• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নীলফামারী জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়ের আদেশ উপেক্ষা করার অভিযোগ

প্রকাশ:  ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২৩:০৫
নীলফামারী প্রতিনিধি

স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে নীলফামারী পৌরসভার কাছে হস্তান্তর হওয়া সরকারী জায়গা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ।

মেয়র কামাল আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে জেলা পরিষদের হস্তান্তর হওয়া জায়গা পৌরসভার নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও হঠাৎ করে জেলা পরিষদের মালিকানা দাবী করে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তবে সুধিজনেরা মনে করছেন উন্নয়ন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করা। কোন প্রভাবের কারণে অনগ্রসর জেলা থেকে অগ্রসর জেলার দিকে ধাবিত হওয়া নীলফামারী যেন স্থবির হয়ে না পড়ে।

নীলফামারী পৌরসভা সুত্র জানায়, ১৯৬২সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৬৮সালের ১৫জুন রংপুর জেলা পরিষদের সাধারণ অধিবেশনের ১২নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৭৪সালে নীলফামারী পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত আহসান আহমেদ হাচানের কাছে ২.৮১ একর জায়গা হস্তান্তর করা হয়।

হস্তান্তর হওয়া ওই জমির মধ্যে ১.১৪ একরে নীলফামারীর প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী খয়রাত হোসেনের নামে ‘খয়রাত হোসেন মার্কেট’ নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে মার্কেটটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী মাইদুল ইসলাম মুকুল। এ সময় তৎকালীন হুইপ দেওয়ান নুরুন্নবীসহ নীলফামারী পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রয়াত আহসান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

পরবর্তিতে ৮২ শতাংশ জমির উপরে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নিত করণ(সেক্টর) প্রকল্প-২’র আওতায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ তলা ভিত বিশিষ্ট পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ এবং ৫৮শতাংশের উপর গুরুত্বপুর্ন ১৯পৌরসভা প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৮৬লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

২০১৭সালের ২৬ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব আনজুমান আরা স্বাক্ষরিত পত্রে শিশু পার্ক নির্মাণ, রাস্তা ঘাট উন্নয়ন এবং নগর উন্নয়নের স্বার্থে নীলফামারী জেলা পরিষদের মালিকানাধীন দাগ নং ১০০০ এ .২৭একর, দাগ নং ৮২৭ এ ১.১৪একর, ৫৯৫১ এ .৮২একর,দাগ নং ৮২২, ৮২৩, ৮২৪ ও ৮২৫ এ .৫৮ একরসহ মোট ২.৮১ একর জায়গা নীলফামারী পৌরসভার নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়।

এরই মধ্যে ২০১৮সালের মে মাসে মন্ত্রনালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে উল্লেখিত জায়গা জেলা পরিষদের দাবী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। রিটের প্রেক্ষিতে ওইসব জায়গার উপর স্থিতিতাবস্থা জারী করেন উচ্চ আদালত।

নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, যথাযথ ভাবে জেলা পরিষদের ২.৮১ একর জায়গার মালিক হয়েছে নীলফামারী পৌরসভা। নীলফামারী পৌরসভা এগিয়ে যাচ্ছে সবদিক থেকে। যার সুফল ভোগ করছেন পৌরসভারসম্মানিত নাগরিকগণ।

ওইসব জায়গার উপর উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু বাঁধা দেয়া হচ্ছে উদ্দেশ্য মুলক ভাবে। মুলত নীলফামারীকে উন্নয়ন বি ত রাখতে এমনটি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৭কোটি টাকা ব্যয়ে খয়রাত হোসেন মার্কেটটি আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিংসহ আধুনিক মানের মার্কেটে রুপান্তরের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছিলো সেটি স্থগিত হয়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত ডোবায় শিশু পার্ক নির্মাণ কাজ শুরু হলো। ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ এবং পৌর সুপার মার্কেটের উদ্বোধন করেছিলেন নীলফামারী-০২ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।

পার্কটির কাজ এগিয়েছে অনেকদুর কিন্তু মামলা করা হলো যার কারণে পৌর সুপার মার্কেটের সম্প্রসারণ, খয়রাত হোসেন মার্কেট এবং শিশু পার্কের কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, নিশ্চয় আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন।

পৌরসভার প্রকৌশল শাখা সুত্র জানায়, নীলফামারী পৌর সুপার মার্কেটে ১৪৮টি এবং খয়রাত হোসেন মার্কেটে ৪২টি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

সচেতন নাগরিক কমিটি(সনাক) নীলফামারীর সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, অনগ্রসর জেলা থেকে ক্রমস অগ্রসরের দিকে ধাবিত হচ্ছে নীলফামারী।

‘উন্নয়নের শিল্পনগরী, দিপ্তীমান নীলফামারী’ এখন গোটা দেশে স্থান করে নিয়েছে।

আমরা চাইবো উন্নয়নে যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে এখানে। এমন কোন পদক্ষেপ যাতে গ্রহণ করা না হয়, যার জন্য থমকে যেতে পারে কাঙ্খিত উন্নয়ন কার্যক্রম।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও নীলফামারী পৌর সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও হোসেন খান মানিক বলেন, পৌর সুপার মার্কেট নীলফামারী শহরের সৌন্দর্যই শুধু বৃদ্ধি করে নি, ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটিয়েছে।

আমি মনে করি আরো আগে এসব হওয়া দরকার ছিলো। অতিদ্রæত ভবনটি উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণ প্রয়োজন। কারণ অনেকে জায়গা পাচ্ছেন না ব্যবসায় বাণিজ্য করার জন্য।

জানতে চাইলে নীলফামারী জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল কবির বলেন, নীলফামারী পৌরসভার অফিস ভবন ছাড়া আর কিছু নেই। পৌরসভার নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই। সকল জায়গার মালিক জেলা পরিষদ।

তিনি বলেন, মন্ত্রনালয় পৌরসভার কাছে জায়গা হস্তান্তর করেছে যেটি বলা হচ্ছে এটি ঠিক নয় কারণ মন্ত্রনালয় জায়গা হস্তান্তর করতে পারে না, এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের প্রস্তাব ছিলো না। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান। আদালত যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।

জানতে চাইলে নীলফামারী-০২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর বলেন, সবার আগে দেখতে হবে প্রয়োজনীয়তাকে। এক্ষেত্রে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করা যেতো।

আমি দেখেছি শিশু পার্কের জায়গাটি পৌরসভাকে দেয়া হয়েছে অথচ সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মামলা করা সঠিক কাজ হয়নি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের। দেখতে হবে সবার আগে উন্নয়ন।

পিবিডি/ ইকা

অভিযোগ,আদেশ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close