• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

৮৬ রানে হারলো বাংলাদেশ, সোধির ৬ উইকেট

প্রকাশ:  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৫১ | আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১০
স্পোর্টস ডেস্ক

তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ২৫৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪১.১ ওভারে ১৬৮ রানে অলআউট হতে হয়েছে স্বাগতিকদের। ফলে ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগার বাহিনীকে। এ ম্যাচে কিউইদের জয়ের নায়ক ইশ সোধি একাই ৩৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৬ উইকেট।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৫৪ রানের বেশি তুলতে পারেনি সফরকারীরা।

রান তাড়ায় নামা বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য মঞ্চটা ছিলো পরীক্ষারও। বিশেষত তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য একটু বেশি। তারা তাদের দাবিটুকু জানিয়ে রেখেছেন হেরে যাওয়া ম্যাচেও। লিটনের জন্য পরীক্ষা ছিলো না, তবে তার ফর্ম নিয়ে তৈরি হওয়া দুশ্চিন্তা কাটাতে পারেননি তিনি। কাইল জেমিসনের বলে লিটন যখন ক্যাচ যখন ক্যাচ দেন, তখন ১৬ বলে ৬ রান করেছেন। আউট হয়ে ফেরার সময় হতাশায় ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে ব্যাট আছাড় মারেন লিটন।

তিনে খেলতে নামা তানজিদ হাসান তামিমের অভিষেক হয়েছিলো এশিয়া কাপে। কিন্তু সেখানে দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে জায়গাটা পাকা করতে পারেননি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো সেটি এবার করতে পারা তার জন্য খুব সম্ভব। কিন্তু ৩ চার মারা এই ব্যাটার ১২ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি।

ইনসাইট-আউট করে শট খেলতে গিয়ে উপরে উঠে যাওয়া বল ইশ সোধির বলে ক্যাচ দেন মিড অফে দাঁড়ানো লুকি ফার্গুসেনকে। কোথাও রান না করা সৌম্য সরকার দ্বিতীয় বলে ফিরেছেন শূন্য রান করে। স্নায়ুচাপে ভোগা এই ব্যাটার সোধির ‘লোপ্পা’ বলে ‘দৃষ্টিকটুভাবে’ ক্যাচ দেন তার হাতেই। বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাকা থাকা তাওহীদ হৃদয়ও দলের রান বড় করতে পারেননি। ৭ বলে ৪ রান করে সোধির বলে বোল্ড হন তিনি।

এই পুরোটা সময়ই একপ্রান্ত আগলে থাকেন তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের পর অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। তাকে পরে ফিরিয়ে আনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পিঠের চোটে এশিয়া কাপেও খেলতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেললেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে নেমে শুরুতে তার ব্যাটে বল আসছিলো না ঠিকঠাক।

কিন্তু সময় যতো গড়িয়েছে, ততোই ছন্দ ফিরে পেয়েছেন তিনি। ষষ্ঠ ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে একটি ও কাইল জেমিসনকে সপ্তম ওভারে দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। জ্বলে উঠে ফোনের ফ্ল্যাশও। ওই দুই ওভারের পর তামিম খেলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। যদিও ইনিংস ততোটা লম্বা করতে পারেননি।

৭ চারে ৫৮ বলে ৪৪ রান করে সোধিকে সুইপ করতে যান, তখন তার গ্লাভসে লাগলে ক্যাচ যায় উইকেটরক্ষক টিম ব্লান্ডেলের কাছে। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় নিউজিল্যান্ড, তামিম এরপরই হাঁটা ধরেন সাজঘরের পথে। পরের গল্পের পুরোটাই ছিলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ঘিরে। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। এরপর তাকে নিয়ে ছিলো নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্বকাপের আগে এই ম্যাচটি ছিলো তার একমাত্র পরীক্ষার জায়গা। সেটিতে কি পাশ করেছেন রিয়াদ? জানা যাবে দুয়েকদিনের মধ্যে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ দল ঘোষণায়।

তবে তাকে ঘিরে গ্যালারির উচ্ছ্বাস ছিলো স্পষ্ট। প্রতিটি রানের পরই চিৎকার করছিলেন সমর্থকরা। একটা সময় যখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা একদমই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিলো, তখনো গ্যালারি ভর্তি দর্শকের চোখ ছিলো মাঠে; কারণ রিয়াদ তখনো ব্যাট করছিলেন। তাকে অবশ্য একটু আফসোস নিয়েই ফিরতে হয়েছে। কোলি ম্যাককঞ্চির যেকোনো জায়গায় পাঠানো যাবে, এমন বল শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হন রিয়াদ। ৭৬ বলে ৪৯ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় রিয়াদকে।

