• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন

জামায়াতকে সঙ্গী বানানো নিয়ে দুই মত বিএনপিতে

প্রকাশ:  ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৮
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে চায় বিএনপি। একদফা আদায়ে মাঝের কয়েকটি দিনকেই ‘মোক্ষম সময়’ মনে করছে দলটি। সেই বিবেচনা থেকেই তারা হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচির পর ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সর্বাত্মক এই আন্দোলনে শক্তি বাড়াতে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও এবার সক্রিয়ভাবে পাশে চায় বিএনপি। সেইসঙ্গে নির্বাচন বয়কট করা সব দলকে একমঞ্চে আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে যুগপৎ কর্মসূচিতে আপত্তি না থাকলেও জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে শামিল হওয়া নিয়ে অন্য শরিকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতকে একমঞ্চে আনা নিয়ে খোদ বিএনপিতেও দ্বিমত রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিএনপির ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে এখন ১০ জন নেতা সক্রিয় রয়েছেন। বয়স, অসুস্থতা এবং অব্যাহতিপত্র জমা দেওয়ার কারণে ৫ জন এখন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ইতোমধ্যে বর্তমান কমিটির চারজন মারা গেছেন। সক্রিয় ১০ জনের মধ্যে তিনজন বিদেশে এবং তিনজন কারাগারে রয়েছেন। সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় মিলিয়ে ১৫ জনের মধ্যে তিনজনের জামায়াতকে একমঞ্চে আনার ব্যাপারে চরম আপত্তি রয়েছে। তবে তাদের আপত্তি সত্ত্বেও জামায়াত ইস্যুতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে দীর্ঘদিনের এই মিত্রকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা এবং একমঞ্চে আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে আন্দোলন বেগবান করতে দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা যুগপতের মিত্র অন্যান্য দল ও জোটকে জানানো হয়।

ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতা জামায়াতকে একমঞ্চে আনার সিদ্ধান্ত না মানতে যুগপতের শরিক সেই জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের ফোরামে আলোচনার পর দুটি জোটই ‘জামায়াতসহ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে’ তাদের আপত্তির কথা বিএনপিকে জানিয়ে দেয়। তবে আন্দোলনে সাফল্যের বিষয়টি বিবেচনা করে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জামায়াতকে ‘যুগপৎ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করলে গণতন্ত্র মঞ্চের বড় কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানা গেছে।

জানা যায়, বিএনপির যারা প্রগতিশীল রাজনীতি করে এসেছেন, কিংবা এই ধরনের রাজনৈতিক মানসিকতা ধারণ করেন তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একমঞ্চে উঠতে প্রবল আপত্তি তাদের। জামায়াতের সঙ্গে জোট করা নিয়েও শুরুতে এরা বিপক্ষে ছিলেন। তবে আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে এই পর্যায়ে জামায়াতকে যুগপতে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে তেমন আপত্তি নেই তাদের।

অন্যদিকে বিএনপির যেসব নেতা ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে। তারা মনে করেন, জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী রাজনীতি ও কর্মসূচি পালন করতে পারে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আন্দোলনে আপত্তি রয়েছে যুগপতের শরিক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের। জোটের সমন্বয়ক ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য জামায়াত এখনো দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এ অবস্থায় জামায়াতের রাজনীতি তো সংবিধানই পারমিট করে না। সেখানে যুগপৎ আন্দোলন কিংবা জামায়াতের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠার প্রশ্নই আসে না। যদি বিএনপি সেটা করে, তাদের নিজস্ব বিষয়।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর সবার রাজপথে থাকার মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী একটা ঐক্য গড়ে উঠেছে। বিএনপি বা গণতন্ত্র মঞ্চসহ যারা ৩১ দফায় একমত হয়েছে, তারা যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। এছাড়া ৩১ দফার যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে ইসলামী ঘরানার কিছু দল, বামপন্থি বিভিন্ন দল ও জোট এবং দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ধারারও কিছু দল রয়েছে। তারাও আন্দোলনে নিজ নিজ জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। লক্ষ্যটা সবার একই, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এমন সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে আমরা আন্দোলনে যুক্ত আছি।’

তিনি বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে এখনই একমঞ্চে ওঠার ব্যাপারটা মঞ্চের বিবেচনায় নেই। এমন বাস্তবতাও এখন নেই। আন্দোলন চলার পথে, তার বিকাশের পথে যদি পরিস্থিতি দাবি করে বিরোধী দলগুলোর আরও কাছাকাছি আসা, সমন্বিত উদ্যোগ ও ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান করা দরকার—আন্দোলনকারী দলগুলো নিশ্চয় তখন জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় রেখে এ ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আগামী দিনগুলোতে যাতে এই ভূমিকাটা আরও জোরালো, কার্যকর ও বিস্তৃত হয়-সেই প্রচেষ্টাই সবার চালানো উচিত।’

বিএনপির নেতৃত্বে দশ দফার ভিত্তিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। জামায়াতে ইসলামী প্রথম দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর নিজস্ব আঙ্গিকে এককভাবে কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার আরামবাগে মহাসমাবেশ করেছে দলটি।

অবশ্য একই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় তা পণ্ড হয়ে যায়। ওই ঘটনার জেরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে অন্য নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে দাবি আদায়ে প্রতি সপ্তাহে শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কিন্তু নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিলে কর্মসূচি পালন করায় আন্দোলনে এখনো চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। এমন বাস্তবতায় চূড়ান্তভাবে আন্দোলনকে সফলতার বন্দরে পৌঁছাতে নির্বাচন বয়কট করা যুগপৎ ও যুগপতের বাইরে থাকা দলগুলোকে একমঞ্চে আনার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকেও সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘একদফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে যুগপৎ ও যুগপতের বাইরের অনেক দল একতরফা নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এবার জনগণকে ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, আন্দোলন এবার নতুন মাত্রা পাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন ক্রমেই বেগবান হবে। যখন সিদ্ধান্ত হবে তখন আন্দোলন একমঞ্চের রূপ লাভ করবে। এটা নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।’ সূত্র: কালবেলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন,বিএনপি,জামায়াত,সঙ্গী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close