• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী তারা, ‘জামানত থাকলেই’ খুশি

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:২৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈত্রিকভিটা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। টুঙ্গিপাড়া ও পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলা নিয়ে গোপালগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনটি গঠিত। এই আসনে সাত বারের সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বিগত নির্বাচনে এই আসনে নৌকার শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা জামানত হারান।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ভোটে লড়ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিএনপি না থাকায় এই আসনে পাঁচটি নতুন দলের একজন করে প্রার্থিতা করছেন। তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে জয়ের আশা করছেন না; সম্মানজনক ভোট পেয়ে জামানত টিকিয়ে রাখার লড়াইটাই উদ্দেশ্য। এটিকে “রেকর্ড অর্জন” হিসেবে দেখছেন তারা।

আসনটিতে বিএনপি, জমায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সিপিবি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন একটা নেই।

এবার শেখ হাসিনার সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা এম নিজাম উদ্দিন লস্কর, গণফ্রন্টের প্রার্থী ও “জনতার কথা বলে পার্টি”র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা লিমা হাসান, জাকের পার্টির মাহাবুর মোল্লা, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শহিদুল ইসলাম মিন্টু ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ আবুল কালাম।

আওয়ামী লীগের এই দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে নতুন প্রার্থীরা ভোটারদের কতটা সমর্থন পাবেন এখন সেটিই দেখার বিষয়। তবে প্রার্থীদের আশা সম্মানজনক ও প্রত্যাশিত ভোট পাবেন।

শহিদুল ইসলাম মিন্টুর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুলতানশাহী গ্রামে; পেশায় ব্যবসায়ী এই রাজনৈতিক কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে নেমেছেন। তিনি এর আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছেন। তার আশা, “ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অন্তত সম্মানজনক ভোট পাবেন।”

জাকের পার্টির জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর মোল্লা হয়েছেন দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারও সংসদে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। নির্বাচনে থাকাটাই মূখ্য তার কাছে। তিনি বলেন, “জাকের পার্টি মানবতা ও শান্তিকামী মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। দলীয় প্রতীক গোলাপ ফুলের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। ভোট পাব কিনা জানি না, তবে নির্বাচনের মাঠে থাকব ইনশাল্লাহ।”

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনএনপি) প্রার্থী হয়েছেন দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আবুল কালাম। তিনিও ভোটে জিতবেন এমন আশা করেন না। তবে এই আসনের দুই উপজেলাতেই আত্মীয়-স্বজনদের ভোট পাবেন বলে আশা তার।

তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আগে সব প্রার্থীরাই জামানত হারিয়েছেন। আমি নির্বাচনে সম্মানজনক ভোট পেয়ে জামানত রক্ষা করতে পারব বলে আশা করছি। জেতার জন্য নির্বাচন করছি না। সম্মানজনক ভোট পেতে লড়ব। এমন প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

নির্বাচনের মাঠে “নামকল” দিতেই প্রার্থী হয়েছেন গণফ্রন্টের সৈয়দা লিমা হাসান। তিনি ভোট পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কষছেন না। প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার দলের কোনো নেতাকর্মী নেই এই আসনে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলি গ্রামের বাসিন্দা এম নিজাম উদ্দিন লস্কর। ২০ বছর ধরে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মাঝে ১০ বছর ছিলেন রাজনীতির বাইরে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। প্রার্থী হয়েছেন সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা দল “বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির”। তার ইচ্ছে ৪,০০০ এর বেশি ভোট পাওয়া।

তিনি বলেন, “এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারব না। কিন্তু এর আগে প্রার্থীরা এ আসন থেকে জামানত হারিয়েছেন। তারা তিন থেকে চার হাজার ভোট পেতেন। আমি এই রেকর্ড ভেঙে ফেলতে চাই।”

আগামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। ভোটের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে ১৫ নভেম্বরের পর। ওইদিন দ্বাদশ সংসদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারবেন তারা।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের ভোটে মাঠে রয়েছে ২৭টি দল। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর এখন পর্যন্ত ২৭টি দলের ১,৫১৩ জন ও স্বতন্ত্র ৩৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। এই ১,৮৯৫ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। আদালতের আদেশে আরও কিছু প্রার্থী যুক্ত হতে পারেন।

ছোট ২৭টি দল নির্বাচনে থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি তেমন একটা উৎসাহ তৈরি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনী হাওয়া বইয়ে দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানতে ক্ষমতাসীন দল নিজ দলের নেতাদের “স্বতন্ত্র” হওয়ার অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে অনেক স্থানে নৌকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এই স্বতন্ত্রদের।

শেখ হাসিনা,নির্বাচন,জাতীয় সংসদ নির্বাচন,আওয়ামী লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close