তার ফেরার সঙ্গে দর্শকরাও ছাড়তে থাকেন গ্যালারি। বাংলাদেশের ম্যাচের একদমই ক্ষীণ যে সম্ভাবনা ছিলো, সেটিও শেষ হয় অবধারিতভাবেই। তবে এরপরই একটা প্রাপ্তি ছিলো নাসুম আহমেদের ব্যাটিং। এশিয়া কাপে ভারত ম্যাচের পর এটিতেও রান পেয়েছেন তিনি। ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ বলে করেন ২১ রান।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। গত ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা মোস্তাফিজুর রহমান এই ম্যাচেও বাংলাদেশকে দাপুটে শুরু এনে দেন। দলীয় ১৫ রানের মাথায় মোস্তাফিজের শর্ট ডেলিভারিতে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে তালুবন্দী হন ওপেনার উইল ইয়ং।

প্রথম উইকেটের পর দ্বিতীয় উইকেটের জন্যও খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। দলীয় ২৬ রানের মাথায় আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকে ফেরান দ্য ফিজ। মোস্তাফিজের অফ স্ট্যাম্প করিডোরে করা ডেলিভারিতে মিড অফের ওপর দিয়ে শট গিয়ে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন অ্যালেন। ১৫ বলে ১২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

এরপর চ্যাড বোসকে নিয়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে কিউইরা। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। মোস্তাফিজের পর এবার উইকেটের খাতায় নাম লেখান অভিষিক্ত পেসার খালেদ হোসাইন। দলীয় ৩৬ রানের মাথায় নিজের প্রথম ওয়ানডে উইকেট তুলেন নেন ডানহাতি এই পেসার। তার লাফিয়ে ওঠা বলে স্কয়ার লেগের দাঁড়িয়ে থাকা তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলেন দেন চ্যাড। ১৯ বলে ১৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

এরপরই যেন পাল্টে যায় নিউজিল্যান্ড। হেনরি নিকল ও টম ব্লান্ডেলের ১০৫ রানের জুটিতে ভর করে লড়াকু স্কোরের ইঙ্গিত দেয় কিউইরা। দীর্ঘক্ষণ ধরে উইকেট শূন্য থাকা বাংলাদেশ সাফল্য পায় দলীয় ১৩১ রানে। নিজের দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেয়ে যান খালেদ। ব্যাক অফ লেন্থ ডেলিভারিতে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিকলস। মাত্র ১ রানের জন্য ফিফটি পূরণ হয়নি বাঁহাতি এই ব্যাটারের। ৬১ বলে ৪৯ রান করে ফেরেন তিনি।

চতুর্থ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেট হারাতেও খুব বেশি সময় লাগেনি সফরকারীদের। দলীয় ১৫৭ রানের মাথায় শেখ মেহেদীর বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন রবীন্দ্র রাচীন। ১৪ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

এরপর দলীয় ১৬৬ রানের মাথায় উইকেটের খাতায় নাম লেখান হাসান মাহমুদ। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠা টম ব্লান্ডেলকে ফেরান এই ডানহাতি পেসার। হাসানের দুর্দান্ত ইয়র্কারে কোনো জবাব দিতে পারেননি ব্লান্ডেল। তবে আউটে আগে ৬৬ বলে ৬৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি পেসার।

এরপর দলীয় ১৮৭ রানে কোলে ম্যাককনচিকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন নাসুম আহমেদ। তবে ইশ সোধি ও কাইল জেমিসনের ব্যাটে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানায় কিউইরা। তবে সেই জুটিও বেশি লম্বা হতে দেননি মেহেদী। তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। দলীয় ২১৯ রানের মাথায় মেহেদির করা বল মিড অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে তার হাতেই ধড়া পড়েন জেমিসন। ২৭ বলে ২০ রান আসে ডানহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে।

উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন নাসুমও। ৩৯তম ওভারের প্রথম বলে এলবিডাব্লিউ করেন কোলি ম্যাককঞ্চিকে (২০)। কাইল জেমিসনকে (২০) কট অ্যান্ড বোল্ড করেন মেহেদি।

৪৬তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার ইশ সোধিকে মানকার্ডিংয়ের ফাঁদে ফেললেন হাসান মাহমুদ। আউট হয়ে সাজঘরের দিকেই ফিরছিলেন সোধি। কিন্তু অধিনায়ক লিটন ফিরতে দিলেন না। নিজেদের আবেদন তুলে নিয়ে সোধিকে আবারো উইকেটে ফিরিয়ে আনলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। হাসতে হাসতে ফের উইকেটে ফেরার আগে তরুণ হাসান মাহমুদকে বুকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করলেন কিউই তারকা। এরপর অবশ্য খালেদের বলে ৩৫ রানে ফেরেন তিনি। সোধি ফেরার পর শেষ পর্যন্ত ২৫৪ রানে থামল সফরকারীরা।

অভিষিক্ত খালেদ ৯.২ ওভারে ৬০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া ৪৫ রানে ৩টি নিয়েছেন শেখ মেহেদি। মুস্তাফিজ নিয়েছেন ২টি।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

উইকেট,বাংলাদেশ,রান,নিউজিল্যান্ড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close