• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

জাপান রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সংবর্ধিত তিন প্যারা শাটলার

প্রকাশ:  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৯
ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশের তিন প্যারা শাটলার জয়তু ধর, মোহাম্মদ আলী ইমাম এবং ইয়ামিন হোসেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পদক জেতার মধ্য দিয়ে আগেই নিজেদের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তারা। এবার আরো এক কীর্তিতে নাম লেখালেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরের বাসভবনে আজ বুধবার, ৬ ডিসেম্বর এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে পদক জয়ী এ তিন প্যারা শাটলার জয়তু, ইমাম এবং ইয়ামিনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। শাটলারদের সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজেরও আয়োজন করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। দুপুর ১২টায় নিজ বাসভবনে অতিথিদের সস্ত্রীক অভ্যর্থনা জানান কিমিনোরে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিন প্যারা শাটলার ছাড়াও তাদের কোচ বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এক সময়ের কোর্ট কাঁপানের শাটলার এনায়েত উল্যা খান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশের (এনপিসি, বাংলাদেশ) মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান, প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের দুই সহসভাপতি মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান ও কাজী নজরুল ইসলাম, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) ডেপুটি ডিরেক্টর রাশিদুজ্জামান সেরনিয়াবত, প্যারা ব্যাডমিন্টনের সদস্য এবং জাতীয় নারী দলের তারকা শাটলার এলিনা সুলতানা, মিৎসুবিশির ডিরেক্টর লি মায়োঙ্গো, প্যারা শাটলার নয়ন অধিকারী, মোহাম্মদ নাসিমসহ অন্যরা।

চলতি বছরের ১০ নভেম্বর টোকিওতে অনুষ্ঠিত ‘জাপান প্যারা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট-২০২৩’ এর ডাবলস ইভেন্টের সেমিফাইনালে ওঠার মধ্য দিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন বাংলাদেশের দুই প্যারা শাটলার আলী ইমাম ও জয়তু ধর। এর আগে সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়াতে অনুষ্ঠিত ফক্সেস ইন্টারন্যাশনাল প্যারা ব্যাডমিন্টন থেকে ব্রোঞ্জ জেতেন আরেক প্যারা শাটলার ইয়ামিন হোসেনও। বাংলাদেশের প্যারা ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক দুটি বড় আসরে অংশ নিয়ে পদক জেতার নজির গড়েন বাংলাদেশের তিন প্যারা শাটলার (প্রতিবন্ধী)।

আজ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ব্রোঞ্জ জয়ী জয়তু ধর বলেন, ‘আমি প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি জাপানে এত বড় একটি আসরে খেলার সুযোগ পাব। এটা আমার স্বপ্নপূরণের মতো। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে আমাদের কোচ এনায়েত উল্যা খান স্যারের কল্যাণে। স্যার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই আমাদের কঠোর অনুশীলন করিয়েছেন। এরপর জাপানে গিয়ে টুর্নামেন্টে পদক জয় অবধি স্যার যেভাবে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে আমরা তা কোর্টে বাস্তবায়নের শতভাগ চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের শুরু। আশাকরি ভবিষ্যতেও স্যারের নেতৃত্বে আমরা দেশের জন্য আরো অনেক সাফল্য, পদক জিতে দেশ ও জাতির সম্মান-মর্যাদাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরব।’

জয়তুর সুরে সুর মিলিয়ে ইমাম বলেন, ‘জাপানের রাষ্ট্রদূত আজ আমাদের যে সম্মান জানালেন এটা আমরা জীবনেও ভুলব না। পদক জয়ের পর যে আনন্দ হয়েছিল, আজ সংবর্ধনা পেয়ে একই আনন্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। আমি জাপান রাষ্ট্রদূতসহ, জাপানের সমস্ত কর্মকর্তা, এনপিসি এবং সর্বোপরি এনায়েত স্যারকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাব। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা ভবিষ্যতে আরো পদক জিততে পারি।’ জাপানের পদক জয়ের নেপথ্যের কারিগর কোচ এনায়েত উল্যা খান বলেন, ‘আমাদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করায় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরিকে বিশেষ ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত লি মায়োঙ্গোসহ দূতাবাসে নিযুক্ত সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এত সুন্দর একটা আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। খেলোয়াড়ী জীবনে দেশের জন্য অনেক পদক-সম্মাননা জিতলেও আজকের দিনটি আমার জন্য বিশেষ। কারণ কোচ হিসেবে বিশেষ করে প্যারা শাটলারদের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটাই অন্যরকম। ইমাম, জয়তু, ইয়ামিনরা মাঠে পরিশ্রম করে সাফল্য বয়ে এনেছে বলেই আমরা এমন সংবর্ধনা পেয়েছি। ওরা অনেক পরিশ্রম করে এই সাফল্য বয়ে এনেছে। এমন সাফল্যের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। আশাকরি ভবিষ্যতে ওরা অলিম্পিক থেকেও পদক জিতবে এবং দেশকে গর্বিত করবে।’

