• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সংসদ নির্বাচন

দু-কূলই খোয়ালেন বিএনপির দলছুট নেতারা

প্রকাশ:  ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বহিষ্কৃত নেতা। কেউ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, কেউ অন্য দলের, আবার কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার এবং ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বেশ আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু তাদেরও ভরাডুবি হয়েছে। জামানতও হারিয়েছেন কেউ কেউ। নির্বাচনে শোচনীয় ফল করায় ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সুযোগ যেমন তাদের থাকছে না, তেমনি বিএনপিতে প্রত্যাবর্তনের পথও রুদ্ধ হয়ে গেল। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরপরই এসব নেতাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। অনেকের মতে, একূল-ওকূল দুকূলই হারিয়েছেন বিএনপির দলছুট নেতারা।

গত রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলছুট সাবেক এই নেতাদের মধ্যে মাত্র দুজন বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। নৌকা প্রতীকে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে নির্বাচন করে শাহজাহান ওমর পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোট। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি) হিসেবে নির্বাচন করে একরামুজ্জামান ৮৯ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পরাজিত ও জামানত হারালেন যারা: ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেন শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার। তারা দুজনই বিএনপির সাবেক নেতা। স্বপ্ন ছিল বিএনপি ভেঙে প্রচুর নেতাকর্মী বাগিয়ে এনে তৃণমূলকে শক্তিশালী করবেন। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসবেন তারা। তবে সেই স্বপ্ন এখন আশায় গুড়েবালি। নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। তারা সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেননি।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী ছিলেন। জয়ী প্রার্থীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়ে তিনি হয়েছেন তৃতীয়। এই আসনে বেসরকারি ফলে ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৮৭ ভোট। শমসের মবিন চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ভোটে দাঁড়িয়ে জামানত খুইয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি প্রদত্ত ভোটের মাত্র দেড় শতাংশ পেয়েছেন। তবে এই আসনে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোটে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার এই নির্বাচনের আগে ভেবেছিল বিএনপি থেকে ১০০-১৫০ নামিদামি নেতা নিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাবে। কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। ২৮ অক্টোবর আমাদের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের ওপর ক্র্যাকডাউন করে সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত তারা (সরকার) আমাদের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে ভুয়া ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও সরকার আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে পারেনি।

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে আরও পরাজিত হয়েছেন কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি) আসনে দুইবারের এমপি ও বিএনপির পাঁচবারের বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান। স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি জামানত হারিয়েছেন। কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে মোট ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৯ জন। ওই আসনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৯৮০ ভোট। এ ছাড়া ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর পেয়েছেন ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট।

বগুড়া-১ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়া-২ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম, বগুড়া-৪ আসনে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও বগুড়া-৭ আসনে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল নির্বাচনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে জিয়াউল হক মোল্লা পেয়েছেন ৪০ হাজার ০১৩ ভোট, বিউটি বেগম স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতীকে ৩৪ হাজার ২০৩ ভোট। আর বগুড়া-১ আসনে মো. শোকরানা ২ হাজার ৯৮২ এবং বগুড়া-৭ আসনে সরকার বাদল পেয়েছেন ২ হাজার ৫৯৩ ভোট। এই দুজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব (টাঙ্গাইল-৫), দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ টাঙ্গাইল-৬, দেলওয়ার হোসেন খান দুলু ময়মনসিংহ-৪ আসনে পরাজিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত হলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া। তবুও যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভাগাভাগি ও প্রহসনের নির্বাচনে গেছে, তাদের জনগণ উচিত শিক্ষা দিয়েছে। সূত্র: কালবেলা।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সংসদ নির্বাচন,নেতা,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close