• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

যেখানে আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা নিজেরাই    

প্রকাশ:  ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে বেতাগী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট নেতাসহ সাত প্রার্থী। এর মধ্যে ভোটের মাঠে সক্রিয় চার প্রার্থী। তাদের মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তবে একই দলের পদধারী একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নানার গ্রুপিং তৈরি হয়েছে।

ফলে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা এখন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির কর্মী-সমর্থকরা দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানান বিভক্তি। দলীয় কর্মী-সমর্থকরা কাকে রেখে কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। আবার কেউ কেউ প্রকাশ করছেন ভিন্নমত।

তাদের মতে, এবার নির্বাচনের মাঠে কর্মীদের মূল্যায়ন হবে, নেতাদেরও হবে জনপ্রিয়তা যাচাই। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন-উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ফোরকান (বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান), সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক খলিলুর রহমান খান (সদ্য পদত্যাগ করা ইউপি চেয়ারম্যান), সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খ. ম. ফাহারিয়া সংগ্রাম আমিনুল (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম। এছাড়া সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস ছোবাহান, বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নাহিদ মাহমুদ হোসেন ও রিয়াজ হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ফোরকান দলের দায়িত্বে আছেন প্রায় এক যুগ।

এর আগে তিনি উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ফলে ভোটব্যাংক নিয়েও এগিয়ে আছেন এ নেতা। এবারের নির্বাচনে তিনি সক্রিয়ভাবে প্রার্থী হলেও দলের একটি বড় অংশ সমর্থন দিচ্ছেন দলের আরেক নেতা খলিলুর রহমানকে। যিনি দলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও বর্তমানে ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি। এছাড়া তিনি হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে দলের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে নেমেছেন মাঠে।

ভোটের যুদ্ধ করতে সদ্য ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগও করেছেন এ আ.লীগ নেতা। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা করে তিনি সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মতামত নিয়েছেন। দলের নেতাকর্মীরা যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করেন তবে তিনিই হবেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরকানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনটাই বলছেন স্থানীয় আ.লীগের একাধিক নেতা।

সাধারণ জনগণের মতে, ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন আরও দুই প্রার্থী-সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস ছোবাহান ও বেতাগী সদরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খ. ম. ফাহারিয়া সংগ্রাম আমিনুল। এ দুই প্রার্থীর বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের মতামত হচ্ছে-আ.লীগের হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর কোন্দলের ফলে দলীয় সমর্থকদের ভোট দ্বিখণ্ডিত হবে। এ সুযোগে সাধারণ মানুষের ভোটকে পুঁজি করে জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন এ দুই প্রার্থী। এদিকে আ.লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, দলের নেতাদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তাদের অনেককে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য বিভক্তি। দলীয় প্রার্থীরা যার যার কর্মী-সমর্থক নিয়ে আলাদা আলাদা শোডাউন-গণসংযোগ করছেন। তবে সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা সব প্রার্থীকে বিচার-বিশ্লেষণ করে যাকে এলাকার উন্নয়নের জন্য যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দেবেন।

এদিকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরকানের কর্মী-সমর্থকরা আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ হিসাবে দায়ী করছেন উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবিরকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তারা জানান, আ.লীগ সভাপতি গোলাম কবিরের ব্যবসায়িক পার্টনার চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান। তাই গোলাম কবির তার ‘মাইম্যানের’ হাতকে শক্তিশালী করতেই খলিলুর রহমানকে জাঁকজমকভাবে নির্বাচনের মাঠে নামিয়েছেন।

আয়নাবাজির ন্যায় দিচ্ছেন দলীয় সমর্থন। এসব কারণেই উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে আ.লীগের গলার কাঁটা আ.লীগ। তবে উপজেলা নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থানীয় দলীয় প্রভাব পড়বে না। যুগান্তরকে এমনটাই জানিয়েছেন বেতাগী উপজেলা আ.লীগ সভাপতি এবিএম গোলাম কবির। তিনি আরও বলেন, আর কাছে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়।

বেতাগি,আওয়ামী লীগ,নেতাকর্মী
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close