এনায়েত উল্যা খানের হাত ধরে মাত্র ৩০/৩৫ জন প্যারা শাটলার নিয়ে প্যারা ব্যাডমিন্টনের যাত্রা শুরু। সেই সংখ্যাটা এখন প্রায় ১৫০- এ গিয়ে ঠেকেছে। এমন তথ্য পেয়ে দারুণ খুশি বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের মূল নায়ক হলেন বাংলাদেশের প্যারা শাটলাররা। যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পদক জিতে এনেছে। পদক জয়ীদের আমার পক্ষ থেকে, আমার দূতাবাস এবং জাপানের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ। আমি আরো ধন্যবাদ জানাই অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিবর্গকে। এনপিসির মহাসচিব, বাংলাদেশ প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কর্মকর্তাসহ কোচ এনায়েত উল্যা খানকে। বাংলাদেশ প্যারা স্পোর্টসে দারুণ করছে। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। জাপান সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। ভবিষ্যতে যে কোনো প্রয়োজনে প্যারা ব্যাডমিন্টনের পাশে থাকবে।’ মধ্যাহ্নভোজের পাশাপাশি জাপান রাষ্ট্রদূতের স্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ উপহার টাপেস্ট্রি (নিজ হাতে বানানো) উপহার সামগ্রী পান বাংলাদেশের দুই প্যারা শাটলার জয়তু ধর এবং আলী ইমাম।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এনপিসির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ইমাম, জয়তু, ইয়ামিনরা আমাদের প্যারা ব্যাডমিন্টনের গর্ব। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সাফল্য বয়ে আনা যে কোনো ক্রীড়া ইভেন্টের জন্যই চ্যালেঞ্জের। সেখানে আমাদের তিন প্যারা শাটলার যা করে দেখালেন এটি সত্যিই বিরল। জাপানের রাষ্ট্রদূত আজ আমাদের সংবর্ধনা দিলেন। এজন্য আমি তাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জাপান আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। সব সময়ই জাপান আমাদের পাশে ছিল; আশাকরি তারা ভবিষ্যতেও থাকবে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্যারা ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান বলেন, জাপানের আতিথেয়তায় আমরা ভীষণভাবে মুগ্ধ। রাষ্ট্রদূত নিজের বাসভবনে ডেকে আমাদের যে সম্মান জানালেন এটা ভুলবার নয়। প্যারা ব্যাডমিন্টনে আমাদের ছেলেরা দারুণ করছে। আজকের সংবর্ধনা তাদের প্রমাণ বহন করে। আমাদের বাংলাদেশ খুবই সুন্দর একটা দেশ। আমি জাপানের বন্ধুদের বলব আপনারা আমাদের দেশটা ঘুরে দেখেন। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন রয়েছে, আছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারসহ আরো অনেক দর্শনীয়স্থান।’

অনুষ্ঠানে প্যারা ব্যাডমিন্টনের আরেক সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পদক জয়ী শাটলারদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করায় রাষ্ট্রদূত মহোদয়কে বিশেষ ধন্যবাদ। প্যারা শাটলাররা সত্যিই অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে দেশের জন্য পদক বয়ে এনেছেন। আমি ইমাম, জয়তুদের কীর্তিতে গর্বিত। এমন একটা অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে আনন্দিত।

প্যারা ব্যাডমিন্টন,ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close