• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

অস্ত্রোপচারের ২০ বছর পর পেটে মিলল কাঁচি

প্রকাশ:  ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৪:৩৬ | আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:২৩
মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রায় ২০ বছর আগে মেহেরপুরের গাংনীর একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করা হয়েছিল বাচেনা বেগম নামে এক নারীর। এরপর দীর্ঘদিন অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে এক্স-রে করার পর জানা গেছে, তার পেটে কাঁচি রেখেই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছিলেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে সোমবার বিকেলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

সম্পর্কিত খবর

    চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাচেনা খাতুনের বয়স এখন ৪৭ বছর। চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমিও বেচে দিয়েছিলেন স্বামী আব্দুল আজিজ। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিক নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।সেই অস্ত্রোপচারে স্বস্তির বদলে মিলেছে দীর্ঘ অসহনীয় যন্ত্রণা আর আর্থিক অনটন।

    বাচেনা বেগমের ভোগান্তি প্রসঙ্গে স্বামী আব্দুল আজিজ জানান, ২০ বছর আগে স্ত্রীর পেটে জ্বালা-যন্ত্রণার কারণে তাকে গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিকে নিয়ে যান তিনি। চিকিৎসক জানান, বাচেনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে, দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এরপর ওষুধপত্র ও অপারেশন বাবদ ২০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল রাজা ক্লিনিকের মালিক পারভিয়াস হোসেন রাজার সাথে। বাচেনাকে বাঁচানোর’জন্য শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে দেন কৃষি শ্রমিক আব্দুল হামিদ।

    ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন বলেন, এত দিন ধরে পেটের ভেতর মাঝেমধ্যে যন্ত্রণা করলে স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে গ্যাসের ও ব্যথার ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কয়েক দিন আগে পেটে অসহনীয় ব্যথা শুরু হলে রোববার রাজশাহীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার জন্য যান। পরে সেখানে এক্স-রে করে চিকিৎসক দেখতে পান, পেটের মধ্যে কাঁচি রয়েছে।

    বাচেনা খাতুনের এক্স-রে চিত্রটি দেখেছেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুর রেজা। প্রথম আলোকে জাহিদুর রেজা বলেন, বাচেনা খাতুন তার কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁর পেটের ভেতরে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত কাঁচি রয়েছে। তাকে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে কাঁচিটি অপসারণ করতে হবে। আপাতত তাঁকে ওষুধপথ্য দেওয়া হয়েছে।

    অভিযুক্ত রাজা ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও চিকিৎসক পারভিয়াস হোসেন ওরফে রাজা বলেন, মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। মানুষের ভুল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দোষ এড়ানো যায় না। যদিও তখন কর্মরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান বাচেনা খাতুনের অপারেশনটি করেছিলেন। তিনি ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির সুরাহা করতে চান।

    জানতে চাইলে গাংনী ইউএনও মৌসুমি খানম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ এখনো হাতে পাননি তিনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্য ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    মেহেরপুরের সিভিল সার্জন জওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমি শুনিনি। তবে এটা ঘটে থাকলে খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভুক্তভোগী পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে বিষয়টি আইনগতভাবে সুরাহা হবে বলেও জানান তিনি।

    পূর্বপশ্চিম এনই

    পেটে মিলল কাঁচি. মেহেরপুর

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close