• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অতিরিক্ত মার্কিন চাপ বাংলাদেশকে আরও চীনের দিকে ঠেলে দেবে: ভারত

প্রকাশ:  ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বারবার বলছে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় তারা। সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র বেশি চাপ দিলে ঢাকা বেইজিংয়ের দিকে আরও বেশি করে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে দিল্লির পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনকে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ‘চরমপন্থি শক্তির’ হাতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে বলে ভারত ‘যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে’। হিন্দুস্তান টাইমস দাবি করেছে, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কয়েকজন ব্যক্তি এসব তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছে, সাম্প্রতিককালে কয়েকটি আলাপ-আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। দিল্লির বিশ্বাস, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ দিচ্ছে তা বাংলাদেশকে ‘চীনের আরও কাছে ঠেলে দিতে পারে’।

আর তেমনটি হলে তা এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা দাবি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে-তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তারপরও এই বিষয়ে খুব বেশি চাপ দেওয়া হলে তা শুধু শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী চরমপন্থি এবং মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে বলে তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও র‌্যাবের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এই ছাড়াও চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দেয় তারা।

গত ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেই বৈঠকে শি বলেন, বেইজিং বাংলাদেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধী। একে অপরকে সমর্থনের জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে বেইজিং। অন্যদিকে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার’ নীতির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বৈঠকে জিনপিংয়ের করা মন্তব্যের পর দিল্লির উদ্বেগ বেড়েছে। তারা মনে করছে, মার্কিন চাপের জেরে চীন বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন, উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি ও বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। আসন্ন সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে সরকারকে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে; তা বিরোধী দল বিএনপিকে উৎসাহিত এবং সংগঠিত করছে। তারা একের পর এক বিশাল সমাবেশ করছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর পুনরুজ্জীবনকে নয়াদিল্লি উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে। ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে গত ১০ জুন প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। দলটি সবসময়ই ‘ভারতবিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে’ বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটির দাবি, জামায়াতের শক্তিশালী হয়ে ওঠা ‘চরমপন্থি শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে’ বলে ভারত মনে করে। এতে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

চীন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close