• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৫০ | আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৩৫
স্পোর্টস ডেস্ক

আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো বাংলাদেশ। শনিবার (৭ অক্টোবর) ভারতের ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৭.২ ওভারেই সব উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে আফগানরা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ৯২ বল থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।

এদিন টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় শুরু হয় ম্যাচটি, যা সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।

বাংলাদেশের জন্য ম্যাচের শুরুটা ছিলো ভীষণ হতাশার। আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটার রান করছিলেন। টাইগার ক্রিকেটারদের শরীরি ভাষাও ছিলো কেমন যেন। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান ব্রেক থ্রু এনে দিলেন প্রথম। এরপরও বাংলাদেশ দলের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তিনি একাই যেন আফগানদের ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শেষ পর্যন্ত মোস্তাফিজের স্লোয়ারে ধরা খেয়ে ৪৭ রানে গুরবাজ আউট হওয়ার পর সব শঙ্কা দুর হয়ে যায়। বাকি উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে তুলে নিতে মোটেও কষ্ট হয়নি সাকিব, মিরাজ, শরিফুল, মোস্তাফিজ এবং তাসকিন আহমেদদের।

ইনিংসের ৯ম ওভারের দ্বিতীয় বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্রথম সাজঘরে ফেরেন ইবরাহিম জাদরান। ২৫ বলে ২২ রান করে আউট হলেন আফগান এই ওপেনার। তাদের দলীয় রান তখন ৪৭।

এরপর দ্বিতীয় উইকেট নিতেও সাকিবেই ভরসা করতে হলো বাংলাদেশ দলকে। আফগান ব্যাটাররা যখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে যাচ্ছিলো, তখন সাকিবের বলেই ক্যাচ তুলছেন তারা। সে ধারাবাহিকতায় আফগান টপ অর্ডার রহমত শাহের উইকেটটাও নিলেন সাকিব আল হাসান।

ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে মিড অফে ক্যাচ তুলে দেন রহমত। সেই ক্যাচ তালুবন্দী করে নেন লিটন দাস। ৮৩ রানের মাথায় পড়লো আফগানদের দ্বিতীয় উইকেট।

২৫ আগের ওভারে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদির উইকেট তুলে নেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজকে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন শহিদি। তাওহিদ হৃদয় সেই ক্যাচটা লুফে নিতেই পতন ঘটে আফগানদের তৃতীয় উইকেটের।

ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। উইকেটে টিকে থাকতে পারলে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন এই আফগান ওপেনার, এর আগে অনেকবার দেখিয়েছিলেন। এবারও ধর্মশালার এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে সে পথেই হাঁটছিলেন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একের পর এক বোলার পরিবর্তন করেও রহমানুল্লাহ গুরবাজের উইকেটে স্পর্শ লাগাতে পারছিলেন না।

অবশেষে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ব্যাটারকে সাজঘরের পথ দেখালেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। সে সঙ্গে পেসাররা সাফল্য পাচ্ছিল না বলে যে আফসোস তৈরি হয়েছিলো, সেটা কাটাতে পারলেন মোস্তাফিজ। ৪৭ রানে থাকা গুরবাজকে ডিপ কভারে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মোস্তাফিজ। তার স্লোয়ার বুঝতে না পেরেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন গুরবাজ। কিন্তু ডিপ কভারে দাঁড়িয়ে থাকা তানজিদ তামিম ক্যাচটি তালুবন্দী করতেই শেষ হয়ে গেলো আফগানদের সম্ভাবনাময়ী একটি ইনিংস।

দলীয় ১১২ রানের মাথায় আউট হন গুরবাজ। এরপর শুধুই আফগানদের অলআউট হওয়ার অপেক্ষার পালা। আজমতউল্লাহ ওমরজাই ২০ বলে ২২ রান না করলে আরো আগে অলআউট হতে হতো তাদেরকে। নজিবুল্লাহ জাদরান (৫), মোহাম্মদ নবি (৬), রশিদ খান (৯), মুজিব-উর রহমান ১ এবং নাভিন-উল হক (০) আউট হলেই যবনিকাপাত ঘটে আফগান ইনিংসের।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। মেডেন নেন ৩ ওভার। সাকিব ৮ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট। ২ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। ১টি করে উইকেট নিলেন তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।

১৫৭ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম রান আউট হন খুবই অদ্ভূতভাবে। পরে লিটন দাস যখন ফিরলেন, একটু ভয় ভয়ও হয়তো হচ্ছিলো সবার। কিন্তু ছিলেন একজন, এখন তিনি অবশ্য এখন নিয়মিতই থাকছেন বেশ ভালোভাবে- মেহেদী হাসান মিরাজ। উদাহরণটা ঠিকঠাক হলো কি না কে জানে, তবে বাংলাদেশের তরকারিতে আলু একটি ‘কমন’ ব্যাপার। মিরাজ বাংলাদেশ দলে দিন দিনই হয়ে উঠছে তেমন কিছু।

যখন, যেখানে নামছেন; দরকার হচ্ছে বল হাতে, পারফর্ম করছেন দ্বিধাহীনভাবে। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি ছুয়েছিলেন। এবার রান পেলেন মূল পর্বের ম্যাচেও। রান নিতে মাঝপথে গিয়ে আউট হয়ে লিটনের ’না’তে ফিরে আসতে হয় তানজিদ হাসানকে। পরে অবশ্য তানজিদও ড্রাইভ দেননি, জোরেও দৌড়াননি। ১৩ বলে ৫ রান করে ফিরতে হয় সাজঘরে।

এরপর লিটন দাস ফজল হক ফারুকির বলে ইনসাইড এজে হন বোল্ড। ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। পরের গল্পটা মিরাজের। তিনে ব্যাট করতে এসে দুর্দান্ত করেন তিনি। মাঝে একবার এলবিডব্লিউ আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরির পর মিরাজ আউট হয়েছেন নাভিন উল হকের ওভারে রশিদ খানের লাফিয়ে উঠে নেওয়া দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৫ চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। তার বদলে সাকিব এসে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টেকেননি। ১৯ বলে ২ চারে ১৪ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

এরপর অবশ্য বিপদ ঘটেনি আর। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন শান্ত। ষষ্ঠ ফিফটি তুলে নিয়ে ৮৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

পূর্বপশ্চিমবিড/এসএম

বাংলাদেশ,জয়,ওয়ানডে বিশ্বকাপ,আফগানিস্তান
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close