• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ধর্ষণ চেষ্টার বিচার না পেয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

প্রকাশ:  ০৮ মার্চ ২০২২, ১৮:২০ | আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৯:১৩
যশোর প্রতিনিধি

যশোরের মনিরামপুরে পূর্ণিমা দাস (৪৫) নামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গ্রাম্য শালিসে বিচার না পেয়ে লজ্জায় ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের।

সোমবার (৭ মার্চ) নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন ওই গৃহবধূ। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) বিকেলে পুলিশ তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে।

মৃত পূর্ণিমা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ঋষিপল্লির সনজিৎ দাসের স্ত্রী। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী ছিলেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার গৃহবধূর স্বামী সনজিৎ দাস বাদী হয়ে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকিরের ভাই মিজানুর ফকিরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একই সঙ্গে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মোস্তফা ও গ্রামের একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক আবুল সরদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূর স্বামী।

পুলিশ সিরাজুল ফকির ও আবুল সরদারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে। তাদের বাড়ি মনোহরপুরের কাচারিবাড়িতে।

এর আগে, গত ৭ মার্চ রাতে সিরাজুল ফকির, আবুল সরদার ও আসাদুজ্জামান আসাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় থানা পুলিশ। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় আজ দুপুরে পুলিশ আসাদুজ্জামান আসাদকে ছেড়ে দেয়।

জানা যায়, গত শনিবার (৫ মার্চ) রাতে পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় স্থানীয় মিজানুর ফকির। পরের দিন রোববার স্বামী সনজিৎ দাসকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে আসেন পূর্ণিমা। অভিযোগপত্র লেখার পর সনজিৎ দাসের কাছে ফোন করেন গোলাম মোস্তফা ও সিরাজুল ফকির। পরে সনজিৎ ও তার স্ত্রীকে এলাকায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলে অভিযোগপত্রটি ছিড়ে ফেলেন।

পূর্ণিমার স্বামী সনজিৎ দাস বলেন, আমরা ফিরে গেলে অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরকে বাদে রোববার (৬ মার্চ) রাতে শালিসে বসেন সিরাজুল মেম্বর, মোস্তফা মেম্বর ও আবুল সরদারসহ কয়েকজন। শালিসে তারা পূর্ণিমাকে অপমানজনক নানা কথা বলেন। অভিযুক্ত মিজানুর উপস্থিত না থাকায় শালিস হয়নি।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে পরের দিন এলাকায় হইচই পড়ে যায়। বিচার না পেয়ে সোমবার বেলা ১০ টার দিকে নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন পূর্ণিমা। পরে তাকে স্থানীয় এক চিকিৎকের কাছে নিলে পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করেন তিনি।

খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে পুলিশ পূর্ণিমার লাশ হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন পূর্ণিমার স্বামী সনজিৎ।

পরে আসল ঘটনা জানতে পেরে সোমবার রাতে শালিস করার অভিযোগে পুলিশ মেম্বর সিরাজুল ফকির, আবুল সরদার ও আসাদুজ্জামান আসাদকে ধরে থানায় নিয়ে আসা হয়।

গ্রেফতার সিরাজুল ফকিরের স্ত্রী দিলরুবা খাতুন বলেন, আমার স্বামী টানা দু বারের মেম্বর। তিনি মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান। অভিযুক্ত মিজানুর আমার স্বামীর চাচাতো ভাই। ঘটনার পর থেকে মিজানুর পলাতক। সেদিনের শালিসে আমার স্বামী যেতে চাননি। মিজানুরের ছেলে আল আমীন এসে হাত-পা জড়িয়ে ধরে আমার স্বামীকে শালিসে নেছে। আমার স্বামী এ সব ঘটনার সাথে জড়িত না।

এদিকে খবর পেয়ে আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে দলিত পরিষদের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। ঘটনার বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার মানববন্ধনের কথা জানিয়েছেন দলিত পরিষদের মনিরামপুর উপজেলা সভাপতি শিবনাথ দাস।

শিবনাথ বলেন, পুলিশ আসামিদের ধরার পর এলাকা থেকে সনজিৎকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেওয়া হচ্ছে। আমরা তার পাশে আছি। এ ঘটনার সঠিক বিচার আমরা চাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নেহালপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুজ্জামান বলেন, ধর্ষণ চেষ্টা এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে পূর্ণিমা দাসের স্বামী সনজিৎ দাস ৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/জেএস

ধর্ষণ চেষ্টা,আত্মহত্যা,মনিরামপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close