• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

গণতন্ত্র দূষিত করে ফেলা হয়েছে: নজরুল

প্রকাশ:  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্র দূষিত করে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, যেখানে ৩০০টির মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়, যেখানে দিনের ভোট আগে রাতেই শেষ করে ফেলা হয়, সেটাকে আর যাই বলা হোক ভোট বা গণতন্ত্র বলার কোনো সুযোগ নেই।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মত প্রকাশের স্বাধীনতারওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ, দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালা কানুন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত পেশাজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংবিধানে লিখে রাখেন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, আবার বলবেন আপনারা (সরকার) ধর্ম নিরপেক্ষ। আপনারা যে সংবিধান নিয়ে রঙ-তামাশা করেন, সেই সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতে চান। এটা কেউ পারেনি, আপনারাও (সরকার) পারবেন না।

তিনি বলেন, এই ঢাকা শহরেই জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনে আমরা দেখেছি, শতকরা ৮-১০ ভাগ মাত্র ভোট পড়েছে। কয়দিন আগে কয়েকটি আসনে উপ-নির্বাচন হয়েছে। সরকারি হিসাবেই এক জায়গায় ১৫-১৬ শতাংশ এবং অন্য জায়গায় ২৪-২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। আসলে ভোট পড়েছে আরও অনেক কম। অর্থাৎ এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের লোকজনও এখন আর ভোট দিতে যায় না। কারণ সারা দেশের মানুষের মতো তারাও বিশ্বাস করে, ভোট দেওয়া আর না দেওয়া একই কথা। সরকার যা সিদ্ধান্ত দেবে তাই হবে, যাকে জিতাতে চাইবে সেই জিতবেন। যাকে হারাতে চাইবে সেই হারবেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭৫ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) এক দলীয় স্বৈরশাসন শাসন কায়েম করেছিল। তখন হয় বাকশাল করতে হতো, আর না হয় নক্সাল করতে হতো। দেশে আর কোনো দল করার অধিকার মানুষের ছিল না। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) সেটা তখন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি, এটা এখন কিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে রাজনৈতিক দল আছে, কিন্তু তাদেরকে কৌশলে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। কেউ নির্বাচনে গেলে তাদের প্রচার করতে, পোস্টার লাগাতে, ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়। তারপরও কেউ যদি ভোট দেয়, তাহলে হয় তাদের যাদুর বাক্স ইভিএম দিয়ে ভোট বদলে দেবে, নইলে তাদের লোক দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট দিয়ে দেবে। আর তাতেও কাজ না হলে ফলাফল ঘোষণার সময় নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলেন, কেউ নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, ভোটার আসুক বা না আসুক কিছু আসে যায় না। আসলেই তো কিছু আসে যায় না। কারণ যে ভোটার নির্বাচন কেন্দ্রে এলে তাদের পছন্দের প্রার্থী জেতার কোনো চান্স নেই, সেই ভোটার না এলেই তো ভালো। এই রকম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আমরা একটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি।

তিনি বলেন, আজকে কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলা হয়। এই সংবিধান ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন আপনারা (আওয়ামী লীগ)। আর এখন বলেন এক চুলও এদিক-ওদিক হবে না। আমরা যখন বলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পুনর্বহাল করতে হবে, তখন তারা বলে এটি সংবিধানে নেই। এরা (আওয়ামী লীগ) ১৯৯৬ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য বারবার হরতাল করল, ভাঙচুর করল, গাড়িতে আগুন দিল, তখন কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল? ছিল না।

এই বিএনপি নেতা বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রাখার জন্য যখন আপনারা (আওয়ামী লীগ) এত আন্দোলন করলেন, তখন সেটা ন্যায্য ছিল। আর যখন আজকে আমরা বলছি, সেটা ন্যায্য না? এটা তো কোনো সুষ্ঠু, সুস্থ বিচার হলো না। আপনারা (আওয়ামী লীগ) যখন বলবেন তখন ঠিক, অন্য কেউ বললে সেটা বেঠিক, এটা তো বাকশালী, স্বৈরাচারী কথা হয়ে গেল।

গত কয়েক বছরে ৫০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৯৫ বার পেছানো হলো। এটা কোনো কথা? কী এমন ঘটনা যে রাষ্ট্রের এত তদন্ত প্রতিষ্ঠান, এত লোকজন, এত ক্ষমতা থাকার পরও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ হয়নি। সিটি করপোরেশনের গাড়িতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগুন দিয়েছে, সেটা আপনারা বাইর করে ফেলেন, আর সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৯৫ বার সময় পেছাতে হয়!

আজকে সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রাম-গঞ্জে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মানুষ আগে ভয় পেত, এখন আর পায় না। মন্ত্রী সাহেবরা ছদ্মবেশ নিয়ে বাসে, চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন। শোনতে পারবেন সাধারণ মানুষ আপনাদের সম্পর্কে কী বলে? আল্লার কসম, একটি-দুটি স্টপেজের বেশি থাকতে পারবেন না বাসে। আল্লাহ বাঁচাও বলে নেমে যাবেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

গণতন্ত্র,দূষিত,নজরুল ইসলাম খান,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close