• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমার জান হাজির’

প্রকাশ:  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৪৬
দিনাজপুর প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাসসুম জুইকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিনাজপুরের সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেছেন।

শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

৪১টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা হলেন কুমিল্লা থেকে আনজুম সুলতানা, বরগুনা থেকে সুলতানা নাদিরা, জামালপুর থেকে মিসেস হোসনে আরা, গাজীপুর থেকে রুমানা আলি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, নেত্রকোণার হাবিবা রহমান খান শেফালী, পিরোজপুরের শেখ এ্যানি রহমান, টাঙ্গাইলের অপরাজিতা হক, সুনামগঞ্জের শামীমা আক্তার খানম, গাজীপুরের শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, মুন্সিগঞ্জের ফজিলাতুন নেসা, নীলফামারী রাবেয়া আলীম, নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলী, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান, ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, ঢাকার নাহিদ ইজহার খান, ঝিনাইদহের খালেদা খানম, বরিশালের সৈয়দা রুবিনা মিরা, চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান, পটুয়াখালীর কাজী কানিজ সুলতানা, খুলনার ঝর্না সরকার, ঢাকার সুবর্ণা মোস্তাফা, দিনাজপুর থেকে জাকিয়া তাবাসসুম, নোয়াখালীর ফরিদা খানম সাকী, খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমা, কক্সবাজারের কানিজ ফাতেমা আহমেদ, ফরিদপুরের রুশেনা বেগম, কুষ্টিয়ার সৈয়দা রাশিদা বেগম, মৌলভীবাজারের সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, রাজশাহীর আনজুম মিতা, কুমিল্লার আরমা দত্ত, খুলনার শিরিনা নাহার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, শরীয়তপুরের পারভীন হক সিকদার, রাজবাড়ির নুসরাত, ঢাকার শবনম জাহান শিলা, চট্টগ্রামের খাদিজাতুল আনোয়ার, নেত্রকোণার জাকিয়ার পারভীন খানম, মাদারীপুরের তাহমিনা বেগম, ঢাকার শিরীন আহমেদ ও জিন্নাতুল সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হয়েছেন।

সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনীত হওয়ার পর অ্যাডভোকেট জাকিয়া তাবাস্‌সুম (জুঁই) শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আলাপকালে জানান, তার রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনের কথা নানা কথা তুলে ধরেন।

তার বাবা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। তিনি বৃহত্তর দিনাজপুর-২ আসন (বালিয়াডাঙ্গী-ঠাকুরগাঁও) আসনে স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের এম.এন.এ ছিলেন এবং বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

জাকিয়া তাবাস্‌সুম বলেন, ‘আমার বাবা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (সাবেক এম.এন.এ বৃহত্তর দিনাজপুর-২), মা প্রমিদা বেগম। বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি। আমরা চার ভাই ও চার বোন। আমিই সবার ছোট।

‘বাবা-মা দুজনেই মারা গেছেন। আমার স্বামী মোহাম্মদ আশরাফ আলী ছটু দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারে ব্যবসা করেন। আমি আমার স্বামীকে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী যদি আমার ফাইলটা পড়ে থাকেন, তাহলে কিন্তু আমি হতে (সংসদ সদস্য) পারি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে খুব আদর করেন’, বলেন জুঁই।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা রাজনীতি করে আমাদের পৈতিৃক যে সম্পত্তি ছিল তার সমস্ত কিছু নিঃশেষ করেছেন। আমার বাবা ভাড়া বাড়িতেই মারা যান ১৯৯১ সালে। ইনফ্যাক্ট আমার বাবার চিকিৎসা আমরা শেষ পর্যন্ত করতে পারিনি। হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়েছিল। তখন আমাদের আর্থিক অনটন ছিল। কিন্তু আমার ভাইয়েরা মেধাবী ছাত্র বলে ওনারা চাকরি পেয়েছেন। ওনাদেরও রাজপথে আসার মতো পরিস্থিতি হয়ে ওঠেনি, সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছে।

আমার মা দুঃখ করে বলতো, আমার একটা ছেলে-মেয়েও রাজনীতি করলো না। আমি বলতাম, আম্মা আমি রাজনীতি করবো। আমি কিন্তু ছোটবেলায় খুব দুষ্ট ছিলাম, পড়ায় খুব ফাঁকিবাজ ছিলাম। সাংস্কৃতিক জগৎ আমাকে খুব টানত। আমি ১৯৮০ সালে জাতীয় কবিতা সম্মেলনে চাঁদের হাট ক্লাব আয়োজিত সেখানে কবিতা আবৃত্তিতে পুরো দেশের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করি। তারপর ১৯৯৪ সালে এবং ২০১০ সালে জাতীয় কবিতা সম্মেলনে অংশ নেই, জানান তিনি।

