• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বহুতল ভবন থেকে স্কুলছাত্রীর লাফ

প্রকাশ:  ১৩ মার্চ ২০২২, ২২:৩৮
অনলাইন ডেস্ক

ময়মনসিংহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে অর্কপ্রিয়া ধর শ্রীজা (১৬) নামে এক কিশোরী। সে নগরীর বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

রোববার (১৩ মার্চ) বিকাল ৪টার দিকে নগরীর স্বদেশী বাজার ঢাকা লিটন কনফেকশনারির সামনে রাস্তা থেকে শ্রীজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শ্রীজা ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক স্বপন ধরের মেয়ে। তারা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার বাসিন্দা।

ঘটনার আগে বেলা দুইটার দিকে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দেয়। পরে ওই এলাকার বহুল ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটির কারণ জানতে তদন্ত চলছে।’

মৃত্যুর আগে অর্কপ্রিয়া ধর শ্রীজা নিজের ফেসবুক থেকে ইংরেজি এবং বাংলায় একটি স্ট্যাটাস দেয়। সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“যারা বলেন বাবা মার সাথে একটু ঝগড়া হইলেই মইরা যাওয়া লাগে? গিয়ে দেখেন গা এইটা এক দিনের ঝগড়া ছিল না, কি পরিমান মানসিক চাপ দিলে একটা মানুষ মরতে যায় নিজে থেকে। আমি নিজে যতদিন ধরে ট্রাই করতেসি আমি দেখতেসি। ৩ বছর ধরে সুইসাইডাল চিন্তায় ভুইগা আমার এতদিনে সাহস হইসে। তাই, সবাইরেই ভাবসে আর সুইসাইড কইরা ফেলসে এম্নে জাজ করতে যাইয়েই না। কেও হেল্প চাইলে তো বুলি ছাড়া কিছু পারেন না। আবার কিসু করে ফেললে তখন তার দোষ। ভিক্টিম ব্লেম ছাড়া জীবনে কিসু শিখছিলেন? যারা সুইসাইড করে তারা বাপ মা রে মাইরা করে না, বাপ মা ই এদের সুইসাইড এর পথে ঠেইলা দেয়।

আপনার মনে হয় আমার খুব ইচ্ছা ছিল মরার? বাধ্য হইসি। আপনাদের তৈরি সমাজ আর পেরেন্টিং এর কারনে। কেও মেয়েরে নিজের আলাদা লাইফ দিতে না পারলে প্লিজ মেয়ে নিয়েন না, আপনার এক ডিসিশনের জন্য একটা মানুষের জীবন নষ্ট কইরেন না। আর এই সো কল্ড বাপ মা রে দেবতার আসন থে নামান। আপনার বাপ মা ডেভেল্পড মাইন্ডেড বা আপনার সাথে পারস্পেক্টিভ মিলে দেইখা সবারটা এক না। সবাইরে নিজেরে দিয়া জাজ করা বন্ধ করেন। আই নো অনেকে বলবেন এর থেও বড় প্রব্লেম থাকে মানুষের লাইফ এ। মানুষ তাও বাইচা থাকে। বাট ওদের প্রব্লেম আর আমার প্রব্লেম এক না দেইখাই যে ওদের টা প্রব্লেমের পর্যায়ে পরে আর আমার টা পরে না এটা তো কথা না। আমার মানসিক, পারিবারিক অবস্থা ওর সাথে যেমন মিলবে না আমার রিয়েকশনও ওর সাথে মিলবে না। আমার জন্য সুইসাইড ই একমাত্র উপায় ছিল। সব মুহুর্তে শেষ হয়ে যাবে। ফাইট যে করি নাই তা না, চার বছর ধরে করসি। এখন আর পারতেসিনা। সব ট্রাওমা এখন ফিজিক্যাল রিয়েকশন শুরু করসে। এখন আর সম্ভব না। আর অপশন নাই। আমার ফ্রেন্ড দের বলতেসি, থ্যাংক্স আ লট। তোদের জন্যই এতদিন বাচতে পারসি। এত্ত এত্ত হেল্প করার জন্য থ্যাংক্স। অনেক ভালোবাসি তোদের। পাওনা রইল অনেক কিছু। ভালো থাকিস।

ট্রাই করিস তোদের সময়ে এই টক্সিক পেরেন্টিং দূর করতে। আর আবারও বলতেসি আমি যা ট্রাওমা ভোগ করসি এগ্লা একদিনের না। দিনের পর দিন মানসিক নির্যাতন সহ্য করার পরে এই ডিসিশন নিসি। সেই ক্লাস সিক্স থেকে। আর তার আগে তো ভালো করে বুঝি ই নাই। যাই হোক জানি তার পরও কেউ চেঞ্জ হবেন না। সেই ভিক্টিম ব্লেম ই করে যাবেন। আর আমার পেরেন্ট কেউ এই পোস্ট দেখে থাকলে আর আমার জমানো টাকা গুলা খুইজা পাইলে অনু রে দিয়, নিজে তো দেখসি আমার সাথে কি করস, মেয়ে হওয়ার দোহায় দিয়া সব রাইট কাইরা নিস, সুতরাং ও বড় হইলে ওর লাগতে পারে। আশা করি আমি ছোট থাকতে যা টাকা পাইসিলাম বা জমাইসি তার মত মাইরা দিবা না। আর আমার ভাইরে তো কিসু বলার ই নাই। সেম জেনারেশনে থাইকাও কেম্নে আমারে হ্যারাস কইরা গেল জানিনা। জানার ইচ্ছাও নাই। আর কেয়ার করতে পারব না।

আমার সাথে যা করসো সবাই আশা করি হাজার গুনে কারমা হিসেবে ফেরত পাও। আর না বোঝার ভান কইর না। আমি ১৬ বছর থেকেই বুঝতে শিখলে তোমাদের জন্য ৪০ বছরে বোঝা কোনো ব্যাপার ই না। তার পরও চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝায়ে দেওয়ার চেষ্টা করসি। শুনো নাই, খালি লোকে কি বলবে ভাইবা গেসো। এখন থাকো গিল্ট নিয়া। এখন দেখো লোকে কি বলে দেখ আর রিগ্রেট কর। এগ্লাই তোমাদের পাওয়া উচিত।”

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

আত্মহত্যা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close