোধ হয় জমে গেছে। দিল্লি এখনো অনেক দূর।

তারেক রহমানকে বিদেশে বসে হুংকার না দিয়ে দেশে ফিরে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, লন্ডনে থেকে খুনি-পলাতকরা বলছে- বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে। লন্ডনে বসে এসব বুলি ছাড়া যায়। দেশে ফিরে এসে রাজপথে নেমে দেখান। বাংলাদেশ কোন পথে পরিচালিত হবে ১৯৭১ সালে তার ফয়সালা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে। কোনো রাজাকারের পথ ধরে চলবে না।

বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বাংলাদেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছিলেন। বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান হাওয়া ভবন বানিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। তার বিরোধিতা যাতে করতে না পারে সেজন্য গণহত্যা চালিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন।

বিএনপি নেতাদের মানবতা তখন কোথায় ছিলো? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন। হামলায় আহত ৫০০ জন এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মানুষ কি এসব ভুলে গেছে? আর আজ আপনারা মানবাধিকারের কথা বলেন। তখন কোথায় ছিলো মানবাধিকার? আর আজ আপনারা মায়াকন্না করে চোখের পানি ফেলেন।

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আপনারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বাস-ট্রেন পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এর দায়ভার বহন করতে হবে। যে অপরাধ আপনারা করেছেন, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে চোখের পানি ফেলবেন। এই চোখের পানি শেষ হবে না।

নাশকতাকারী, সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করে অনেকে পালিয়েছিলো। তারা এখন আবার সুরসুর করে বেরিয়ে আসছে। নাশকতাকারীরা বিশৃঙ্খলা করে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করবে এমন হতে পারে না।

দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের নামে খুব জোরেশোরে কথার ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন- সরকার নাকি সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে, রিজার্ভ শেষ করে দিয়েছে। এই মির্জা ফখরুল নাকি শিক্ষক ছিলেন। তাকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না, শিক্ষক হয়েও একজন মানুষ কতোটা নির্লজ্জ, মিথ্যাবাদী হতে পারে।

‘এই দেশকে আপনারা কোথায় রেখে গিয়েছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে দেশকে কোন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন, ভুলে গেছেন? ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিলো। খাদ্য কেনার অর্থ ছিলো না। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিলেন। এই তকমা আপনারা লাগিয়েছিলেন।’

লোডশেডিং সাময়িক সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার দুই বছরে সারাবিশ্ব বিপর্যস্ত, বিপন্ন ছিলো। এই বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। পৃথিবীর সমস্ত দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তেল সাপ্লাই, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ। শেখ হাসিনা দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হওয়ায় বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করে লোডশেডিং দিয়ে সাশ্রয় করছেন। যাতে করে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। এই কারণে সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। আমরাও কিছুটা কষ্ট পাচ্ছি। এটা আমাদের মতো ছোট দেশের হাতে নেই। নভেম্বরে শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বর এই সংকট কেটে যাবে। আর লোডশেডিং দেখতে হবে না। কিন্তু মির্জা ফখরুলরা সকাল-বিকেল ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছেন- এই সরকার নাকি সব শেষ করে দিলো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা গ্রামের গরিব, দুঃখী, অসহায় মানুষের জন্য ৪৪ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি নিয়েছেন। ২ লাখের বেশি গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দিয়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক করে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। অজস্র উন্নয়ন কমকাণ্ডের মাধ্যমে দরিদ্র দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়শীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। বিশ্বের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এভাবে গেলে আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো।

মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত না করার জন্য বিএনপি মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতারা বললেন তাদের নেতাকর্মীদের নামে লাখ লাখ মামলা। আমরা তাদের নেতৃবৃন্দর সঙ্গে বসলাম। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনার মামলার তালিকা দিন। পরে দেখা গেলো ৭০০ মামলা। আবার এর সবগুলো বাসে আগুন, নাশকতার মামলা। আপনারা বাসে আগুন দেবেন আর মামলা হবে না, জামাই আদর করে বসে রাখবে এমন তো হবে না।

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কারণে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের যতো সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৩ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। সেই বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এ অর্জন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

দলের নেতাকর্মীকে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরুন। শেখ হাসিনার যতোদিন শারীরিক সক্ষমতা থাকবে ততোদিন তিনি ক্ষমতায় থাকবেন। গোটা বিশ্ববাসী বলছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করলে বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

কুমিল্লা,মাহবুবউল আলম হানিফ,আওয়ামী লীগ,মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,রাজাকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close