ছোটবেলার বেড়ে ওঠার গল্প তুলে ধরে সাবেক এম.এন.এ’র মেয়ে জাকিয়া বলেন, ‘আমি বিভিন্ন প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান কবিতা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করি। একসময় সাহিত্য সম্পাদনা করি। দিনাজপুরের সাপ্তাহিক দিগন্ত বার্তা পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদিকা ছিলাম। পরবর্তীতে মহিলা আওয়ামী লীগের ৯নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি হই। ইকবাল ভাইয়ের (হুইপ ইকবালুর রহিম) বাবা (সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহিম) যখন সর্বশেষ ইলেকশন করেন। এরপর দিনাজপুরে যখন যুব মহিলা সংগঠন তৈরি হয় প্রথম থেকেই আমি যুগ্ম আহ্বায়িকা ছিলাম। এরপর যুব মহিলা লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হই। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল আমি অ্যাডভোকেট হই। সেই আমি ল’পাস করে দিনাজপুর বার আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেছি ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হওয়ার স্মৃতিচারণ করে জাকিয়া তাবাস্‌সুম জানান, “আমার মাকে নিয়ে আমি দুই বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, পরে বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক আদর করেছেন। আম্মার ইচ্ছা ছিল তার একটা সন্তান যেন সংসদে যায়। আম্মা আমাকে বলতো, ‘অ্যাডভোকেট হলে তুই সাবমিট করবি, সংরক্ষিত মহিলা আসনে। আমি কনফিউস ছিলাম, করবো কি করবো না! কিন্তু আমার মেয়ে প্রভা শারমিন, ও ফুল এডামেন্ট ছিল; বলতো ‘মা তুমি জানো, তুমি যদি আজকে এমপি হও তাহলে আমাদের দুজনের পড়ালেখার আর সমস্যা থাকবে না’।

আমার থাকার বাসস্থানটুকুও আমাকে বিক্রি করে ফেলতে হয়েছে জানিয়ে জুঁই আরও বলেন, ‘আমি ভাড়া বাড়িতেই আছি। বাবার সততা ধারণ করেছি এবং সেই সততা নিয়ে আমি এই ২৪ বছর রাজপথে চার আনা পয়সাও কারো কাছ থেকে নেইনি। উল্টো স্বামীর পকেট থেকে খরচ করেছি। এই সমস্ত কারণে অনেকে বলে যে, তোমাকে কি প্রধানমন্ত্রী দেখে রাখে? আমি বলি, না দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমার জান হাজির। আমি ইমোশনাল, পাগল। দলের জন্য পাগলামি করি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে এতো বড় আসনে অধিষ্ঠিত করবেন এবং আমার মায়ের স্বপ্নপূরণ হবে, আমার বাবা যে সংসদে ছিল সেইখানে যেতে পারবো, এটা বুঝিনি।’

জুঁই বলেন, ‘আমি যখন অ্যাডভোকেট হই সেই অনুভূতিটা অন্যরকম ছিল, কিন্তু রাজপথ হয়ে যে সংসদে যাবো, আমার বাবার সেই সংসদে বিচরণ করবো, তা ভাবতে পারিনি। তবে আমার আস্থা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ওপর। আমি জানি ওনার খুব দৃষ্টি অনেক তীক্ষ্ম।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে জাকিয়া তাবাস্সুম আরও বলেন, ‘গোটা পৃথিবীতে এতো বড় নেত্রী (শেখ হাসিনা) আসবে কিনা সন্দেহ আছে? আর আমি তার কাছে যেতে পারবো, তার পাশে বসে থাকার জন্য সংসদে ঢুকবো! আই ডোন্ট বিলিভ ইটস, ইট ইজ ইমাজিন!’

আপনি সংরক্ষিত এমপি হিসাবে মনোনীত হয়েছেন প্রথম কার কাছে বিষয়টি জানতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম এসএমএস এসেছে ডিসি সাহেবের কাছ থেকে। আমাকে এসএমএস দিয়েছেন, কনগ্রাচুলেশন। দ্বিতীয়ত যুব মহিলা লীগের প্রেসিডেন্ট আমাকে এসএমএস দিয়েছে, আর আমি ভাবছি হোয়াই? এরপর আমি টিভিটা যখন অন করছি, তখন অলরেডি আমার নাম ঘোষণা হয়ে গেছে, আমি শেষটুকু দেখেছি। তারপরে ফোনের পর ফোন…। অনেকে ফোন দিচ্ছি, কিন্তু নিজের চোখে না দেখে আমি বিশ্বাস করিনি। ঠিক ল’র রেজাল্টেও এমন হয়েছিল। আমি দেখিনি কিন্তু অনেকে ফোন দিচ্ছিল। লাস্টে টিভি ক্যাপশনে দেখছি, আমার নাম- জাকিয়া তাবাসসুম, দিনাজপুর।

‘তখন আমি নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করলাম এবং তারপর সবার সঙ্গে কথা হলো এবং আমি প্রাউড ফিল করছি। এতো কল এসেছে, আমি কাউকে কল দিতে পারিনি। ইনফ্যাক্ট এনায়েত ভাই-ইকবাল ভাইকেও (এনায়েতুর রহিম, হুইপ ইকবালুর রহিম) না, এতো কল এসেছে। আমি কিন্তু ক্ষুধার্ত, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ভাত রাখা আছে, খেতে পারিনি। এক গ্লাস পানিও খেতে পারিনি।’ বলেন এই রাজপথের নেত্রী।

/পিবিডি/পি.এস

দিনাজপুর,‘প্রধানমন্ত্রী,আওয়ামী লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close