• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ভোর থেকেই টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড়

প্রকাশ:  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৩২
সাভার প্রতিনিধি

ঢাকার সাভারে আজ থেকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হলেও টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় যেন কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। গত তিন দিন বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে প্রশাসনকে। চরম বিশৃঙ্খলায় ধাক্কাধাক্কিতে আহত ও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। তবে গতকাল শুক্রবার কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আজ আবার অতিরিক্ত মানুষের চাপে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার ভোর থেকেই সাভার পৌর এলাকায় বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার আগের মতো টিকা প্রত্যাশীদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষের গাদাগাদিতে চরম বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ে।

পৌরসভা ও ইউনিয়নের ওয়ার্ডসহ প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের কথা জানিয়েছে প্রশাসনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

সাভারে বাংলাদেশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে ভোর ৫টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় নাগাদ টিকা দিতে পারেননি পোশাক কারখানার শ্রমিক ইসমাইল হোসেন।

ইসমাইল বলেন, ভোর থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছি প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার জন্য। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের বিশৃঙ্খলায় লাইন ভেঙে যাচ্ছে। যে যার মতো ধাক্কাধাক্কি করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কথাও কেউ মানছেন না। এই অবস্থায় কতক্ষণ পর টিকা দিতে পারবো জানি না।

হায়দার আলী নামে আরেক টিকা প্রত্যাশী বলেন, গতকাল ভালো ভাবে অনেকে সুষ্ঠু ভাবে টিকা দিতে পারলেও আজ আবার চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের ভিড় যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকা ভিড় ঠেলে কিভাবে টিকা নেব বুঝতে পারছি না।

অপরদিকে শনিবার ভোর ৫টা থেকেই আশুলিয়ার ডেন্ডাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অসংখ্য নারী ও পুরুষ টিকা নিতে ভিড় জমান।

এরপর সকাল ৯টা নাগাদ টিকা প্রত্যাশীদের দীর্ঘ সারি স্কুল মাঠ ছাড়িয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কসহ ফুটপাতে চলে আসে। উপজেলার প্রায় সব গুলো টিকা কেন্দ্রেই একই চিত্র রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভোর ৬টা থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছেন স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক আনোয়ারা বেগম। সকাল ৯টা নাগাদ তার অবস্থান মহাসড়কের ফুটপাতের দীর্ঘ সারিতে। তবে ততক্ষণে তিনি জানতে পারেন তাকে টিকা দিতে হবে সাভার উপজেলায় গিয়ে। এতে হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।

আনোয়ারা বলেন, ‘টিকা নিতে দাড়াইছি ভোর ৬টা বাজে। এখন আবার ওনারা বলতাছে সাভার যান। এটি কি ঠিক হলো? অফিস অ্যাফসেন (অনুপস্থিত) কইরা আইজকা আসছিলাম। এখন একদিনের এক হাজার ট্যাকা মাইর (কাটা)। তাহলে ক্যামনে আমরা চলমু? আমরাতো গরীব মানুষ।’

পোশাক শ্রমিক নূরজাহান বেগম বলেন, ‘অফিস থাইকা ছুটি নিয়া সকাল ৮টা বাজে আইসা দাড়াইছি। টিকা নিয়া আবার অফিসে যাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক বড় লাইন। কখন টিকা নেয়া শুরু করবো কইতে পারি না। দেরি হলে গার্মেন্টেও ঢুকতে দিবো না। হাজিরার ট্যাকা কাইটা নিবো।’

জাহাঙ্গীর হোসেন নামে আরেকজন বলেন, অনেকেই রাত ভোর ৩-৪টার দিকে আসছে। কিন্তু সকাল পৌনে ৯টা বাজে এখনও ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করে নাই। মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আরো আগে থেকে টিকা দেয়া উচিত ছিলো।

সাভারে একযোগে পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নের ২৬টি কেন্দ্রে গণটিকা কার্যক্রমে ভোর থেকেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ভোগান্তি কমাতে আরো সকাল থেকে টিকাদান শুরুর দাবি সাধারণ মানুষের।

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাঈনুল ইসলাম বলেন, আজকে পৌর এলাকার সব গুলো টিকা কেন্দ্রে মানুষের অনেক ভিড়। আমাদের পুলিশও পর্যাপ্ত আছে। ইউএনও সাহেবকে আনসার সদস্য দেয়ার জন্যও বলেছি। মানুষ যখন সেবা পায় তখন তার প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ‘আজকে অবস্থা খুব খারাপ। হাজার হাজার মানুষ টিকা নিতে ভিড় করছে। আমি নিজে মাইকিং করছি মানুষ যাতে সুষ্ঠু ভাবে টিকা নেয়।’

প্রসঙ্গত, সাভারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে গত ৫ দিনে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষকে গণটিকা প্রদান করা হয়েছে। আজ বিকেল ৩টা পর্যন্ত আরও ৫০ হাজার মানুষকে টিকা প্রদানের টার্গেট নেয়া হয়েছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

গণটিকা,সাভার

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close