• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

জামায়াতকে পাশে বসাতে চায় না যুগপৎ শরিকরা

প্রকাশ:  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় একদফার আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিন থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়কে দাবি আদায়ের ‘মোক্ষম সময়’ বিবেচনা করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তারিখে ভোট ঠেকানোই তাদের মূল লক্ষ্য।

আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে নির্বাচন বয়কট করা সব দলকে একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় চূড়ান্ত আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পাশে চায় দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৪ সালের মতো জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা আশা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেই সঙ্গে এবার চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে তারা।

তবে জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে যেতে নারাজ যুগপতের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চ। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে এখনো ক্ষমা না চাওয়ায় আদর্শগত কারণে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই দলটিকে নিয়ে আপত্তি তাদের। অবশ্য জামায়াতকে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে সম্পৃক্ত করলে তাতে আপত্তি থাকবে না ছয় দলীয় এই জোটের।

জামায়াতকে নিয়ে জোটের এই অবস্থানের বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। তবে যুগপতের অন্য শরিকদের এ নিয়ে আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আমরা যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে রাজপথে আছি। চলমান আন্দোলনকে কীভাবে আরও বেগবান করা যায়, সেই কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। সময়, পরিবেশ ও পরিস্থিতিই আগামীতে আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ করবে। ভবিষ্যতে রাজপথই নির্ধারণ করে দেবে আরও বৃহত্তর ঐক্যের জন্য একসঙ্গে আন্দোলন হবে কি না।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, বিএনপি চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে নির্বাচন বয়কট করা সব বিরোধী দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ইস্যুতে জামায়াতের ব্যাপারে গণতন্ত্র মঞ্চের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি।

তবে কী ধরনের মতামত দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির নেতৃত্বে দশ দফার ভিত্তিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামী প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর নিজস্ব আঙ্গিকে এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার আরামবাগে মহাসমাবেশ করেছে দলটি। অবশ্য সেদিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় তা পণ্ড হয়ে যায়। অন্যদিকে জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করায় দলটির ভোটে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম হয়।

যদিও শেষ পর্যন্ত জামায়াত আর নির্বাচনে যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে দাবি আদায়ে প্রতি সপ্তাহে শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় আত্মগোপনে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলে কর্মসূচি পালন করায় আন্দোলনে এখনো চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। সে কারণে নির্বাচন বয়কট করা যুগপৎ ও যুগপতের বাইরে থাকা দলগুলোকে একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএনপির এমন অবস্থানের কথা ইতোমধ্যে যুগপতের শরিকদের জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপির এই প্রস্তাবনা নিয়ে গত সোমবার বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সেখানে জামায়াতকে একমঞ্চে আনার ব্যাপারে বিএনপির প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেন মঞ্চের নেতারা। তবে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে তাদের আপত্তি থাকবে না। এই অবস্থানের বিষয়টি ইতোমধ্যে বিএনপিকে তারা জানিয়েও দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জামায়াতকে একমঞ্চে আনার এই উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতেও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জোট।

এদিকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে এরই মধ্যে সংহতি জানিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিএনপির মতো তারাও দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছে।

যদিও দলটি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে ভোট চায়। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও যুগপৎ আন্দোলন কিংবা একমঞ্চে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসলামী আন্দোলন। তবে একমঞ্চে জামায়াতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রাথমিকভাবে তাদের আপত্তি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন চলছে। তারা এখন নির্বাচন বর্জনকারী সব বিরোধী দলকে একমঞ্চে আনতে চায়। এই উদ্যোগে ইসলামী আন্দোলনকেও পাশে চায়। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্য দলের মতো ইসলামী আন্দোলনেরও একটা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর আমাদের দলের শূরার একটি বৈঠক আছে। সারা দেশ থেকে সেখানে দায়িত্বশীলরা আসবেন। সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব। দল, রাজনীতি ও দেশের জন্য যেটা ভালো হবে, আমরা তেমন সিদ্ধান্তই নেব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে রয়েছি। আমরা যেভাবে আছি, আপাতত সেভাবেই থাকছি। যদি এমন কোনো ক্ষেত্র তৈরি হয়, তখন আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে আন্দোলন জোরদারে নির্বাচন বয়কট করা সরকারবিরোধী দলগুলোকে একমঞ্চে আনার ব্যানারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একদফা দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। যারা এই সরকারকে গণতান্ত্রিক বলে মনে করে না, তারা এরই মধ্যে আন্দোলনে রয়েছে, তারা একতরফা নির্বাচনও বয়কট করেছে। তবে আন্দোলনকে একমঞ্চে নিয়ে আসার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা করিনি। যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন এটা নিয়ে আলোচনা করব। এটা নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।

এক বছর ধরে যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও সব দলকে এক মঞ্চে আনতে বিএনপির তৎপরতা প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। গত ২৮ নভেম্বর ঢাকায় দেশের বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধির সঙ্গে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। সেখানে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যের আহ্বান নিয়ে এক টেবিলে বসেন বিএনপিসহ বিভিন্ন ধারার দলের নেতৃত্ব।

ওই সংলাপে বিএনপি ছাড়াও এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো মধ্যপন্থি দলগুলোর পাশাপাশি জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মতো বামধারার দলের নেতারাও ছিলেন। ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে খেলাফত মজলিস ছিল। জামায়াতে ইসলামী না থাকলেও দলটির সমর্থিত সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের প্রতিনিধি ছিলেন।

এরপর ৩০ নভেম্বর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে বিএনপি। যুগপতের বাইরে সেখানে এবি পার্টির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে আন্দোলনকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

৭ জানুয়ারির ভোট সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগটি বেশ এগিয়েছে বলে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের বলেন, আশা করি, আমরা ৭ জানুয়ারির আগেই বিএনপিসহ সব বিরোধী দল এক ব্যানারে, একমঞ্চে আন্দোলনের মোহনায় মিলিত হব। সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন নিশ্চিত হবে।

এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, আগে সবাই এক কাতারে শামিল হচ্ছি, তারপর সবাই মিলে ক্রমান্বয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।

বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা জানিয়েছেন, একদফার আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে ইসলামী আন্দোলন ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং ‘সমমনা ইসলামী দলগুলো’কে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একমঞ্চের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তবে একমঞ্চ না হলেও ভোট ঠেকাতে যুগপতের বাইরে থাকা এসব দল ও জোট নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আন্দোলন যাতে আরও জোরদার করে, সেই চেষ্টাও অব্যাহত আছে। সূত্র: কালবেলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

আন্দোলন,ঐক্যবদ্ধ,শরিক,জামায়াত
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close